রুপসীবাংলা৭১ প্রতিবেদক : সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে রুপালি ইলিশ। বাজারেও সরবরাহ একেবারে কম নয়। মাঝারি থেকে বেশ বড় সাইজের ইলিশও বাজারে উঠছে। কিন্তু দাম যেন আকাশচুম্বী। ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম দেড় হাজার টাকা কেজি। ৭৫০ গ্রাম থেকে ১ কেজি কম ওজনের ইলিশের কেজি ২০০০ টাকা। ১ কেজি হলেই সেটার দাম হাঁকানো হচ্ছে ২৩০০-২৫০০ টাকা। ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের বাইরে চলে গেছে ইলিশ। তাদের পাতে আর উঠছে না অতি সুস্বাদু এই মাছটি। চলতি মৌসুমে ইলিশ যেন এক বিলাসী পণ্যে পরিণত হয়েছে। রাজধানীর রামপুরা, খিলগাঁও, সেগুনবাগিচা, কারওয়ান বাজার, মালিবাগসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও ক্রেত-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
মালিবাগ বাজারে রাশেদ খন্দকার নামে পরিচিত এক ব্যাংক কর্মকর্তা ক্রেতার সঙ্গে দেখা। আলাপে তিনি জানালেন, এই সপ্তাহে আরও দুই দিন ইলিশের দাম করেও কিনতে পারিনি। দাম অনেক বেশি। আজকে বাসায় মেহমান, তাই বাধ্য হয়ে ১ কেজির একটা কিনলাম ২২০০ টাকায়। এটা অস্বাভাবিক দাম। অন্যথায় এত দাম দিয়ে হয়তো কিনতাম না। দিনদিন এই মাছটা আমাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। অথচ এটা আমাদের নদনদী, সাগরেরই মাছ। বিক্রেতারা বলছেন, ঘাটে মাছ উঠছে প্রচুর কিন্তু দাম অনেক চড়া। এ ছাড়া আগের তুলনায় মাছ আহরণের খরচও বেড়েছে। এর সঙ্গে মজুতদারির একটা বিষয়ও জড়িত রয়েছে। ফলে বাজারে ইলিশের সরবরাহ ঠিক থাকলেও দাম কমছে না। খিলগাঁও রেলগেট সংলগ্ন বাজারের একজন বিক্রেতা জানান, ঘাটেই ইলিশের দাম বেশি। এজন্য আমরা কম করে আনছি। অনেক মানুষ কিনতেও পারছে না। দাম জিজ্ঞেস করে ফিরে যায়। অনেকে এসে দাঁড়িয়ে দামাদামি ও বিক্রির অবস্থা দেখে চলে যায়।
জানা গেছে, ইলিশ উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। উপযোগী আবহাওয়া ও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বিশ্বের মোট ইলিশ উৎপাদনের ৮৬ শতাংশই হয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মডেল অনুযায়ী ২০২৪-২০২৫ সালে ইলিশ উৎপাদন ৫ লাখ ৩৮ হাজার থেকে ৫ লাখ ৪৫ হাজার টন হতে পারে। যদিও অর্থবছর শেষ হয়ে গেছে কিন্তু মৌসুম এখনো চলছে। তারপরও যেহেতু গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন ৪২ হাজার টন কমে ৫ লাখ ২৯ হাজার টনে দাঁড়িয়েছিল। সে হিসাবে এবারও ইলিশের আহরণ কমতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গবেষকরা। এসব কারণেই বাজারে গত দুই বছর ধরে ইলিশের সরবরাহ ক্রমাগত কমছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দাম। মৎস্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নদী, সাগর সবখানে এবার ইলিশ মিলছে কম। জেলা প্রশাসক, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ দিয়ে জাটকা রক্ষায় যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করেও জাটকা নিধন সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা যায়নি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নদীর নাব্য হ্রাস এবং নদী দূষণ। এ ছাড়া সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়া, মাত্রাতিরিক্ত তাপ ইত্যাদি কারণেও মাছের উৎপাদন ও আহরণ কমেছে। বর্তমানে সাগরে কিছু ইলিশ ধরা পড়লেও নদীতে এখনো উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ইলিশ মিলছে না।
সাগর মোহনায় ডুবোচর ও বিভিন্ন জালের মাধ্যমে মাছ শিকারের কারণেও নদীতে ইলিশ ভিড়তে পারছে না। কয়েক বছর আগেও এ অবস্থা ছিল না। তাদের মতে, তাই বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম। মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও স্বীকার করেন যে, গত দু-তিন বছরে ইলিশের দাম বেড়েছে লাগামহীনভাবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, পরিবেশগত কারণে ইলিশের আহরণ কম থাকায় সরবরাহ কম। ফলে দাম বেশি। এ ছাড়া ডিজেলের দাম বেশি হওয়ার করাণে ট্রলার খরচ বেড়েছে, চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি- এসব নানা কারণেও দাম বেড়েছে।
দেশকন্ঠ/এআর
রুপসীবাংলা৭১/এআর