নিজস্ব প্রতিনিধিঃ কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৯ বছর পূর্তি উপলক্ষে চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের সাজার দাবিতে বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের উদ্যোগে নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ সোমবার (৯ জুন ২০২৫) সকাল ৯টায় সাজেকের দপদা এলাকা থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি পর্যটন সড়ক হয়ে উজো বাজারে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।
“সারাদেশে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত কর” এই দাবি সম্বলিত শ্লোগানে এবং “পাহাড়-সমতলে নারীর অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোল” এই আহ্বানে সমাবেশটি আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি অমিতা চাকমার সভাপতিত্বে ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পরানি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি এন্টি চাকমা, বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি সুখী চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার অর্থ সম্পাদক ঝিমিত চাকমা ও বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি জ্যোতি চাকমা, সাজেক কার্বারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নতুন জয় চাকমা।

সমাবেশে এন্টি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে সেনা শাসন জারি রেখে সাধারণ জনগণের উপর নিপীড়ন, নির্যাতন ও হয়রানি চালানো হচ্ছে। কল্পনার চিহ্নিত অপহরণকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়, এমনকি পরবর্তীতে পদোন্নতিও পেয়েছে। ২৯ বছরেও কোনো সরকার কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করেনি, চিহ্নিত অপহরণকারীদের সাজা দেয়নি। শুধুমাত্র শুনানির নামে টালবাহানাই করেছে। সর্বশেষ রাঙামাটি জেলা আদালত কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের দায়মুক্তি দিয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সেনাশাসন বহাল থাকলে জনগণের ওপর নিপীড়নের মাত্রা আরও প্রকট হবে। তাই অন্তর্র্বতী সরকারকে অবিলম্বে পাহাড় থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি বলেন, পাহাড় নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। সাধারণ মানুষের ওপর নিপীড়ন বন্ধ করুন। না হলে পার্বত্যবাসী নিজেদের রক্ষায় আইন নিজেদের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে।
এন্টি চাকমা পাহাড় ও সমতলে নারী অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য নারী সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে অমিতা চাকমা বলেন, চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে নারী সমাজকে গর্জে উঠতে হবে। হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ এই লড়াই অব্যাহত রাখবে।
সুখী চাকমা বলেন, কল্পনা চাকমা ছিলেন বাঘাইছড়ির কন্যা, তাঁর কণ্ঠের আওয়াজে নারী সমাজ জেগে উঠতো। ১৯৯৬ সালের ১১ জুন দিবাগত মধ্যরাতে অর্থাৎ ১২ জুন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমাণ্ডার লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস এবং ভিডিপি সদস্য সালেহ আহমেদ ও নুরুল হক তাঁকে নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে। এই ঘটনাকে শুরু থেকেই রাষ্ট্র এবং সুবিধাবাদী জেএসএস (সন্তু লারমা) চাপা দিতে তৎপরতা চালিয়েছে। অস্ত্র সমর্পণের সময় সন্তু লারমা এই অপহরণ ঘটনাকে ‘বিতর্কিত’ বলে অপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন।
সমাবেশে ঝিমিত চাকমা বলেন, ২৯ বছরেও কল্পনা চাকমার অপহরণের বিচার হয়নি। বরং ‘অপারেশন উত্তরণ’ নাম দিয়ে পার্বত্যবাসীর ওপর নানা হয়রানি চালানো হচ্ছে।
জ্যোতি চাকমা বলেন, কল্পনা চাকমাকে অপহরণের পর গুম করা হলেও তাঁর আদর্শকে নিশ্চিহ্ন করা যায়নি। পাহাড়ে ঘরে ঘরে নতুন কল্পনারা জন্ম নিচ্ছে।
নতুন জয় চাকমা বলেন, আমরা আমাদের বোন কল্পনা চাকমাকে ফিরে পাওয়ার জন্য ২৯ বছর ধরে সংগ্রাম করে যাচ্ছি। এই সংগ্রাম চলবে, যতদিন না তাঁর সঠিক সন্ধান ও বিচারের নিশ্চয়তা মেলে।
সমাবেশ থেকে অবিলম্বে কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করতে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। একই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল ধর্ষণ ও সহিংসতার ঘটনা নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক বিচারের দাবি করা হয়।