মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন:-মঙ্গলবার ৯ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে ,বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার এসোসিয়েশন এর উদ্যোগ,২০০০ ইনসাইডার কর্মকর্তাদের অনুকূল বিধি সংশোধন করে ২৫০০ ক্যাডার দের ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন তিনি এই কথা বলেন।
সংগঠনের আহ্বায়ক ডাঃ মোহাম্মদ নিয়ামত হোসাইন বলেন , আমরা স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন-বিধির প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল কর্মকর্তা। দেশের প্রত্যন্ত ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র পর্যন্ত পদায়ন হওয়া এই ক্যাডারের প্রায় ৩৫ হাজার কর্মকর্তা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূল মেরুদজ। ক্যাডার সার্ভিস গঠন হওয়ার পর থেকে বিগত প্রায় ৪০ বছর ধরে আমরা দেশের মানুষকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে আসছি এবং শত সীমাবদ্ধতা, বৈষম্য ও অপ্রাপ্তি স্বত্বেও আমরা দেশের জনগণকে সেবা প্রদানে কখনো পিছপা হইনি।
তিনি বলেন,বিগত কিছু বছর যাবত আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, সরকারি চাকরীবিধির গুরুতর লঙ্ঘণ ঘটিয়ে ক্যাডার পদসমুহে ভিন্ন, নিয়োগবিধির আওতায় নিয়োগপ্রাপ্ত এডহক ও প্রকল্প কর্মকর্তাদের পদায়ন ও পদোন্নতি দেয়া শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের কিছু দুষ্কৃতিকারী কর্মকর্তা। চাকরীবিধির গুরুতর লঙ্ঘন হওয়ায় আমরা লিখিতভাবে আমাদের আপত্তি জানিয়ে প্রক্রিয়া গতভাবে আগাতে থাকি। কিন্তু উক্ত শাখা সমূহের কর্মকর্তাদের অনিয়ম করা হতে থামানো যায়নি, বরঞ্চ এই অন্যায়ের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। অদ্যবধি প্রায় সহস্রাধিক ভূয়া পদোন্নতি, জনপ্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে প্রায় ৫ শতাধিক ভূয়া পদায়ন, ক্যাডার কর্মকর্তাকে এডহকদের অধীনস্ত করা ইত্যাদি চরম আকার ধারন করে। এর ফলে আমরা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে ২০২২ সালে মামলা দাখিল করতেও বাধ্য হই। মামলায় রুল জারি করা থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রনালয়ের উক্ত চিহ্নিত অনিয়মকারী শাখার কর্মকর্তাগন এডহক ও প্রকল্প কর্মকর্তাদের পক্ষে অবৈধ ও বিধিবহিভূত পদোন্নতি আদেশ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পদায়ন শাখা পুনরায় অবৈধ পদায়ন আদেশ জারি করে।
তিনি আরো বলেন,এসব অনিয়মের মাঝেই বিগত ২০২৩ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ে পরপর পাঠানো মোট ৩ টি পত্র আমাদের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় আমরা হতবাক ও বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। অসংখ্য ভুয়া তথ্য, মিথ্যা তথ্য, তথ্য গোপন ও হল চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের পার-২ শাখার তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এডহক ও প্রকল্প তথা ২০২২ সালে এনক্যাডার হওয়া কর্মকর্তাদের পক্ষে চাকরীতে পদোন্নতির জন্য সকল ধরনের পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণ মাফ করে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়কে পত্র পাঠায় এবং উক্ত পত্রসমূহেই তাদের ইতোপূর্বে দেয়া বিতর্কিত পদোন্নতি সমূহকে অবৈধ বলে স্বীকার করে নেয়। মন্ত্রনালয়ের নিজস্ব পত্রে তাদেরই করা অনিয়মসমূহ স্বীকার করে নেয়া নজীরবিহীন। সেখানে বলা হয়, যদি এডহক এনক্যাডার কর্মকর্তাদের চাকরীতে স্থায়ীকরণের জন্য ক্যাডারের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ, বিভাগীয় পরীক্ষা ইত্যাদি প্রমার্জনা না দেওয়া হয়, উক্ত প্রমার্জনার পরে পুনরায় তাদের পদোন্নতিতে পদোন্নতি পরীক্ষা হতে প্রমার্জনা না দেয়া হয় তাহলে ইতোপূর্বে প্রদেয় সকল পদোন্নতি প্রশ্নের সম্মুখীন হবে।
তিনি বলেন,২০২৩ সালে প্রথম দুইবার জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় অসম্মতি জানিয়ে প্রতি উত্তর দিলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের তৃতীয় বারের অনুরোধে তারা বিসিএস নিয়োগ বিধি সংশোধনের প্রস্তাবটি সচিব কমিটিতে প্রেরন করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অনুরোধে প্রস্তুতকৃত উক্ত সংশোধনী প্রস্তাবে এনক্যাডার হওয়া কর্মকর্তাদের পক্ষে (১) বাধ্যতামূলক বিভাগীয় পরীক্ষা (২) বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ (৩) ক্যাডারে বাধ্যতামূলক ২ বছর শিক্ষানবিশ কাল হতে প্রমাজনা (৪) ক্যাডারের ২ বছরের সন্তোষজনক চাকরীকাল, এসব প্রমার্জনার পরে পুনরায় তাদের পদোন্নতিতে (৫) সিনিয়র স্কেল হতে প্রমার্জনার অনুরোধ জানিয়ে সন্ত্রীপরিষদ সচিব বরাবর পত্র প্রেরিত হয়। এতে আমরা বাকরুদ্ধ আমরা জানতাম চাকরীতে অনিয়ম কারীকে শাস্তি দেয়া হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের উক্ত কর্মকর্তা নিজেই দোষ স্বীকার করে উল্টো অতীতের অনিয়দের প্রমার্জনা চাচ্ছেনা এটা কেমন আমার?
তিনি আরো বলেন,যেকোনো ধরনের সরকারি চাকরীজীবীদের জন্য এভাবে এতোগুল্যে প্রমার্জনার ফাইল সৃষ্টি হওয়া নজীরবিহীন এবং এ ধরনের ন্যাক্কারজনক অনিয়মের ঘটনা বাংলাদেশের প্রশাসন জগতের ইতিহাসে এই প্রথম। উল্লেখ থাকে যে, উক্ত কর্মকর্তাগণের সকলেই বিসিএস এ ফেল করেছিলেন যার প্রমান আমাদের হাতে বিদ্যমান।
তিনি বলেন,একদল চাকরীজীবী যারা তাদেরই নিয়োগবিধির শর্ত পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহন না করেই স্থায়ী হয়েছিলো, যারা তাদের সমগ্র চাকরীজীবনে কখনো কোনো পরীক্ষা বা প্রশিক্ষণ নেয়নি, যারা বিসিএস এ অকৃতকার্য হয়েও এন ক্যাডার হয়েছে, এনক্যাডারের পরে পুনরায় বিসিএস ক্যাডারের ৫ টি শর্ত হতে কেনো মাফ পাবে এবং বিসিএস পাশকৃতদের চেয়ে উপরে স্থান পাবে তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।
এসব কারনে ৩৫ হাজার ক্যাডার কর্মকর্তা ক্ষুব্ধ। আমরা আমরা মাননীয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ, সরকারি কর্মকমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরগুলোতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সকল অনিয়মসূহ লিপিবদ্ধ করে জমা দিয়েছি যার প্রাপ্তিস্বীকার পত্র আমাদের নিকট রয়েছে। সকল প্রমান থাকার পরও প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি উক্ত প্রমার্জনার জাইনে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। উক্ত ফাইলটি জনপ্রশাসন হয়ে বর্তমানে কর্মকমিশনের সুপারিশের অপেক্ষা করছে। এগুলো আমাদের স্বাস্থ্য ক্যাডারের সাথে চরমতম অন্যায়। আমরা সহল ক্যাডারকে আমাদের সাথে হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। ক্যাডারকে এডহক (নব এনক্যাডার) কর্মকর্তাদের অধীনস্ত করার রেওয়াজ কোনো আইন ও বিধিতেই সমর্থন করে না, শতভাগ অবৈধ।
তাদের দাবি সমুহ হলো,
(১)সকল ধরনের অবৈধ পদোয়তি বাতিল করতে হবে
(২)সকল ধরনের অবৈধ পদায়ন বাতিল করতে হবে,(৩) চলমান প্রমার্জনার সকল প্রক্রিয়া স্থায়ী আদেশ ভাবে বাতিল ঘোষণা করতে হবে
(৪)অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে বিধিমোতাবেক কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক ডাঃ মোহাম্মদ নিয়ামত হোসাইন, সদস্য সচিব উম্মে তানিয়া নাসরিন ,সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।