নিজস্ব প্রতিনিধঃ রাজধানী ঢাকার মিরনজিল্লাহসহ বিভিন্ন হরিজন পল্লীর বাসিন্দা, দেশের নানা স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উচ্ছেদ ও ভূমি দখলের অবসান এবং অনতিবিলম্বে নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে আজ শনিবার (১৩ জুলাই) সারাদেশে আয়োজিত বিক্ষোভ ও সমাবেশে ঘোষণা করা হয় যে, এই অবস্থায় কঠোর কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কারণ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ যৌথভাবে এই সমাবেশ ও বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করে। হরিজন ঐক্য পরিষদ ও নাগরিক সমাজ এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়। আজ বিকেলে ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে এই সমাবেশে ও বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেয়।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, আজ রাজধানীর মিরনজিল্লাহসহ বিভিন্ন হরিজন পল্লী থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে বাণিজ্যিক ভবন কিংবা মার্কেট নির্মাণের জন্যে। যারা মহানগরীকে দূষণমুক্ত করতে কাজ করেন, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে। কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এই ধরনের অভিযান চলতে পারে না। নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, এই হরিজনদের প্রায় তিনশো বছর আগে নগর পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্যে ভারত থেকে আনা হয়েছিল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তাদের অনেকে প্রাণ দিয়েছেন, নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে ক্ষমতায় আনার জন্যে তারা ভোট দেন। এসব পল্লী তাদের স্থায়ী ঠিকানা। অথচ তাদের এই মাটির সন্তান বলে ভাবতে এক শ্রেণির মানুষের কষ্ট হয়। এই অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, দীর্ঘ শত শত বছর ধরে বংশানুক্রমে বসবাসের ভূমি তাদের নামে বরাদ্দ করা হউক এবং হরিজন, তেলেগু, রবিদাস সম্প্রদায়সহ সকল গৃহহীনদের স্থায়ীভাবে আবাসনের ব্যবস্থা করা হউক।
নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রায় প্রতিদিনই দেশের নানা স্থান থেকে খবর পাওয়া যায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, বাড়িঘর-দোকানপাট ও জায়গাজমি দখল, মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুর কিংবা মেয়েদের অপহরণের পর ধর্মান্তর করার। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে লড়াই করতে হচ্ছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী শক্তি ক্ষমতায়। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরাও মুক্তিযুদ্ধে রক্ত দিয়েছে।
নেতৃবৃন্দ অত্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জাতি আজও বাহাত্তরের সংবিধানে পুরোপরি ফিরতে পারেনি। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের দাবির মুখে শাসক দল ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে যেসব অঙ্গীকার নির্বাচনী ইশতেহারে করেছিল, পাঁচ বছরে তা পূরণ করা হয়নি। ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে সেসব অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত হয়েছে। আমরা আন্দোলনে আছি, বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রতি এখনো আমরা আস্থা রাখতে চাই।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অদ্যকার এই সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে আরো উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন- ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি মি. নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক বাসুদেব ধর, বাংলাদেশ নাগরিক সমাজ’র অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণ লাল, ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাড. সুব্রত চৌধুরী ও জয়ন্ত সেন দীপু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্রী মনীন্দ্র কুমার নাথ, জয়ন্ত কুমার দেব, এ্যাড. শ্যামল রায়, এ্যাড. কিশোর রঞ্জন মÐল ও রবীন্দ্র নাথ বসু, বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদের সভাপতিদ্বয় সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য ও মধুমিতা বড়ুয়াসহ মহানগরের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।