রুপসীবাংলা৭১ প্রতিবেদক : আল্লাহর ভয় না থাকলে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করা কখনই সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মসিউল আলম।শুক্রবার (৪ জুলাই) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ মডেল থানার উদ্যোগে কেরানীগঞ্জের জয়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক বিশাল কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও থানা আমীর আব্দুর রহিম মজুমদারের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি শহীদুল ইসলামের সঞ্চালনায় উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথি অ্যাডভোকেট মসিউল আলম বলেন, জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের কোরআনের সঙ্গে বেশি বেশি সম্পর্ক থাকতে হবে, সকল নামাজ বিশেষ করে ফজরের নামাজ জামায়াতের সঙ্গে পড়তে হবে।জামায়াতের কর্মীদের আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে হবে। যে অন্তরে কোরআন আছে, সে অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকবে। আর আল্লাহর ভয় থাকলে ন্যায় কাজ করা তাদের পক্ষেই সম্ভব। আর তা নাহলে মানুষের দেওয়া দায়িত্ব পালন করা যাবে না।
বিগত ফ্যাসিবাদি সরকারের আমলে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করার সুযোগ ছিল না। ঘরের মধ্যে থেকেও ধরে নিয়ে এসেছে। বাপ-ছেলে দুজনকেও নিয়ে এসেছে। বর্তমানে কিছুটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান।
জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের জীবন ষড়ঋতুর মতো, কখনো শীতকাল, কখনো বসন্তকাল। বর্তমানের জীবনটা কিছুটা বসন্তের মতো। বর্তমানে বাংলাদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিভাবে তছনছ করে দেওয়া যায়।
বাংলাদেশে এক জালেম সরকারের পতন ঘটেছে এই জুলাই মাসে। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে জালেম সরকারের পতন ঘটালেও বর্তমানে আর ঐক্যবদ্ধ নাই।
বর্তমানে বিগত জালেম সরকারের মাসতুত ভাই রয়েছে, একজন পালিয়ে গেলেও আরেক মাসতুত ভাই রয়ে গেছে। এদের পলিসি দেশপ্রেমিক, মৌলবাদ, আলেম সমাজ, যুবসমাজ, ছাত্রসমাজকে ঠেকাতে হবে। কারণ এদেরকে ঠেকাতে না পারলে এরা চোরে চোরে আর ভাগ বাটোয়ারা করতে পারে না। তাই এদেরকে ঠেকাতে হবে, নিপাত ঘটাতে হবে। স্লোগান তুলতে হবে ফ্যাসিবাদ আর ধান্দাবাজ, ধ্বংস হোক, নিপাত যাক।
কর্মী সম্মেলনের প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা জেলা আমীর মাওলানা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন। বিগত ৫৩ বছর বিভিন্ন দল এদেশকে শাসন করেছে। কোনো দল এদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে নাই, তারা এদেশকে পিছিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস, আমরা বাংলাদেশকে রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি।
২০২৪-এ ছাত্রদের জীবনের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। তারা ফ্যাসিস্টকে বিদায় করেছে, এদেশের ছাত্র ও যুবসমাজ চাইলে কোনো ফ্যাসিবাদর উদ্ভব হতে দেবে না। তিনি বলেন এদেশে নতুন করে আর কোনো ফ্যাসিবাদের আবির্ভাব হতে দেয়া হবে না।
আওয়ামী লীগ পালিয়ে গেছে, তাদের ইতিহাস কলংকজনক, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ছাড়া আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ গঠনে কাজ করতে হবে। আল্লাহতায়ালা কোরআনে বলেন, যে জাতি নিজের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করে না, আল্লাহ তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেন না। তাই ভাগ্যের পরিবর্তনে আল্লাহর উপর ভরসা করে আমাদেরকেই কাজ করতে হবে। জামায়াতে ইসলামীকে বারবার বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে, নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।
জামায়াতের বিরুদ্ধে যতই বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে জামায়াত জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, জনগণের সমর্থন নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। জামায়াত সারা দেশে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। জামায়াতের প্রার্থীরা জনগণের সমর্থন আদায়ের জন্য অবিরত কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধান বক্তা মাওলানা দেলোয়ার বলেন, এদেশ হবে ইসলামে, জামায়াতে ইসলামীকে যেভাবে মানুষ গ্রহণ করেছে আগামীতে এই দেশ হবে ইসলামের দেশ, পার্লামেন্ট হবে ইসলামের পার্লামেন্ট, সরকার ইসলামের সরকার। আমরা জামায়াতকে নয় ইসলামকে রাষ্ট্রের ক্ষমতায় নিয়ে যেতে চাই। ইসলাম যদি ক্ষমতায় যায় তাহলে এদেশের সকল মানুষের শান্তি ফিরে আসবে, ইনসাফ কায়েম হবে, মানুষের অধিকার ফিরে পাবে। এ ছাড়াও তিনি ২০২৪ সালের ৫ ও আগস্ট জুলাই-আগস্টসহ বিগত সময়ের সব গণহত্যার বিচার করতে হবে, রাষ্ট্রের সবস্তরে প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে, জুলাই সনদ ঘোষণাপত্রের পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে, শহীদ আহত পরিবারের পুনর্বাসন করতে হবে, ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে হবে, প্রবাসীদের ভোটাধিকার দিতে হবে, সকল রাজনৈতিক ও প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াত মনোনীত ঢাকা ১৯ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা জেলা সেক্রেটারি মাওলানা মো. আফজাল হোসাইন বলেন, ভাত কাপড়ের নিশ্চয়তা জন্য, সন্ত্রাসমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ কায়েমের জন্য, একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনের জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের বিজয়ী করার কোনো বিকল্প নেই। এটি আমাদেরকে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে। আমাদের প্রত্যেককে একেকজন প্রার্থীর ভূমিকা পালন করতে হবে। এদেশের মানুষ মুক্তি চায়, শান্তি চায়, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ চায়। এই ধরনের সমাজ গড়ার জন্য বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দল নেই। এজন্য আমাদেরকে মাঠে, ঘাটে, চায়ের দোকানে, মসজিদে, মন্দিরে, বাজারে সবখানে মানুষের মাঝে আমাদের দাওয়াত পৌছানোর মাধ্যমে ইসলামের বিজয় তথা জামায়াতের বিজয় নিশ্চিত কর হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও কেরানীগঞ্জ মডেল থানার আমীর আব্দুর রহীম মজুমদার বলেন, আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে ইসলামী সমাজ বিনির্মানে সমাজের সকল স্তরে ব্যাপক দাওয়াতি কাজ করতে হবে। প্রত্যেক পাড়া-মহল্লায়, গ্রামগঞ্জে সবার কাছে জামায়াতে ইসলামী সংগঠনের দাওয়াত পৌঁছাতে হবে।
এ ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা নায়েবে আমীর ও ঢাকা-৩ আসনের জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহীনুর ইসলাম, জেলা শূরা সদস্য ও ঢাকা-২ আসনের এমপি প্রার্থী ইন্জিনিয়ার তৌফিক হাসান। এ ছাড়া কর্মী সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা কর্মপরিষদ সদস্য কাজী বেলাল উদ্দীন, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা নায়েবে আমির মো. ইলিয়াস, বায়তুলমাল সেক্রেটারি জহিরুল ইসলাম, কর্মপরিষদ সদস্য কাউসার উদ্দিন, আব্দুর রশিদ, আসাদুল্লাহ আল গালিব, মহিউদ্দিন সেলিম, সালাউদ্দিন মানিকসহ থানার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডর নেতৃবৃন্দসহ প্রায় পাঁচ হাজারের মতো বিভিন্ন স্তরের জনশক্তি।
রুপসীবাংলা৭১/এআর