ইকবাল হোসেনঃ শনিবার ০৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে মৌলানা আকরাম খাঁ মিলনায়তনে “সোনালী ব্যাংক পিএলসি’র ২০১৪-২০১৫ সালের নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাবী নিয়োগবঞ্চিত অবশিষ্ট প্রার্থীদের (সিনিয়র অফিসার, অফিসার ও অফিসার ক্যাশ পদে) ন্যায়বিচারের মাধ্যমে নিয়োগ দানের জন্য সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি জানান।
মুহাম্মদি আবদুল হামিদ বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতা সহ বৈষম্যবিরোধী সম্মিলিত আন্দোলনে সকল শহিদদের শ্রদ্ধার সাথে ধারণ করছি ও তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তাঁদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে বাংলাদেশে বৈষম্য দূরীকরণের পথে প্রথম পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন,আমরা, ২০১৪ সালে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী অবশিষ্ট মেধাতালিকায় থাকা প্রার্থীরা, বর্তমানে ভয়াবহ বৈষম্যের শিকার। উল্লেখ্য, আমরা ১৭০৭টি পদের বিপরীতে (প্রিলি, লিখিত ও মৌখিক) সকল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি এবং মৌখিক পরীক্ষা। শেষে ১৪৩৬ জন প্রার্থী নিয়োগের জন্য মনোনীত হন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রার্থী না পাওয়ায় ২৭১টি পদ খালি রাখা হয়। পরবর্তীতে, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজন ও নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা এড়াতে, ২০১৪-১৫ সালের মেধাতালিকার অবশিষ্ট ৪২০৯ জন প্রার্থী থেকে প্রথম ধাপে ১২৭১টি পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যা সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ৪৩৮তম বোর্ড সভায় ২০১৫ সালের ১ আগস্ট অনুমোদিত হয়। ব্যাংক ২০১৫ সালের ২০ আগস্ট অবশিষ্ট মেধাতালিকা হতে নিয়োগপ্রদানের ছাড়পত্র প্রাপ্তির লক্ষ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে একটি পত্র প্রেরণ করলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর অবশিষ্ট মেধাতালিকা হতে ১২৭১ জন প্রার্থীকে অতিরিক্ত কর্মকর্তা নিয়োগের অনুমতি প্রদান শীর্ষক একটি পত্র প্রেরণ করে। ২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর BSC (ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি) গঠিত হলে উক্ত কমিটি ২৮.০২.২০১৫ তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ছাড়পত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে সোনালী ব্যাংক লি. এর এবশিষ্ট মেধাতালিকা হতে পূর্বের নিয়োগ সম্পন্নকরণের সুপারিশ প্রদান করেছিলো।
তিনি আরো বলেন,কিন্তু দুঃখজনকভাবে কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের কারণে, আমাদের চূড়ান্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। ১০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের নেতৃত্বে প্রকাশিত একটি প্রেস রিলিজে জানানো হয়, “উত্তীর্ণ প্রার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণের সময় তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ায়, তাদের কাউকেই নিয়োগ দেয়া যাবে না।” প্রকৃতপক্ষে, আমাদের মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছিল ২০১৫ সালের মে মাসে, যা প্রেস রিলিজের তারিখ থেকে মাত্র ৯ মাস আগে। অথচ আমারা ৩ বছর অতিক্রান্তের মিথ্যা অযুহাতে নিয়োগ বজিত হয়ে বৈষম্যের স্বীকার হয়েছি।
তিনি বলেন,, আমরা ন্যায়বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করলেও, রাষ্ট্রযন্ত্রের পক্ষপাতিত্ব করেন তৎকালীন আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ফলে সেখানেও আমরা ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়েছি। এরই মধ্যে, ৩২ জন প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হলেও আমাদের নিয়োগের বিষয়াট উপেক্ষা করা হয়েছে। এই বৈষম্য আমাদের মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যন্ত করেছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে চাকরির অভাবে বেকারত্বের কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এবং পরিবারের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন,আমরা বিনীতভাবে সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি, ২০১৪-২০১৫ সালের অবশিষ্ট মেধাতালিকায় থাকা প্রার্থীদের নিয়োগের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করত আমাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ফিরিয়ে দিন। আমরা আশা করি, ছাত্রজনতা সহ বৈষম্যবিরোধী সম্মিলিত আন্দোলনের প্রতিফলনে গঠিত বর্তমান সরকার এই বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে সকল আবেদনকারীদের জন্য একটি মানবিক ও ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্রধান সমন্বয়ক মুহাম্মদি আবদুল হামিদ, উপস্থিত ছিলেন রাশেদুল ইসলাম, হুমায়ূন কবির সহ নিয়োগবঞ্চিত প্রার্থীরা।