নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ- বিলস এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক গৃহকর্মী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে “গৃহশ্রমিকের স্বীকৃতি ও অধিকার: বাংলাদেশে পরিচর্যা কাজ ও পরিচর্যা কর্মীদের অধিকার মূল্যায়ন” শীর্ষক জাতীয় সেমিনার আজ ১৪ জুন ২০২৫ রাজধানীর এশিয়া হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বিলস এর নির্বাহী পরিচালক ও শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ, বাংলাদেশের জাতীয় শ্রমিক জোট এর সাধারণ সম্পাদক বাদল খান, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক জনাব নইমুল আহসান জুয়েল, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশন এর সভাপতি সাকিল আখতার চৌধুরী, বাংলাদেশ ফ্রি ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস এর সম্পাদক পুলক রঞ্জন ধর, বাংলাদেশ মুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন এর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ বাদল, গগৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক এর ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী আবুল হোসেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (শিশু ও সমন্বয় অনু্বিভাগ) সালমা আক্তার, শ্রম অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক শাহ আবদুল তারিক, কলখারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের লেবার ইন্সপেক্টর উম্মে সালমা, বাংলাদেশ এমপ্লয়ারস ফেডারেশন এর অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক মো. সাইদুল ইসলাম। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন- কর্মজীবী নারী, আয়াত এডুকেশন, রেড অরেজ্ঞ, ব্লাস্ট, সবুজের অভিযান ফাউন্ডেশন, কারিতাস বাংলাদেশ এর প্রতিনিধি সেমিনারে উপস্থিত থেকে মূল্যবান মতামত প্রদান করেন। সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন গৃহশ্রমিক সংগঠক, জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন এর যুবা সংগঠক ও বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োজিত গৃহশ্রমিক ও পরিচর্যা কর্মীগণ।

সেমিনারে কর্মক্ষেত্রে গৃহশ্রমিকদের বর্তমান অবস্থা, আইনি স্বীকৃতি, অধিকার ও গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের কার্যক্রম ও নবগঠিত “পরিচর্যা কর্মী অধিকার সুরক্ষা ফোরাম” সম্পর্কে উপস্থাপনা প্রদান করে বিলস এর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার সাইদুজ্জামান মিঠু। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহেযোগী অধ্যাপক মোস্তাফিজ আহমেদ আইএলও-বিলস কেয়ারওয়ার্ক প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত একটি গবেষণার তথ্য উপস্থাপনা করেন, যেখানে তিনি তুলে ধরেন বর্তমানে গৃহশ্রমিকদের কর্মপরিস্থিতি নাজুক। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, গৃহশ্রমিকরা এখনও শ্রম আইনের অন্তর্ভূক্ত নয় এবং যে নীতি আছে সেটাও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে তুলনা করলে বেশ কিছু ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। এসব ঘাটতি পূরণ করতে জাতীয় পর্যায়ে কাঠামো গড়ে তোলার ওপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। পাশাপাশি, দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণে পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন এবং শিক্ষা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার গুরুত্বও তুলে ধরেন।

সেমিনারে বক্তরা আরও বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গৃহকর্মে নিযুক্ত শ্রমিকের উপর নির্যাতন, হত্যা, ও মানবাধিকার লংঘনের মতো প্রভৃতি ঘটনা কিছুটা কমলেও গৃহশ্রমিকদের আইনি স্বীকৃতি, ন্যায্য অধিকার ও মানুষ হিসাবে মর্যাদা পাবার অধিকারের তেমন অগ্রগতি হয়নি। উপস্থিত গৃহশ্রমিকরা তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে গিয়ে বলেন, বেশিরভাগ সময় কাজ করতে গিয়ে তাদের মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় এবং সময় মতো কাজে না আসতে পারলে নিয়োগকারীর কাছ থেকে দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয়। অসুস্থতার কারণেও যদি কাজে যেতে না পারেন, তাহলে বেতন কর্তন ও ছাঁটাইয়ের সম্মুখীন হতে হয়। উপস্থিত বক্তারা আরো মতামত প্রদান করেন যে, শুধুমাত্র মাত্র নীতিমালা দিয়ে লাভ হবে না যেতেতু এর বাধ্যবাধকতা নেই, এখন গৃহশ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় পৃথক আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের পক্ষ থেকে শ্রম সংসস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে দাবী জানানো হয়।