মঞ্জুর: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, স্থায়ীভাবে মাদকের অবাধ ব্যবহার এবং মাদক নির্মূল করতে এর সরবরাহ উৎসের মূলোৎপাটন করতে হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ দেশের সব সচেতন নাগরিককে মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। বুধবার সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘মাদকাসক্তি-অপরাধ নাকি মানসিক রোগ এবং এর প্রতিকার’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কোনো মাদক তৈরি হয় না। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বাংলাদেশে মাদক প্রবেশ করে। তাহলে কেন আমরা মাদকের প্রবেশ পথগুলো বন্ধ করতে পারছি না? মাদকের প্রবেশ পথগুলো চিহ্নিত করতে হবে। একই সঙ্গে মাদক কারবার বা মাদক সরবরাহের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে মাদক নির্মূল করতে হবে। মাদক নির্মূলে সবাইকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, সাইকোথেরাপিস্ট অথবা সাইকো সোশ্যাল কাউন্সেলর এর সমন্বয়ে একটি বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি নিশ্চিত করা হয়। গত ২৬ জুন ছিল মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য- “মাদকের আগ্রাসন দৃশ্যমান, প্রতিরোধেই সমাধান” অর্থাৎ মাদকাসক্তি নিয়ন্ত্রনে প্রতিরোধের কোন বিকল্প নেই এবং এই ক্ষেত্রে ব্যাক্তির নিজের, পরিবারের, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ও সমাজের বা কমিউনিটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ১.ব্যাক্তির ক্ষেত্রে তার মানসিক ও ব্যাক্তিত্বের সুস্থ বিকাশ সাধন এর পাশাপাশি তাকে দৃঢ়তার সাথে “না” বলতে শেখার বে। নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ এর বিকাশ ঘটাতে হ দক্ষতা অর্জন করতে হবে। হবে। সুস্থ বিনোদন, সৃজনশীলতা, সাংস্কৃতিক চর্চাaa ও খেলাধুলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে মাদকাসক্তি, অপসংস্কৃতি ও সমাজের নানা অসঙ্গতির থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে। পরিবারের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্যারেন্টিং এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানের মানসিক বিকাশের জন্য সুস্থ ও আনন্দময় পারিবারিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে এবং সন্তানকে গুনগত সময় দিতে হবে। সন্তানদের আচার আচরণ ও মানসিক পরিবর্তন এর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে সেই সাথে অভিভাবকদের মাদকাসক্তি, মাদকের ধরন ও এর ব্যাবহারজনিত লক্ষণ সম্পর্কেও প্রাথমিক ধারনা রাখতে হবে। তরুণ প্রজন্মের আচরণ, মানসিক অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে। মাদক এর বিরুদ্ধে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন এর অংশ হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে মাদকের ক্ষতিকারক দিকগুলো আলোচনার পাশাপাশি সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা ও বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস এ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে হবে এবং মাদকবিরোধী কার্যক্রম এতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সামাজিক প্রতিরোধের ক্ষেত্রে প্রথমেই মাদকাসক্তি নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধি তে শুধু মাত্র সভা আলোচনায় সীমাবদ্ধ না থেকে মাদক এর শারীরিক ও মানসিক প্রভাব সম্পর্কে তথ্যসমূহ সহজভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। বুঝতে হবে যে এটি একটি মানসিক রোগ এবং মাদকাসক্তিকে অপরাধ বা নৈতিক সংকট হিসেবে না দেখে একে রোগ হিসেবে দেখতে হবে যার একটি যথাযথ চিকিৎসা প্রয়োজন। সমাজ ও পরিবারের চোখে মাদকাসক্ত ব্যাক্তি একজন অপরাধী কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য বলে মাদকাসক্ত ব্যাক্তি অপরাধী নয় বরং সে একটি অপরাধের শিকার। যারা অবৈধ ভাবে মাদক পাচার ও কেনা বেচার সাথে জড়িত তাদের অপরাধের ভিকটিম হচ্ছে একজন মাদকাসক্ত ব্যাক্তি যে বুঝে বা না বুঝে, দুর্বল মুহূর্তে বা মানসিক রোগের কারণে মাদক গ্রহণ করেছে। সুতরাং তাকে এই বিষয়ে শাস্তি না দিয়ে, একজন মাদকাসক্ত তরুণকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার না করে, কর্মক্ষেত্র থেকে অব্যহতি না দিয়ে তাকে চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসা জরুরী। মনে রাখতে হবে, ট্র্যাফিক আইন ভঙ্গ করে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে কারো হাত বা পা ভেঙ্গে গেলে আমরা কিন্তু তাকে প্রথমে জেলে পাঠাইনা, আমরা তাকে প্রথমে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠাই। ঠিক তেমনি ভাবে মাদক গ্রহণ করলেও তাকে শাস্তি না দিয়ে, তাকে জেলে না পাঠিয়ে তাকে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে হবে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা দরকার, মাদকাসক্ত ব্যাক্তি হতে পারে আমাদের পরিবারের সদস্য, আমাদের সন্তান- সে মোটেও অপরাধী নয়, তার বিচার বা শাস্তি প্রয়োজন নেই তার দরকার চিকিৎসা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এর “সমন্বিত কর্মপরিকল্পনায় অধিকাংশই উঠে এসেছে কিন্তু এব সঠিক বাস্তবায়ন হলেই মাদকাসক্তি প্রতিরোধ এ আমরা অনেকাংশে এগিয়ে যাবো। আর একটি ব্যাপার না বললেই নয় মাদকাসক্তি যেহেতু একটি ক্রনিক রিল্যান্সিং ডিজিজ অর্থাৎ এটি পুনরায় আসক্তি ঘটাতে পারে সেহেতু মাদকাসক্ত ব্যাক্তিদের যথাযথ চিকিৎসার পর সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে ও পুনঃআসক্তির ঝুঁকি দূর করতে জীবনযাপনের পদ্ধতি পরিবর্তন, পরিপূর্ণ চিকিত্সা, সামাজিক সহায়তা এবং উপযুক্ত পুনর্বাসন করা খুবই জরুরি। সর্বোপরি সরকারি-বেসরকারি উদ্যগে সমাজ পরিবার সবাই মিলেই সর্বস্তরের মানুষের সমন্বয়ে, ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পাড়ি আমরা। মাদকাসক্তি প্রতিরোধে এই আহ্বান করে আমি আজকের দিনে বলতে চাই মাদকাসক্তি কোন অপরাধ নয়, এটি একটি রোগ এবং এর প্রতিকারের জন্য শাস্তি নয়, প্রয়োজন চিকিৎসা। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন অ্যাথেনা লিমিটেড- মানসিক ও মাদকাসক্তি চিকিৎসা এবং মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্রের মেন্টাল হেলথ কাউন্সেলর নুসরাত সাবরিন চৌধুরী।
আরও উপস্থিত ছিলেন, জারা জেবিন মাহবুব এমপি, অধ্যাপক ডা. মুহিত কামাল,সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী প্রমুখ।