রুপসীবাংলা৭১ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ডেস্ক : ডেঙ্গু জ্বর এক পরিচিত আতঙ্ক হয়ে ফিরে আসে। এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ানো এই ভাইরাসজনিত রোগটি একদিকে যেমন একটি সাধারণ জ্বর হিসেবে শুরু হয়, তেমনি কিছুক্ষেত্রে তা হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতী। তাই সময়মতো সতর্ক হওয়াই আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত জরুরি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা ও কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলা। বিশেষ করে শিশুকে নিরাপদ রাখতে আমাদের আরও যত্নশীল হতে হবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়
শিশুকে ঘুমানোর সময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে। দিনের বেলায়, যত কষ্টই হোক, ফুলহাতা জামা-কাপড় পরানো উচিত। স্কুলে যাওয়ার আগে মশানিরোধক ক্রিম ব্যবহার করা দরকার। বাসা এবং আশপাশের পরিবেশ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে কোথাও পানি জমে মশার বংশবিস্তার না ঘটে।
যাদের নিজস্ব গাড়ি আছে, তাদের গাড়িতেও যেন মশা প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। শিশুরা যখন খেলতে যাবে, তখন তাদের গায়ে মশানিরোধক ক্রিম লাগিয়ে দিতে হবে এবং প্রয়োজনে অভিভাবকেরা মিলে খেলার জায়গা পরিষ্কার রাখার উদ্যোগ নিতে হবে।
জ্বর হলে কী করবেন?
যদি সতর্কতার পরেও এই মৌসুমে জ্বর দেখা দেয়, তাহলে প্রথম থেকেই শিশুকে প্রচুর তরল জাতীয় খাবার খাওয়ানো উচিত। ছয় ঘণ্টা পরপর প্যারাসিটামল সিরাপ বা সাপোজিটরি ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে কখনোই দ্রুত জ্বর কমানোর জন্য ক্লোফেনাক জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না, কারণ এটি শিশুর জন্য বিপজ্জনক।
জ্বরের প্রথম তিন দিনের মধ্যেই CBC ও ডেঙ্গু NS1 টেস্ট করানো উচিত। এই টেস্টগুলো এখন দেশের প্রায় সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সহজলভ্য ও সুলভমূল্যে করা যায়।
জ্বরের প্রথম ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যদি শিশুর অতিরিক্ত বমি হয়, খুব দুর্বল দেখায়, খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়, প্রস্রাব কমে যায়, আগে ডেঙ্গু হয়ে থাকে, অন্য কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগ বা অতিরিক্ত ওজনজনিত সমস্যা থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। তিন দিনের পর শিশুর কী পরীক্ষা করাতে হবে, কত ঘনঘন করাতে হবে এবং কখন হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে, এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অবশ্যই নিকটস্থ শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।
ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জ্বর সেরে যাওয়ার পরবর্তী ৭২ ঘণ্টাকে বলা হয় ‘ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড’। এই সময়টাতেই ডেঙ্গুর জটিলতা সবচেয়ে বেশি দেখা দেয়। রক্তক্ষরণ, শক সিনড্রোমসহ নানা জটিলতা এই সময়ে হঠাৎ করেই শুরু হতে পারে। তাই জ্বর কমে গেলেই নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বরং এই সময়টাতে শিশুকে হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা সবচেয়ে নিরাপদ। গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, অনেক শিশু শুরু থেকেই ডেঙ্গুর জটিলতায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং তাদের সুস্থ হতে অনেক বেশি সময় লাগছে। সেই কারণে প্রথম থেকেই আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে; যেন আমাদের সন্তানরা এই ভয়ংকর রোগে আক্রান্ত না হয়।
ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভয় নয়, বরং সঠিক জ্ঞান, সতর্কতা এবং সচেতনতাই আমাদের রক্ষা করতে পারে। আসুন, আমরা নিজেরা সচেতন হই এবং আমাদের পরিবার ও সমাজকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব সবাই মিলে ভাগ করে নিই। v
[ সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও কোঅর্ডিনেটর পেডিয়াট্রিকস ডিপার্টমেন্ট, এভারকেয়ার হসপিটাল, ঢাকা]
রুপসীবাংলা৭১/এআর