মঞ্জুর: বিলম্বে মুনাফা বিতরণের জরিমানা আদায়ে গ্রামীণফোনের চাকরিচ্যুত কর্মীরা যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তাতে এবার আর্থিক ও সামাজিক ক্ষতিপূরণসহ চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ‘চাকুরিচ্যুত ও অধিকারবঞ্চিত গ্রামীণফোন শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে কম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবিও তুলেছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন হয়, যেখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের আহ্বায়ক আবু সাদাত মো. শোয়েব। এদিকে গ্রামীণফোন বলছে, “কিছু ব্যক্তি গ্রামীণফোন সম্পর্কে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে।” সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণ ফোনের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ ও আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে তিন দফা দাবি তুলে ধরা হয়। লিখিত বক্তব্যে আবু সাদাত বলেন, গ্রামীণফোন বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে অনেককে চাকরিচ্যুত করেছে। ২০১২ সালে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের চেষ্টা করায় প্রায় ১৮০ জনকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। “২০১৫ সাল থেকে ‘স্বেচ্ছা অবসর’ স্কিম চালু করে শ্রমিকদের মানসিক চাপ ও হুমকি দিয়ে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। ২০২১ সালে কোভিড মহামারির মধ্যে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ১৮০ জনকে চাকুরিচ্যুত করা হয়।” এভাবে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রায় তিন হাজার ৩০০ শ্রমিককে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয় বলে উল্লেখ করেন আবু সাদাত কোম্পানির মুনাফায় শ্রমিকদের অংশগ্রহণের যে আইনটি রয়েছে, সেটিও গ্রামীণফোন লঙ্ঘন করেছে উল্লেখ করে আবু সাদাত বলেন, বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী, শ্রমিকদের কোম্পানির মুনাফার ৫ শতাংশ দেওয়া বাধ্যতামূলক। “গ্রামীণফোন এই নির্দেশনা লঙ্ঘন করে এবং উচ্চ আদালতের রায় সত্ত্বেও শ্রমিকদের পাওনা দেয়নি। এখন সেই বিতরণের বিলম্বজনিত জরিমানা পরিশোধ করছে না।” দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল অপারেটরটি মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে বলেও অভিযোগ করেন আবু সাদাত। তিনি বলেন, “বিকল্প কর্ম সংস্থান না থাকায় মধ্যবয়সে চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা সামাজিকভাবে হেয় হয়েছেন। তাদের আর্থিক ও সামাজিকভাবে অসহায় অবস্থায় ফেলা হয়েছে। শ্রমিক ছাঁটাই প্রক্রিয়ায় নির্মম কায়দায় মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে।” গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং শ্রম অধিদপ্তরের নির্দেশনাও অমান্য করে চলেছেন বলে অভিযোগ আবু সাদাতের। তিন দফা দাবি তুলে ধরে আবু সাদাত বলেন, “গ্রামীণফোনের অবৈধ চাকরিচ্যুতির সব আদেশ বাতিল করে শ্রমিকদের অবিলম্বে আর্থিক ও সামাজিক ক্ষতিপূরণসহ চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। “তিন বছরের পাঁচ শতাংশ লভ্যাংশের বিলম্ব বিতরণের জরিমানাসহ সকল বকেয়া অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে।” শ্রমিক-কর্মচারীদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালানোয় গ্রামীণফোনের সিইও, সিএমওসহ তাদের সব অনুসারী ম্যানেজার ও ইউনিয়ন নেতাদের শাস্তির দাবিও জানান আবু সাদাত।এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মঙ্গলবার গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ একটি লিখিত বক্তব্য পাঠায়। সেখানে বলা হয়, “সম্প্রতি আমরা আরও লক্ষ্য করছি যে, এসব ব্যক্তি গ্রামীণফোন সম্পর্কে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন।” গ্রামীণফোন বলছে, “কিছু সাবেক কর্মী চাকরিসংক্রান্ত দাবি-দাওয়া নিয়ে কয়েক মাস ধরে জিপি হাউজের সামনে সমবেত হচ্ছেন। আমাদের জানা মতে, তাদের বেশির ভাগ বেশ কয়েক বছর আগেই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যান এবং আইন অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য গ্রহণ করেন। “এছাড়া তারা যেসব দাবি তুলেছেন, সেগুলো বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। বিচারিক ব্যবস্থার প্রতি গ্রামীণফোন শ্রদ্ধাশীল। তাই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতেই এসব বিষয়ের নিষ্পত্তি হবে বলে বিশ্বাস করে গ্রামীণফোন।” লিখিত বক্তব্যে কোম্পানিটি বলছে, “গ্রামীণফোন শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে সম্মান করে। তবে ওই ব্যক্তিরা গ্রামীণফোনের প্রধান কার্যালয় প্রাঙ্গণে প্রবেশ ও বহির্গমনের পথ অবৈধভাবে গত ৪ ফেব্রুয়ারিসহ বেশ কয়েকবার অবরুদ্ধ করেন। ফলে গ্রামীণফোনের কর্মী, সরবরাহকারী ও গ্রাহকদের অবাধ চলাচল উল্লেখযোগ্যভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। “তারা সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত জিপি হাউজে আটকা পড়েন। এ পরিস্থিতিতে কেউ কেউ অসুস্থও হয়ে পড়েন। গ্রামীণফোন দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং কর্মী ও গ্রাহকদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যক্তি ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জিপি হাউস সংলগ্ন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান নেয়।”
ADVERTISEMENT