রুপসীবাংলা৭১ প্রতিবেদক : জীবনের শেষযাত্রাতেও বড় বোন তাহিয়া আশরাফ নাজিয়ার (১৩) চোখের আড়াল হতে চায়নি ছোট ভাই আরিয়ান আশরাফ নাফি (৯)। আর তাই তো বোন পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টার আগেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। বোনের পাশে উত্তরার কামারপাড়ার একটি কবরস্থানে গতকাল নাফিকে দাফন করা হয়। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে ছোট্ট নাফি অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়। নাফির বড় বোন নাজিয়া ছিল মাইলস্টোন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। আর নাফি তৃতীয় শ্রেণির। মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তে নাজিয়ার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে যায়। জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অসহনীয় ব্যথা সয়ে সোমবার দিবাগত রাত ২টা ৩২ মিনিটে মারা যায়। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই হাসপাতালটির আইসিইউতে চিকিৎসাধীন নাফিও চলে যায়। আইসিইউর ১০ নম্বর শয্যায় ৯৫ শতাংশ পোড়া দেহ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিল নাফি। আইসিইউর সামনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নাফি-নাজিয়ার মা তাহমিনা বলেন, সম্পর্কে ভাই-বোন হলেও নাজিয়া-নাফির মধ্যে ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তারা একজন আরেকজনকে না দেখলে অস্থির হয়ে যেত। এজন্যই নিজের ক্লাস শেষে দুর্ঘটনার সময় নাফি তার বোনকে আনতে দৌড়ে গিয়েছিল।
আর তখনই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটে। তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে আমি ওদের জন্য মাঠে অপেক্ষা করছিলাম। ছেলে আরিয়ানের স্কুল আগে ছুটি হয়। মেয়ের ছুটি পরে হয়। ১টার পর আরিয়ান তার খালাতো ভাই জুনাইদকে নিয়ে নাজিয়াকে আনতে যায়। জুনাইদও মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী। ঠিক তখন বিমানটি স্কুলের ওপর এসে পড়ে। দুর্ঘটনায় ছেলেমেয়ে দুজনের গায়ের চামড়া এমনভাবে পুড়েছে যে, এখানে আসার পর প্রথমে ওদের চিনতে পারছিলাম না। আমি নাম ধরে ডাকার পর ছেলে জ্ঞান থাকার কারণে আমাকে উদ্দেশ্যে করে বলে উঠে, ‘আম্মু আমি আরিয়ান।’ তখন ওকে চিনতে পারি। কিন্তু মেয়ের সামনে দিয়ে কয়েকবার খুঁজলেও চেহারা পুড়ে যাওয়ায় ওকে চিনতে পারিনি। আমার মেয়ের পা থেকে মাথা পর্যন্ত পুড়ে যায়। ছেলে বার্নে এসে চিকিৎসা পেলেও মেয়ে চিকিৎসা পাওয়ার মতো সুযোগ পায়নি। মেয়েটা আমার অনেক কষ্ট পেয়ে মারা যায়।
রুপসীবাংলা৭১/এআর