নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে ৩৫ মনের ‘কালো মানিক’ (ষাঁড়) উপহার দিতে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর ঝাটিবুনিয়া গ্রামের বিএনপি প্রেমী সোহাগ মৃধা ও তার দল। আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টায় নেচে গেয়ে আনন্দ উচ্ছাসের মধ্য দিয়ে নান্দনিক সাজে সজ্জিত হয়ে তিনটি ট্রাক সহ ৫০ জন বিএনপির কর্মী নিয়ে নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে উপজেলা সদর সুবিদখালী বন্দরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন করে তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। ৫০ জন বিএনপি কর্মী সবাই সাদা রংয়ের জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির লোগো সম্বলিত গেঞ্জি পরিহিত। সঙ্গে রয়েছে অভিজ্ঞ ব্যান্ড পার্টি দল। তাদের ঢাকের বাদ্য, বাঁশির সুর এবং কাঁশার ঝনঝনিতে মুখরিত পুরো এলাকা। এছাড়া মিনি ট্রাকগুলো সাজানো হয়েছে তাজা ধানের শীষ দিয়ে। এসব ট্রাকের সামনে রয়েছে জাতীয় ও দলীয় পতাকা সহ ঈদ উপহার সম্বলিত বিএনপির ব্যানার। ট্রাকের ভিতরে ঢাকের বাদ্যে চলছে নাচ। বেগম জিয়াকে ষাঁড় উপহার দেয়ার কথা জানতে পেরে তার বাড়িতে ভীড় করেন শত শত উৎসুক মানুষ।
মোঃ সোহাগ মৃধা জানান, ৬ বছর আগে স্থানীয় চৈতা বাজার থেকে একটি গাভি কিনেছিলেন। কিছু দিনের মধ্যেই গাভিটি একটি বাছুরের জন্ম দেয়। বাছুরটি একটু বড় হলেই তিনি গাভিটি বিক্রি করে দেন। আর নিজের সন্তানের মতো বাছুরটিকে লালন পালন শুরু করেন। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতো অতিযত্নে লালন পালন করায় তার ষাঁড়টির বর্তমান ওজন হয়েছে ১ হাজার ৪০০ কেজি। কালো হলেও ভালোবেসে এ ষাঁড়টির নাম রাখেন ‘কালো মানিক’। ষাঁড়টি বেগম জিয়াকে উপহার দেয়ার আশা করেন তিনি। যেই ভাবনা সেই কাজ। আজ সকালে বেগম খালেদা জিয়ার ঢাকার বাসভবন ‘ফিরোজা’ এর উদ্দেশ্যে প্রিয় “কালো মানিক” কে নিয়ে রওয়ানা দেন সোহাগ মৃধা। তবে ষাঁড়টি বেগম জিয়া গ্রহন করবেন কিনা সেটা নিয়ে অনিশ্চিত সোহাগ। দরিদ্র হয়েও বিএনপি প্রেমীর এমন বিরল ভালোবাসার জন্য উপস্থিত সবাই সোহাগের প্রশংসা করেন।
পার্শ্ববর্তী গ্রাম শ্রীনগর থেকে আসা রবিউল হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে গরু উপহার হিসেবে নিয়ে যাওয়ার কথা শুনে এখানে এসেছি। সোহাগ মৃধার জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন দেখে মনটা ভরে গেছে। সুবিদখালী গ্রামের আতিক মিয়া বলেন, সোহাগ মৃধা অনেক দরিদ্র শ্রেণীর কৃষক। আসলে বড় মন না থাকলে এভাবে বড় ত্যাগ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ঢাকঢোল এবং নাচ গানে মেতে ষাঁড়টি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা আশা করছি বেগম জিয়া ষাঁড়টি গ্রহন করবেন।
এ বিষয়ে সোহাগ মৃধা বলেন, ২০২৩ সালে আওয়ামীলীগ নেত্রীকে এক কৃষক একটি গরু উপহার দিয়েছিলো। তখনই পন করি আমার নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও আমি আমার ষাঁড়টি উপহার দিবো। পরে ষাঁড়টি আমার সন্তানের মতো যত্ন করে লালন পালন করেছি। সম্পূর্ন দেশীয় খাবার খাইয়ে ষাঁড়টি বড় করেছি। আমার নেত্রীর উদ্দেশ্যে ষাঁড়টি নিয়ে রওয়ানা দিতে পেরে আমি আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করছি। তবে সে গ্রহন করুক বা না করুক আমি ষাঁড়টি নিয়ে তার বাসভবন পর্যন্ত যাবো।
আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, সোহাগ মৃধা গরিব হয়েও সে পন করেছে ষাঁড়টি বেগম জিয়াকে উপহার দেয়ার জন্য নিয়ে যাবেই। তাই তাকে আমরা ইউনিয়ন বিএনপির পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা করেছি।
মির্জাগঞ্জ প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা আলাউদ্দিন মাসুদ বলেন, সবুজ ঘাস ও খড় কুটো খাইয়ে ষাড়টিকে বড় করেছে সোহাগ মৃধা। এই কালো মানিক জেলার সবচেয়ে বড় গরু। ষাঁড়টি লালন পালনে তাকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে।