রুপসীবাংলা৭১ তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়। আমেরিকার বিখ্যাত অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠান ফোর্ড তখন গভীর আর্থিক সংকটে। পুরোনো ডিজাইনে তৈরি গাড়ি বিক্রি করে বাজারে টিকে থাকার চেষ্টা করছিল তারা। ঠিক তখনই আসে এক সাহসী পদক্ষেপ-১৯৪৯ সালের নতুন এক মডেল। এ একটি গাড়িই পালটে দেয় ফোর্ড মোটর কোম্পানির ভবিষ্যৎ।
ফোর্ডের ১৯৪৯ সালের মডেলটিকে অনেকেই বলেন ‘Shoebox Ford’। কারণ, এটি ছিল সম্পূর্ণ নতুন ডিজাইন-যেখানে আগের মতো আলাদা হেডলাইট বা বাইরে বের হওয়া ফেন্ডারের বদলে একটি মসৃণ, বক্সি আকৃতির গঠন ছিল। এ মডেলকেই ধরে ফোর্ড তাদের গাড়ি নির্মাণের কৌশলে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। আর সেটাই হয় তাদের ইতিহাসের মোড় ঘোরানো সিদ্ধান্ত।
এ গাড়ির ডিজাইনার ছিলেন জর্জ ওয়াকার। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের প্লেন ডিজাইন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গাড়ির বাইরের কাঠামো একেবারেই সরলরেখায় তৈরি করেন। পূর্ববর্তী মডেলগুলোর চেয়ে এটি ছিল অনেক বেশি আধুনিক ও স্টাইলিশ। শুধু চেহারাতেই নয়, গাড়ির ভেতরের প্রযুক্তিতেও আনা হয় যুগান্তকারী পরিবর্তন। এতে প্রথমবারের মতো সংযুক্ত করা হয় স্বাধীন ফ্রন্ট সাসপেনশন ও নতুন রিয়ার স্প্রিং সিস্টেম। ফলে গাড়ি চালানো হয় আরও আরামদায়ক।
এ মডেলটিতে ছিল দুটি ইঞ্জিন অপশন-একটি ইনলাইন-সিক্স এবং আরেকটি শক্তিশালী ফ্ল্যাটহেড ঠ৮ ইঞ্জিন। এমন উন্নত প্রযুক্তির গাড়ি বাজারে এনে ফোর্ড বিপুল সাড়া ফেলে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে তারা বিক্রি করে ফেলে ১১ লাখের বেশি ইউনিট, যা ছিল তৎকালীন রেকর্ড। কোম্পানির লাভ এক লাফে তিনগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ১৭৭ মিলিয়ন ডলারে।
যদিও সেই সময় ফোর্ডের অভ্যন্তরে একগুচ্ছ প্রশাসনিক জটিলতা চলছিল, দ্বিতীয় হেনরি ফোর্ড দায়িত্ব নেওয়ার পর ‘হুইজ কিডস’ নামের একটি মেধাবী টিম তৈরি করে তিনি প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজান। কিন্তু ব্যবসার সাফল্যের কেন্দ্রে ছিল ১৯৪৯ সালের সেই গাড়ি। বাজারে এ মডেলটি আসার পরই বোঝা যায়-ফোর্ড এখন আর পেছনে নেই, তারা এগিয়ে যেতে প্রস্তুত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ গাড়ির নকশা শুধু ফোর্ডের ভাগ্যই ফেরায়নি, এটি আমেরিকান ও বিশ্বব্যাপী গাড়ির ডিজাইনের এক নতুন ধারাও তৈরি করেছে। এরপর বহু কোম্পানি এ শৈলী অনুসরণ করে নিজ নিজ গাড়িতে ‘পন্টুন বডি’ ডিজাইন চালু করে। এমনকি, ইউরোপের বেশ কয়েকটি কোম্পানিও ১৯৫০-এর দশকে ফোর্ডের এ ডিজাইনের ছাপ নিতে শুরু করে। এক কথায়, ১৯৪৯ সালের ফোর্ড ছিল কেবল একটি গাড়ি নয়-এটি ছিল সময়ের এক সাক্ষী, কোম্পানির পতন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতীক এবং অটোমোবাইল ইতিহাসে এক অনন্য উদাহরণ।
ফোর্ড ১৯৪৯
ডিজাইনার : জর্জ ওয়াকার
ইঞ্জিন : ইনলাইন-৬ এবং ফ্ল্যাটহেড ভি৮
বিক্রয় পরিমাণ : ১১ লাখ+ ইউনিট
উৎপাদনকাল : ১৯৪৮-১৯৫১
বিশেষত্ব : সম্পূর্ণ নতুন বডি স্টাইল, উন্নত সাসপেনশন
রুপসীবাংলা৭১/এআর