রুপসীবাংলা৭১ অর্থনীতি ডেস্ক : ঢাকা জেলার সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। সঙ্কট কাটাতে অনেক কারখানা বিকল্প হিসেবে ডিজেল ব্যবহার করলেও তাতে দ্বিগুণ খরচ গুনতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। এতে উৎপাদন ব্যয় যেমন বেড়েছে, তেমনি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ বলছে, সরবরাহ ঘাটতির নির্দিষ্ট সমাধান নেই। তবে শনিবার (৩১ মে) থেকে কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই অঞ্চলের কয়েকটি কারখানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গ্যাসের ঘাটতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। বাধ্য হয়ে অনেকে ডিজেলসহ অন্যান্য জ্বালানি ব্যবহার করছেন, যার ফলে উৎপাদন ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ অবস্থায় সরকারকে দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে হবে।
অনন্ত গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইনামুল হক খান বাবলু বলেন, ‘‘আমাদের এখানে গ্যাসের চাপ কিছুটা পাচ্ছি, তবে অর্ধেক ঘাটতি রয়েছে। আগে তো একেবারেই আসত না, এখন একটু আসে। ডিজেল ও অন্যান্য জ্বালানি বার্ন করে কোনোভাবে চলছি।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘মাসে দুইটা কারখানায় প্রায় ৫০ লাখ টাকার ডিজেল খরচ হচ্ছে। এতে সামগ্রিকভাবে প্রভাব পড়ছে। আশা করছি, সরকার বাড়তি গ্যাস দেবে। আজকে শুনলাম কিছুটা বাড়বে, এখন অপেক্ষায় আছি।’’
উইন্টার ফ্যাশনের জেনারেল ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত একদম গ্যাস থাকে না। সন্ধ্যার পর দুই ঘণ্টা থাকে, তারপর আবার বন্ধ। এখন ডিজেলই ভরসা। জেনারেটর বন্ধ, বয়লার কোনোমতে চলছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘প্রতিদিন ১২০০ লিটার ডিজেল লাগে। ১০৮ টাকা দরে দিনে ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০০ টাকা খরচ হয়। গ্যাস থাকলে অর্ধেক খরচেই হতো।’’তিনি আরো বলেন, ‘‘তিতাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারা জানিয়েছে পরিস্থিতির উন্নতি দ্রুত হবে না। অন্তত ৮০ ভাগ গ্যাস ঘাটতি রয়েছে।’’
তিতাস গ্যাস কী বলছে?
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের মানিকগঞ্জ-ধামরাই জোনের প্রকৌশলী মো. আসগার আলী বলেন, ‘‘গত ১০-১৫ দিন ধরে সরবরাহ আরো কমে গেছে। মানিকগঞ্জে প্রায় গ্যাস নেই বললেই চলে। আমাদের ভালব সব খোলা, কিন্তু চাহিদামতো গ্যাস পাচ্ছি না।’’
সমাধান কবে নাগাদ হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। এটি আমাদের হাতে নেই, অনেক ওপরে সিদ্ধান্ত আসে।’’
সাভার জোনের প্রকৌশলী তৌফিক এলাহী সবুজ বলেন, ‘‘সাভারে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন পাচ্ছি। গ্যাসের চাপ অনেক জায়গায় একেবারেই কম। দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি কিছুটা ঠিক হতে পারে।’’
সরকার কী বলছে?
শনিবার (৩১ মে) সকালে আশুলিয়ার কয়েকটি শিল্পকারখানায় সরেজমিন পরিদর্শন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, ‘‘শনিবার থেকেই দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। সমুদ্র উত্তাল থাকায় জাহাজ থেকে গ্যাস মূল সঞ্চালন লাইনে পাঠানো সম্ভব হয়নি। এখন সেই সমস্যা কেটে গেছে।’’তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে ৫০ এমএমসিএফডি সরবরাহ বেড়েছে, আরও এক থেকে দেড়শত এমএমসিএফডি বাড়বে।
রুপসীবাংলা৭১/এআর