নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আজ, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, সকাল ১০.৩০ মিনিটে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৩-এর চূড়ান্ত ঘোষণাপত্র উপস্থাপন উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশের সহ আহ্বয়ক বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের বেসরকারি উপদেষ্টা এমএস সিদ্দিক’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য আমরা দায়ী। আমরা কেন এই জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম? নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠা স্থাপনা এবং কারখানা উচ্ছেদ করতে হবে। তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে জলবায়ু তহবিলের অর্থের ব্যয়ের দুর্নীতি বন্ধে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে এমএস সিদ্দিকী বলেন, ট্রান্সবাউন্ডারি নদীর দেশগুলোকে নদীর সমান হিস্যার জন্য কাজ করতে হবে। সরকারকে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে চুড়ান্ত ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করেন জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৩-এর আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব শরীফ জামিল। তিনি চূড়ান্ত ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করেন, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব পর্াযোচনার ভিত্তিতে বিষয়ভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিত করে এর ভিত্তিতে প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, জনগণের জরুরি দাবি’র প্রেক্ষিতে সংগঠিত প্রচারাভিযান বাংলাদেশে জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য একটি বৃহত্তর আন্দোলনের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এই সমাবেশ। এসময় তিনি উল্লেখ করেন, দেশের ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টারপ্ল্যান (আইইপিএমপি) এর মূল্য উদ্দেশ্যগুলোর অংশ হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশ এবং বিদ্যমান কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোকে পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার পরিকল্পনা রাখতে হবে, সেই সাথে মিথ্যা সমাধান বা অপ্রমাণিত প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে এবং জনমূখী, পরিবেশবান্ধব, পরিবেশগতভাবে ভারসাম্যপূর্ণ এবং জলবায়ু সহনশীল নীতিকাঠামো এবং কৌশলগুলির বিকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং জনগোষ্ঠীর মধ্যে পারষ্পারিক ফলপ্রসু আলোচনা এবং অংশীদারিত্বের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তিনি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সম্পন্ন হওয়া কৌশলগত প্রতিবেশ সমীক্ষা (এসইএ) বিজ্ঞানসমম্মত ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে পুনরায় করা এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কৌশলগত প্রতিবেশ সমীক্ষার উদ্যোগকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সম্পাদন করার দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গত ১৭-১৮ নভেম্বর ২০২৩-এ অনুষ্ঠিত প্রথম “জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৩” এ প্রায় এক হাজার একশত প্রতিনিধি এবং ১৩ জন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নেতা অংশ নেন।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান বলেন, উন্নত দেশগুলো অধিকাংশ কার্বন নির্গমন করছে। আর আমরা প্রাচ্যের দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমরা ন্যায্যতা পাচ্ছি না। তাই বৈষম্য নিরসনে আমাদের আওয়াজ তুলতে হবে।
মো. শামসুদ্দোহা বলেন, আমরা জলবায়ু ন্যায্যতার ন্যারেটিভ তৈরি করার চেষ্টা করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমরা প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমদেরকে জলবায়ু ন্যায্যতার ন্যাশনাল ন্যারেটিভ তৈরি করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবেলায় অর্থায়নের খরচে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
সোহানুর রহমান বলেন, আমরা দেখেছি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ তার সমাধানটা পাচ্ছে না।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন প্রক্রিয়া যেন মানুষের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত না করে।
নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নিচ্ছেন। সরকার জলবায়ু সংকট নিরসনে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
রাওমান স্মিতা বলেন, জলবায়ু ন্যায্যতার জন্য অবশ্যই আমাদের গবেষণাভিত্তিক দাবি-দাওয়া উত্থাপন করতে হবে। জলবায়ু তহবিলের অর্থ যেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে পৌঁছায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আমানুল্লাহ পরাগ বলেন, আমাদের পলিসিগুলোর সাথে সাধারণ মানুষের, প্রান্তিক মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। পরবর্তী এনডিসিতে প্রান্তিক মানুষকে সংযুক্ত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা, এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ (ইআরডিএ)-এর নির্বাহী পরিচালক মনির হোসেন চৌধুরী, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান, সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়ক মো. নূর আলম শেখ, উপকূলী এবং সুন্দরবন সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, রিভার বাংলা সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ, গ্লোবাল ল’থিংকারস সোসাইটি’র প্রেসিডেন্ট রওমান স্মিতা, বারসিক এর সমন্বয়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম, ইযুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এর নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান এবং 350.org এর বাংলাদেশের সমন্বয়ক আমান উল্লাহ্ পরাগ প্রমূখ এবং অন্যান্য বিশিষ্ট পরিবেশবিদ, গণামাধ্যমকর্মী ও সমাজকর্মীগণ।
সংবাদ সম্মেলন শেষে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার এবং বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের বেসরকারি উপদেষ্টা এমএস সিদ্দিকী এবং আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব শরীফ জামিল এর নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মন্ত্রণালয়ে গিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা শারমীন এস. মুরশিদ এর নিকট চুড়ান্ত ঘোষণাপত্রের কপি হস্তান্তর করেন।