নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আজ ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সোমবার বিকাল ৩:০০ টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বৈষম্য দূরীকরণঃ তরুণী ভাবনা বিষয়ক অনুষ্ঠিত হয়। সভায়সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। স্বাগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠার ৫৪ বছর অতিবাহিত হয়েছে, এসময়ে পরিবর্তন অনেক হয়েছে। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই নারী-পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়নে, নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বহুমাত্রিক কর্মসূচী পালন করছে,তাদের অধিকারহীনতায় দিকগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করতে কাজ করে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে বহুসংখ্যক ছাত্রীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সফল হয়। আজকের তরুণরা বৈষম্যকে কিভাবে দেখে, নারীর অধিকারহীনতা দূর করে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় করণীয় নির্ধারণে আলোচনার জন্য আজকের সভার আয়োজন।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের ঐতিহ্য, লক্ষ্য ও কর্মকান্ড বিষয়ে আলোচনা শেষে নারীর সমতা, মর্যাদা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে আরো অগ্রসর করে নিতে তরুণ সমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে দৃশ্যমান নারী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি এসময় আরো বলেন নারীকে মা, স্ত্রী বা কন্যা হিসেবে নয় মানুষ হিসেবে দেখতে হবে; পিতৃতান্ত্রিকতার দর্শন পরিত্যাগ করে সমতার দর্শন গড়ে তুলতে হবে।
উপস্থিত তরুণীদের মধ্যে মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রজ্ঞা লাবণী, সুমাইয়া সাদিয়া, মহুয়া চক্রবর্তী, নিশিতা জামান, রাফিয়া রেহনুমা, সামিয়া আখতার অর্পিতা, ইলমা হাসিন, হাফসা, নূরজাহান লিসা, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির তাহসিন মিতি,তানজিনা তাম্মিম হাপসা, বাংলাদেশ বেতারের ঘোষক সুপা সাদিয়া, ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয় নুসরাত নুপুর, ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসিন আহসান হৃদি, ফাবিয়া রোদশী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মালিহা মাওলা এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাভার কার্যকরী কমিটির মণিদিপা চক্রবর্তী, মাহবুবা খানম লিসা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও বহ্নিশিখার প্রজেক্ট অফিসার মেহনাজ
তারা বলেন, সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে পিতৃতান্ত্রিক রীতিনীতির কারণে নারীরা বৈষম্যের শিকার, সমাজে নারী-পুরুষের প্রতি প্রচলিত বৈষম্য মূলক রীতিনীতি রোধে পরিবার থেকেই শিশুদের জেন্ডার সমতার বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে, নারীদের সচেতন হতে হবে, নারী-পুরুষের কাজের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে, যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে নারীর সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে পুরুষের হিং¯্রতা বাড়ছে, সাইবার ক্ষেত্রে যৌন হয়রানি আইন করেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছেনা, ধর্ষণের ঘটনার বিচারে নারীকে দোষারোপ করা হয়, বিচারহীনতা আছে, এই পরিস্থিতির উত্তরণে এবিষয়ে আরো কাজ করতে হবে। সফলতা অর্জনের পরও অনেক নারী যথাযথ স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। নারীকে তার প্রাপ্য স্বীকৃতি দিতে হবে, সিদ্ধান্তগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। রাজনীতিতে ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে নারীকে নামমাত্র পদ দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়া বন্ধ করতে হবে, নারীকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন হয়ে ওঠার লড়াই নিজেকেই করতে হবে। ক্ষমতা কাঠামোর পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ব্যতীত ক্ষমতার কাঠামোর পরিবর্তন সম্ভব নয়। চিন্তার স্বাধীনতা আসতে অর্থনৈতিক মুক্তি দরকার, -সরকারি চাকরিতে নারী কোটা চালুর জন্য পুনরায় উদ্যোগ নিতে হবে, সাইবার বুলিং রোধে অনলাইনে প্রচার হওয়া সকল তথ্য বিশ^াস করা থেকে মেয়েদের সচেতন হতে হবে, মেয়েদের তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ হতে হবে, মায়েদের সচেতন হতে হবে, নারীর প্রতি নারীদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। তারা আরো বলেন হিজড়াদের সামাজিক উন্নয়নের মূলধারায় যুক্ত করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের উপর জোর দিতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের উপর গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান। পরিবর্তনে জন্য ঝুঁকি, সমালোচনাকে মেনে নিয়েই এগোতে হবে। বর্তমানের তরুণরা নারীর অধিকার বা সমানাধিকারের প্রশ্নে ক্ষমতার কাঠামোর পুনর্নিমাণের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।
উক্ত আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয় এবং ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ^বিদ্যালয়ের মোট ৬৪ জন শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ মহিলা কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ, সম্পাদকমন্ডলী. পাড়া কমিটির সদস্য এবং কর্মকর্তাসহ মোট ১৫৪ জন উপস্থিত ছিলেন।সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান।