রুপসীবাংলা৭১ অন্যান্য ডেস্ক : মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। মানুষের সবকিছুই সম্মানিত ও মূল্যবান। সবচেয়ে মূল্যবান তার প্রাণ। একজন মানুষের প্রাণ নাশ করা বা তাকে হত্যা করা অত্যন্ত জঘন্য বিষয়।
ইসলামে মানুষ হত্যাকে গুরুতর পাপ হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।একজন মানুষ হত্যা করা শুধু একটি প্রাণের নাশ নয়, বরং তার হত্যার সঙ্গে ঘটে যায় শত মানুষের বিনাশ। নিভে যায় একটি পরিবারের জীবন প্রদীপ। ভেঙে যায় হাজারও স্বপ্ন।
চুরমার হয়ে পড়ে বাবা-মার হৃদয়। চিরতরে এতিম হয়ে পড়ে ফুটফুটে শিশুগুলো আর বিধবা হয়ে যায় প্রিয়তমা স্ত্রী। এভাবে একটি পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্র সবাই হয়ে পড়ে বেদনাবিধুর।
এজন্যই তো আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। আর যে কারও জীবন রক্ষা করে সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে।’ (সূরা মায়িদাহ : ৩২)।
এ হত্যাকাণ্ডের নিশানা যদি হয় কোনো মুসলমান, তাহলে পাপের গুরুভার আরও বেড়ে যায়। একজন মুসলমানকে হত্যা করা জঘন্য অপরাধ।
নবিজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘দুনিয়ার সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাওয়া আল্লাহতায়ালার কাছে একজন মুসলমানকে হত্যা করার চেয়ে সাধারণ।’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ১৩৯৫; নাসায়ী, হাদিস নং : ৩৯৮৬)।
সমাজ জীবনে নাশকতা, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা ও রক্তপাত দমনে ইসলাম অনুপম দিকনির্দেশনা দিয়েছে এবং সন্ত্রাসী দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধে কঠোর শাস্তি আরোপ করেছে।
ইসলামের আলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রচলিত আইনে সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের উপযুক্ত ন্যায়বিচার করা হলে আর কেউ নাশকতা, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে সাহস পাবে না। পবিত্র কুরআনে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যাকাণ্ডকে মহা-অপরাধ সাব্যস্ত করে কঠোর শাস্তির বিধান ঘোষিত হয়েছে।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কোনো মুমিনকে হত্যা করা কোনো মুমিনের কাজ নয়, তবে ভুলবশত করলে তা স্বতন্ত্র। …কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ীভাবে থাকবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত হবেন, তাকে অভিসম্পাত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখবেন।’ (সূরা নিসা, আয়াত : ৯২-৯৩)।
ইসলাম ইচ্ছাকৃতভাবে মানব সন্তানকে হত্যা করা কঠোর ভাষায় নিষিদ্ধ করেছে। নিরপরাধ জনগণকে গুলি করে, বোমা মেরে, পুড়িয়ে মারা বা প্রাণহানি ঘটানো ইসলামের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা একে অন্যের সঙ্গে বিদ্বেষ পোষণ করো না, হিংসা করো না এবং একে অন্যের পেছনে লেগ না। আল্লাহর বান্দা সবাই ভাই ভাই হয়ে যাও। কোনো মুসলিমের জন্য তার ভাইকে তিন দিনের বেশি ত্যাগ করা হালাল নয়।’ (বুখারি)। এমনকি হত্যার প্রারম্ভিক বিষয় তথা অস্ত্র দিয়েও কাউকে ভয় দেখাতে নিষেধ করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের দিকে অস্ত্র তাক না করে। কারণ সে জানে না, হয়তো শয়তান তার হাত থেকে তা বের করে দিতে পারে, ফলে সে জাহান্নামের গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (বুখারি)।
এছাড়া হত্যাকাণ্ডের গুরুতর পরিণতি বোঝানোর জন্য নবি কারিম (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের মাঝে (বান্দার হকের ক্ষেত্রে) প্রথম রক্তপাতের বিষয়ে ফায়সালা করা হবে। (বুখারি, হাদিস নং : ৬৮৬৪; মুসলিম, হাদিস নং : ২৮, ১৬৭৮)।
এসব আয়াত ও হাদিসকে সামনে রেখে আমাদের উচিত এ ভয়ংকর জগৎ থেকে দূরত্ব বজায় রাখা। মানুষ হত্যার বিষয়টি আজ আমাদের মাঝে গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন দিন আমরা যেন বর্বর জাহেলি যুগের দিকে এগিয়ে চলছি। যেখানে নেই কোনো মানুষের মালের নিরাপত্তা, নেই জানেরও।
যখন-তখন তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে মানুষ হত্যার মতো ন্যক্কারজনক কাজে আমরা জড়িয়ে পড়ছি প্রতিনিয়ত। কুরআন-হাদিসের সতর্কবাণীতেও যেন আমাদের বোধোদয় হচ্ছে না।আমাদের চিন্তা করা উচিত-যাকে আমি হত্যা করছি সে তো জীবনযুদ্ধের অথই সমুদ্র পাড়ি দিয়ে এ পর্যন্ত এসেছে। জীবন নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন। আছে তার পিতা-মাতা ও প্রিয়জনদের বহু ভাবনা। আমি কি মুহূর্তেই এসব ধূলিসাৎ করে দিচ্ছি না?
ইসলাম প্রত্যেকেরই জান-মাল-ইজ্জতের সমান নিরাপত্তা বিধান করেছে। যেন কারো দ্বারা অন্য কারো জীবন, সম্মান ও সম্পদের সামান্যতম ক্ষতি না হয়। অতএব যারা কোনো মুসলমানের প্রাণের সামান্যতম ক্ষতিও করবে, আখেরাতে তাদের ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে। কুরআন কারীমের উল্লিখিত আয়াতসমূহে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য হাদীসে সে বার্তা ও বিধানই দেয়া হয়েছে।
রুপসীবাংলা৭১/এআর