রুপসীবাংলা৭১ অন্যান্য ডেস্ক : প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় এত শিশুর জীবন চলে গেল! এমন ঘটনা আমাদের জীবনের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি করে। এ ঘটনার পর আমরা সবাই বিষণ্নতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি; অনেকের ঘুম হচ্ছে না। এমন দুর্ঘটনার পর এ রকম একটা প্রতিক্রিয়া হওয়া স্বাভাবিক। সেটি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন রকম হতে পারে। কারও হয়তো আবেগের জায়গাটা বেশি; তার বেশি খারাপ লাগবে। সবার মনের ভেতরই প্রতিক্রিয়া কমবেশি হচ্ছে।
মৃত্যুভীতি হচ্ছে সবচেয়ে বড় ভয়। আমরা এই ভয়কে অবচেতনভাবে সাধারণত আড়ালে রাখি। কিন্তু এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদের মধ্যে চেপে রাখা মৃত্যুভয়টা সামনে চলে আসে। বারবার মৃত্যুর কথা মনে হতে থাকে। ফলে অনেকের প্যানিক অ্যাটাক, অ্যাংজাইটি বা ডিপ্রেশন হয়। এসব ক্ষেত্রে করণীয় হচ্ছে দুর্ঘটনার তথ্য বা ছবি নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি না করা। বিশেষ করে শিশুদের সামনে এসব না আনা।
কারণ শিশুদের এসব গ্রহণ করার মতো মানসিক সক্ষমতা থাকে না। তাদের এসব দেখার পর কষ্টটা বেশি হয়। তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, শিশুরা যদি এসব নিয়ে জানতে চায় বা কীভাবে ব্যাপারটির সঙ্গে তারা যুক্ত হলো, সেটি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলা বা আলোচনা করা জরুরি। অনেক সময় শিশুরা এসব ভীতির কথা বললে আমরা অভিভাবকরা উড়িয়ে দিই। সেটা না করে বরং সে কী বলতে চাচ্ছে; মনোযোগ দিয়ে শোনা দরকার।
যদি দেখা যায়, শিশুরা এ ঘটনার পর স্কুলে যেতে চাচ্ছে না; পড়ালেখায় মনোযোগ দিচ্ছে না; খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে; অল্পতেই রেগে যাচ্ছে। এগুলো উদ্বেগের উপসর্গ। এ রকম সময়ে শিশুদের যতটা সম্ভব দৈনন্দিন কাজে সক্রিয় রেখে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা দরকার। আবার শারীরিক সমস্যাও হতে পারে। যেমন মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেছে। শিশুদের পাশাপাশি আমাদের নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। ধর্মীয় যেসব কাজ রয়েছে, যেসব আমাদের মানসিক শক্তি দেয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের যে ব্যায়াম রয়েছে সেগুলো করতে হবে।
বড় কোনো ঘটনার পর সবচেয়ে বড় যেটি কাজে দেয়– মানুষের একজনের পাশে আরেকজন থাকার শক্তি। এর বিকল্প নেই। পরস্পর সংযোগটা থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে যেসব অভিভাবক তাঁর সন্তান হারিয়েছেন কিংবা সন্তানের শরীর পুড়ে নানাভাবে আহত হয়েছে কিংবা যাদের কিছুই হয়নি কিন্তু তারা ওই স্কুলে পড়ত তাদের আলাদা করে সহমর্মিতা ও সহযোগিতা প্রয়োজন। এই যে কষ্টের জায়গা, সেখানে যদি বলা হয়– আমি আপনার সঙ্গে আছি; আমিও আপনার মতো অনুভব করছি; এই আশ্বাসটুকুই মানসিক শক্তি জোগায়। কেউ হয়তো ভয় পাচ্ছে। তার সমস্যাটা মনোযোগ দিয়ে শোনাও এ ক্ষেত্রে সমস্যা মোকাবিলায় সাহায্য করে।
লেখক: মনোরোগ বিশেষজ্ঞ
রুপসীবাংলা৭১/এআর