শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণসহ বিভিন্ন দাবিতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) ও বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস)’র যৌথ উদ্যোগে ৫ অক্টোবর-২০২৪ ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালন।
“শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণসহ বিভিন্ন দাবিতে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ উপলক্ষ্যে ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী দেশের সর্বপ্রাচীন ও সর্ববৃহৎ শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) ও বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমমিতি (বাকবিশিস)’র যৌথ উদ্যোগে ৫ অক্টোবর ২০২৪ শনিবার সকাল ১১টায় বিটিএ’র কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৭/৫-খ, তোপখানা রোড, সেগুনবাগিচা, ঢাকায় বিটিএ’র সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ বজলুর রহমান মিয়া’র সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ -এর সঞ্চালনায় এক ‘অলোচনা সভা’ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, বাকবিশিস-এর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আকমল হোসেন। আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমমিতি (বাকবিশিস)’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. খোরশেদ আলম ভূইয়া, ঢাকা মহানগর সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোঃ নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র উপদেষ্টা বাবু রঞ্জিত কুমার সাহা, দাসগুপ্ত আশিষ, সহ সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ আবুল কাশেম, আলী আসগর হাওলাদার, বেগম নূরুন্নাহার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু জামিল মোঃ সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য প্রবীর রঞ্জন দাস, মোঃ সোহরাব হোসেনসহ প্রমুখ শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।
“শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণসহ বিভিন্ন দাবিতে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) ও বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমমিতি (বাকবিশিস)’র উদ্যোগে সারাদেশের উপজেলা/থানা, জেলা/মহানগর, অঞ্চল ও কেন্দ্রীয়ভাবে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালিত হচ্ছে। সভায় ২০২৩ সালে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)’র ব্যানারে ১১ জুলাই থেকে ০১ আগস্ট পর্যন্ত ২২ দিনের লাগাতার শিক্ষক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণ ও শিক্ষকদের বদলী প্রথা চালুকরণসহ শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি পূরণে সরকারের দেয়া প্রতিশ্রুতি অদ্যাবধি বাস্তবায়িত না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ এর এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- “Empowering Educators: Strengthening Resilience, Building Sustainability”. অর্থাৎ শিক্ষকের কণ্ঠস্বর: শিক্ষায় নতুন সামাজিক অঙ্গীকার।
১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ সভায় শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিবছর ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তাই ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিবছর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালিত হচ্ছে। ইউনেস্কো ১৯৯৪ সাল থেকেই দিবসটি পালন করে আসছে। বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে এই দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। এই দিবসটি পালনে “Education International সহ এর সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন’ মূখ্য ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষকতাকে এখনও পেশা হিসেবে না দেখে ‘ব্রত’ হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই জাতীয় বাজেটে শিক্ষা ও শিক্ষদের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্ধ রাখা হয় না। রাষ্ট্র চায় শিক্ষকগণ কোনমতে খেয়ে-পরে জাতি বিনির্মাণকে ‘মহান ব্রত’ মনে করে নিঃস্বার্থভাবে দায়িত্ব পালন করুক। তাই ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ এ প্রতিবছর শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান বৈষম্যসমূহ দূরীকরণের জন্য সরকারের নিকট দাবি জানাতে হয়। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও ‘জাতির মেরুদন্ড শিক্ষা’ কে সঠিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো যায়নি। এযাবৎকাল রাষ্ট্র কখনও মনে করেনি যে, মানসম্মত ও টেকসই উন্নয়ন করতে হলে, শিক্ষকদের যথাযোগ্য মর্যাদা ও ন্যায্য অধিকার প্রদান করা দরকার। আলোচকবৃন্দ বলেন, শিক্ষকদের ন্যায্য পাওনা ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখে শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানকে প্রকারান্তরে অস্বীকার করা হচ্ছে।
কোনরূপ সুযোগ-সুবিধা না বাড়িয়ে কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ড শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে ৬% -এর স্থলে ১০% কর্তন করায় সভায় গভীর ক্ষোভ ও নিন্দা জানানো হয়। শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর তৎকালীন সরকার যুদ্ধবিধস্ত অবস্থায়ও ১৯৭৩ সালে প্রায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছিলেন এবং একইভাবে ২০১৩ সালে প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করেছেন। তাই সবার জন্য শিক্ষা ও শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণের জন্য “শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ” এখন সময়ের দাবি। তাছাড়া এ দাবির প্রতি ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অকুন্ঠ সমর্থন রয়েছে। কারণ প্রাথমিক স্তর শেষ করা শিক্ষার্থীদের অনেকেই আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে লেখা-পড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সুবিধাবঞ্চিত এসকল শিশুরা নানামুখি অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের বাল্যবিবাহ বেড়েই চলেছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে দেশে শিক্ষার হার ক্রমান্নয়ে কমতে থাকবে। ফলে মানসম্মত ও টেকসই উন্নয়নসহ এসডিজি অর্জন ব্যহত হবে। এমতাস্থায় অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তানদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনতে গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের মানসম্মত শিক্ষার স্বার্থে বিচ্ছিন্নভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ না করে একযোগে “শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ” করা একান্ত জরুরী হয়ে পরেছে। আলোচকবৃন্দ আরও বলেন, “সরকার যেহেতু মূল বেতনের ১০০% প্রদানসহ ৫% বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি ও ২০% বৈশাখী ভাতা প্রদানের পাশাপাশি উপবৃত্তি এবং অন্যান্য সকল সুবিধাদির আংশিক প্রদান করেন সেহেতু প্রতিষ্ঠানের আয় সরকারি কোষাগারে দেয়া হলে, শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের জন্য সরকারের খুব বেশি অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন হবে না। তাই সভায় অত্যন্ত যৌক্তিক কারণে “শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে বদলী প্রথা চালুকরণসহ শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ” এবং “বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে সকল শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে তাঁদেরকে অবিলম্বে স্ব-পদে পুনর্বহাল” করার জোর দাবি জানান।