রুপসীবাংলা৭১ আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জাপান বুধবার হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা হামলার ৮০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে। এমন এক মুহূর্তে বিশ্বকে সেই ভয়াবহতার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হল, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে পারমাণবিক আস্ফালন উত্তেজনাকর পরিস্থিতির আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
হিরোশিমা থেকে এএফপি জানায়, স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে (গ্রিনিচ মান সময় ২৩১৫ টায়) মৌন প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।
সময়টি ছিল ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট মার্কিন বিমান ‘এনোলা গে’-এর পশ্চিম জাপানি শহরের ওপর পারমাণবিক বোমা লিটল বয় নিক্ষেপ করার মুহূর্ত।
সকালে, কালো পোশাক পরিহিত শত শত কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী এবং বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিবর্গ ভয়াবহতার স্মৃতিবিজড়িত স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।
এক বক্তৃতায়, হিরোশিমার মেয়র কাজুমি মাতসুই রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ এবং মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বিদ্ধস্থ পরিস্থিতির পটভূমিতে ‘বিশ্বজুড়ে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির প্রবণতা ত্বরান্বিত হচ্ছে’ বলে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘এইসব ঘটনাবলী থেকে বোঝা যাচ্ছে ইতিহাসের বিয়োগান্তক অধ্যায় থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিল তার প্রতি স্পষ্টতই অবহেলা করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা বলেন, জাপানের লক্ষ্য হল, বিশ্বকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়া।
হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা বিষ্ফোরণে চূড়ান্ত মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার ছুঁয়ে যায়। বিস্ফোরণে আগ্নিদগ্ধ হয়ে বিপূল সংখ্যক মানুষ তাৎক্ষণিক ভাবে মৃত্যু বরণ করে এবং পরবর্তীতে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে আরো অনেকের মৃত্যু হয়।
‘লিটল বয়’- নিক্ষেপের তিন দিন পর ৯ আগস্ট জাপানের অপর শহর নাগাসাকিতে দ্বিতীয় পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপে ৭৪ হাজার মানুষ নিহত হয়। ১৫ আগস্ট জাপান আত্মসমর্পণ করে, যার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।
হিরোশিমা এখন ১২ লাখ জনসংখ্যার একটি সমৃদ্ধ মহানগর তবে হামলার সেই ভয়াবহতা ্এখোনো অনেকের স্মৃতিতে গেঁথে রয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে, সমাধিক্ষেত্রের সামনে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মানুষ লাইনে দাঁড়াতে শুরু করে। বুধবার ভোর হতে না হতেই হামলায় প্রিয়জন হারানো পরিবারগুলো প্রার্থনা করতে আসে।
নাতির সাথে হুইলচেয়ারে করে আসা ৯৬ বছর বয়সী ইয়োশি ইয়োকোয়ামা, সাংবাদিকদের বলেন, তার বাবা-মা এবং দাদা-দাদি বোমা হামলার শিকার হয়েছেন।
বুধবারের অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো তাইওয়ান এবং ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিসহ প্রায় ১২০টি দেশ এবং অঞ্চলের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের কথা ছিল। তবে রাশিয়া ও চীন এতে অনুপস্থিত থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করে দেশটির জাপানে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত।
পোপ চতুর্দশ লিও এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমাদের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক উত্তেজনা এবং সংঘাতের সময়ে হিরোশিমা ও নাগাসাকি পারমাণবিক অস্ত্র সৃষ্ট গভীর ভয়াবহতার জীবন্ত স্মারক হিসেবে রয়ে গেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, ‘যেসব অস্ত্র হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে এত ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে এনেছিল, সেগুলো আবারও জবরদস্তির হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।’
রুপসীবাংলা৭১/এআর