মঞ্জুর: সরকারি চাকরিতে সর্বনিম্ন পদের বেতন স্কেল ২০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু হওয়ার দরকার বলে মনে করেন গণঅধিকার পরিষদের (একাংশের) সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মো. নুরুল হক নুর। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বর্তমানে পে স্কেল রিভিউ করে নবম পে-স্কেল দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি। শনিবার (৩১ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন নুর। নুর আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমাদের প্রত্যাশা, তিনি একটি ভালো পে স্কেল উপহার দেবেন যেন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সমাজে মর্যাদার সঙ্গে বাস করতে পারেন। তখন তাদের মাঝে দুর্নীতি-অনিয়ম থাকবে না। ৮ হাজার ৫০০ টাকা স্কেলে সবমিলিয়ে বেতন আসে ১৫ হাজার টাকা। এই পে-স্কেল সেগুলো পুরোনো হয়ে গেছে। এগুলো সময়ের সঙ্গে হালনাগাদ করতে হবে। তিনি বলেন, দিন মজুরও দিনে ৬০০ টাকা হিসেবে আয় করে। প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীরাও কষ্ট করে তাদের বেতন নেন। তাদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড পে স্কেল থাকা দরকার। একই সঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতিমুক্ত থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে বলেও জানান তিনি। নুর আরও বলেন, কর্মচারীরা প্রচুর বৈষম্যের মধ্যে আছেন। এই বৈষম্য অমানবিক। ব্যক্তি স্বার্থ, ক্ষুদ্র স্বার্থ পরিত্যাগ করতে হবে। আমি একা কেন ভালো থাকব? আমি সবাইকে নিয়ে ভালো থাকব। এমপি মন্ত্রী সামান্য অসুস্থ হলেও বিদেশ চলে যেতেন। আর আমাদের যেতে হয় ঢাকা মেডিকেলে, যেখানে মেঝেতে রোগী শুয়ে থাকে। বাংলাদেশ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদের সভাপতি আবু নাসির খান বলেন, সারা দেশে এক ও অভিন্ন পদবি ছিল কিন্তু তৎকালীন সরকার নির্বাহী আদেশে ১৯৯৫, ১৯৯৭ এবং ১৯৯৯ সালে প্রজ্ঞাপন দ্বারার শুধু সচিবালয়ের প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী, বাজেট পরীক্ষক পদগুলোকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং স্টেনোগ্রাফার পদটি ব্যক্তিগত কর্মকর্তা নামে পদবি পরিবর্তনসহ বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীত করে প্রজাতন্ত্রে পদবি ও বেতন বৈষম্যের সৃষ্টি করে। যার ধারাবাহিকতায় পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি), সুপ্রিমকোর্ট, গণভবন ও বঙ্গভবন এর প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী পদগুলোকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। অন্য দপ্তর, অধিদপ্তর, সংস্থা, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বর্ণিত পদবিগুলো অদ্যাবধি পূর্বাবস্থায়ই রয়ে গেছে যা সংবিধানের চরম লঙ্ঘন এবং সুস্পষ্ট বৈষম্য। এই বৈষম্য নিসনের জন্য বাংলাদেশ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদ ২০০৯ সাল হতে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন, প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি, সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, কালোব্যাজ ধারণ ও অবস্থান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। এতদবৈষম্য নিরসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নির্দেশনা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৩ বারের সুপারিশ থাকা সত্বেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দীর্ঘ ২৯ বছরের বৈষম্য নিরসন না করে পত্র চালাচালির মাধ্যমে কালক্ষেপণ করে আসছে। আবু নাসির খান আরও বলেন, পাঁচ বছর অন্তর অন্তর পে-স্কেল দেওয়ার কথা থাকলেও সরকার ২০১৫ সালে বৈষম্যমূলক ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ পে-স্কেল দিয়ে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের বঞ্চিত করছে। ইতোমধ্যে দ্রব্যমূল্য দশগুণ বৃদ্ধি পেলেও কর্মচারীদের বেতন বাড়েনি। প্রায় ১০ বছর পে-স্কেল না দেওয়ায় এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। স্বাধীনতার সুফল সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে পদবি বৈষম্য নিরসনের বিকল্প নেই এবং ৯ম জাতীয় পে-কমিশন গঠন সময়ের শ্রেষ্ঠ। আরও উপস্থিত ছিলেন, মহাসচিব মোঃ বেল্লাল হোসেন, মোঃ রোকন উদ্দীন প্রমুখ।