নিজস্ব প্রতিনিধিঃ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এপ্রিলের প্রথমার্ধের যে কোনো দিন জাতীয় নির্বাচনের যে ঘোষণা দিয়েছেন তাকে ‘শর্তসাপেক্ষে’ সাধুবাদ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি।
দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, এপ্রিলে নির্বাচন করতে হলে এ বছরের জুলাইয়ের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ দিতে হবে।সেই সঙ্গে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিতে এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করে ভোটের প্রক্রিয়া শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের সম্ভাব্য নতুন সময় ঘোষণা করার পর তাৎক্ষণিক একাত্তর টেলিভিশননকে এই প্রতিক্রিয়া জানান এনসিসিপি আহ্বায়ক।
সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, “বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন সংক্রান্ত চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আমি আজ দেশবাসীর কাছে ঘোষণা করছি যে আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যে কোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে।”
গত ডিসেম্বর থেকে ইউনূস বলে আসছিলেন, নির্বাচন কবে হবে তা নির্ভর করবে সংস্কার কতটা করা হবে তার ওপর। গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কার সেরে ডিসেম্বরেই নির্বাচন সম্ভব। আর আরো কিছু সংস্কার করলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে ভোট করা যাবে। তবে নির্বাচন জুনের পরে যাবে না, সেটাও তিনি বলেছেন।এনসিপি নেতা নাহিদ বলেন, “মাত্র প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যটা এলো। আরেকটু সময় নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য দিতে পারবো। তাৎক্ষণিক প্রক্রিয়ায় একটুকু বলার আছে-আমরা চেয়েছিলাম সংস্কারের রূপরেখাটা আগে হোক। যেহেতু নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য মাস ঘোষণা করা হয়েছে, যদি জুলাই মাসে জুলাই সনদ হয়ে যায় এবং জুলাই ঘোষণাপত্রটা হয়ে যায় প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে, তাহলে এ সময়টাকে (এপ্রিলের প্রথমার্ধে ভোট) সাধুবাদ জানাই।”
এনসিপির অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, “প্রথম থেকেই এনসিপি বলে এসেছে, বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচন-এ সরকারের তিনটি প্রধান কর্তব্য। প্রধান উপদেষ্টা আজকের বক্তব্যে শুধু রোডম্যাপ নয়, এ তিনটি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। নির্বাচন ব্যবস্থাসহ আমাদের রাষ্ট্রের একটা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন এবং বিচারের বিষয়টাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।”সবশেষ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের বিষয়টি তুলে ধরে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, “জুলাই সনদ ঘোষণার পরেই যাতে নির্বাচনের তারিখ বা মাসটি ঘোষণা করা হয়। তারপরও জুলাই সনদের আগেই নির্বাচনের সম্ভাব্য মাস এপ্রিলের প্রথমার্ধের কথা বলেছেন।
“যেহেতু কিছু রাজনৈতিক দল এবং জনগণের একটা অংশ নির্বাচনের তারিখটি জানতে চাচ্ছিল বা একটা শঙ্কার কথা বলা হচ্ছিল। তাদেরকে হয়ত আশ্বস্ত করার জন্য হয়ত এটি বলেছেন।”
তবে গণঅভ্যুত্থান এবং জনগণের বৃহত্তর অংশকে আশ্বস্ত করার জন্য জুলাই সনদ অতীব জরুরি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রের কি কি সংস্কার হচ্ছে এবং জুলাই ঘোষণাপত্র, আমাদের এই জুলাই শহীদদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, জুলাইয়ের ইতিহাস সংরক্ষরণের জন্য-যেটি ৩০ কার্যদিবস বলা হয়েছিল, আর কয়েকটি কার্যদিবস আছে, ঈদের পরে। আমরা আশা করবো, সেটা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা ‘জুলাই মাসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র আসবে’ বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন সে প্রসঙ্গ টেনে নাহিদ বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্রে যদি ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কারের রূপরেখাটি আসে এবং এর পরর্তীতে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে নির্বাচনের দিকে যেতে পারে।”
“(প্রধান উপদেষ্টা) এপ্রিল মাস বলেছেন। আমরা এর আগেও বলেছি, জুলাইয়ে যদি সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়াটা নিশ্চিত হয় এবং তার রোডম্যাপটা তৈরি থাকে, তাহলে নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুন যে কোনো সময়ের মধ্যে হতে পারে। উনি বলেছেন, সেটা এপ্রিলেও হতে পারে।”
জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদের প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, “সনদটাই এ মুহূর্তে আমাদের প্রধান দাবি। জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই সনদ, এটি যাতে উনি (প্রধান উপদেষ্টা), প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন। আর নির্বাচনের যেহেতু মাসটি ঘোষণা করা হয়েছে ফলে সেটার জন্য আমরা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের কথা বলেছি।“লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য এ নির্বাচন কমিশন দিয়ে সেটি সম্ভব না, তাহলে সে প্রক্রিয়াগুলো যাতে দ্রুত শুরু হয়, এটা আমাদের আহ্বান থাকবে সরকারের প্রতি।”