রুপসীবাংলা৭১ অন্যান্য ডেস্ক : বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী এবং কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল আলেহান্দ্রো কাস্ত্রো রুজের ৯৯তম জন্মদিন আজ। ১৯২৬ সালের এই দিনে কিউবার পূর্বাঞ্চলের বিরান নামক স্থানে এক স্পেনীয় অভিবাসী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল বিরোধিতা ও নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কিউবাকে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে টিকিয়ে রেখে বিশ্বজুড়ে সমাজতন্ত্রের এক অদম্য প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো।হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে অধ্যয়নের সময় ফিদেল কাস্ত্রোর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়।
সে সময় কিউবার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য এবং প্রেসিডেন্ট ফুলগেন্সিও বাতিস্তার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হন। ১৯৫৩ সালের ২৬শে জুলাই, কাস্ত্রো একদল সশস্ত্র অনুসারী নিয়ে সান্তিয়াগোর মনকাডা ব্যারাকে একটি দুঃসাহসিক হামলা চালান। এই হামলা ব্যর্থ হয় এবং কাস্ত্রোকে গ্রেপ্তার করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কারাগারে থাকাকালীন “ইতিহাস আমাকে মুক্তি দেবে” (“History Will Absolve Me”) শিরোনামে তিনি যে বিখ্যাত ভাষণ দেন, তা তাকে কিউবার জনগণের কাছে এক অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।
প্রবল জনমতের চাপে দুই বছর পর বাতিস্তা সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।কারামুক্তির পর মেক্সিকো গিয়ে পুনরায় সংগঠিত হন ফিদেল কাস্ত্রো। সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় আর্জেন্টাইন বিপ্লবী চে গুয়েভারার। ১৯৫৬ সালে ‘গ্রানমা’ নামক একটি ছোট জাহাজে করে ৮২ জন বিপ্লবীকে নিয়ে তিনি কিউবায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং সিয়েরা মায়েস্ত্রা পর্বতমালায় ঘাঁটি গেড়ে বাতিস্তা সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করেন।
দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৯৫৯ সালের জানুয়ারিতে তার বিপ্লবী বাহিনী রাজধানী হাভানার নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং বাতিস্তার স্বৈরশাসনের পতন ঘটে। এরপর কাস্ত্রো কিউবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন।
ক্ষমতা গ্রহণের পর ফিদেল কাস্ত্রো কিউবায় ব্যাপক ভূমি সংস্কার, শিল্প জাতীয়করণ এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন। তিনি কিউবাকে একটি একদলীয় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন। তার এই পদক্ষেপগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে নিয়ে যায়।
স্নায়ুযুদ্ধের পুরো সময়টা জুড়ে কিউবা সোভিয়েত ইউনিয়নের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ছিল।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময়ে কাস্ত্রোকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা চালায়, যার মধ্যে ১৯৬১ সালের ‘বে অফ পিগস’ আক্রমণ অন্যতম। এছাড়াও, তাকে বহুবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানা যায়। এতসব চাপ সত্ত্বেও তিনি তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ফিদেল কাস্ত্রোর অবস্থান ছিল অত্যন্ত দৃঢ়। ১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। বঙ্গবন্ধুকে আলিঙ্গন করে তিনি বলেছিলেন, “আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় এই মানুষটি হিমালয়ের সমান।” বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে তাকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রদান করে।
পাঁচ দশক ধরে কিউবার নেতৃত্ব দেওয়ার পর স্বাস্থ্যগত কারণে ২০০৮ সালে ভাই রাউল কাস্ত্রোর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন ফিদেল কাস্ত্রো। ২০১৬ সালের ২৫শে নভেম্বর ৯০ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ফিদেল কাস্ত্রো বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাছে এক অনুপ্রেরণার নাম। তার জন্মদিনটি আজও বিশ্বজুড়ে তার অনুসারী ও সমাজতন্ত্রের সমর্থকদের কাছে অত্যন্ত আবেগের এবং তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন।
রুপসীবাংলা৭১/এআর