মঞ্জুর: কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে প্রতি কেজি লবণ উৎপাদন খরচ প্রায় ১৫ টাকা হলেও মাঠ পর্যায়ে প্রান্তিক চাষিরা লবণ বিক্রি করছে প্রতি কেজি ৫ টাকা ৫০ পয়সা দরে, যা খুবই বেদনাদায়ক। এই চক্রান্তের শিকার হয়ে লবণ চাষ থেকে প্রকৃত লবণ চাষিরা নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এসময় দেশীয় লবণ শিল্পকে রক্ষার আহ্ববান জানান তারা। বৃহস্পতিবার ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্টের (শিল্প লবণ) নামে লবণ আমদানী বন্ধ করে দেশীয় লবণ শিল্পকে রক্ষার নিমিত্তে মাঠ পর্যায়ে প্রান্তিক চাষিদের উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ জামিল ইব্রাহিম। তিনি বলেন, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলা বাংলাদেশের একমাত্র দেশীয় লবণ উৎপাদন কেন্দ্র। এরমধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ লবণ উৎপাদন হয় কক্সবাজার জেলায় টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, ঈদাগাঁও, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া উপজেলায় এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ লবণ উৎপাদন হয় চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায়। গত মৌসুমে প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় দেশীয় উৎপাদিত লবণ দেশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছে। বিসিকের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২২-২৩ মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনে গত ৬২ বছরের রেকর্ড ভেঙে করে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২২ লক্ষ ৩২ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন। ২০২৩-২৪ মৌসুমে ৬৩ বছরের রেকর্ড ভেঙে ২৪ লক্ষ ৩৬ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লবণের চাহিদা রয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। এই চাহিদাকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদন অবিরাম গতিতে চলছে। এই মুহুর্তে আমরা লবণ চাষি ও ব্যবসায়ীরা খুবই উদ্বিগ্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাষিরা চলতি মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনের অতীতের রেকর্ড ভাঙ্গতে চাইলেও লবণ মিল মালিকদের সিন্ডিকেট লবণ উৎপাদন কমানোর জন্য চাষিদের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে নেমেছে। লবণ মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে নিজেদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য দেশীয় লবণ শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণের নাম দিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে লবণ আমদানির এলসি অনুমোদন করার পায়তারা করছে। যদি তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয় বাংলাদেশের একমাত্র স্বনির্ভর লবণ শিল্পের ধ্বংস নিশ্চিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। এসময় অসাধু সিন্ডিকেট দেশবিরোধী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে কক্সবাজার জেলার অন্যতম প্রাকৃতিক শিল্পকে রক্ষা করে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তিকে উত্তোরত্তর সচল রাখতে দ্রুত সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান মোহাম্মদ জামিল ইব্রাহিম। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খোকনসহ কক্সবাজারের লবণ চাষিরা।
ADVERTISEMENT