রুপসীবাংলা৭১ অন্যান্য ডেস্ক : ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। এই দিবসে আমরা স্মরণ করছি মুসলিম ইতিহাসের অবিস্মরণীয় কিছু বিজয়কে, যা ইতিহাসের বাঁক বদলে দিয়েছিল।
১. বদর যুদ্ধ : দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান মক্কার কুরাইশ বাহিনীর মুখোমুখি হয় মুসলিম বাহিনী। এটা ছিল দুই অসম প্রতিপক্ষের লড়াই।
একদিকে কুরাইশরা ছিল অস্ত্র ও রসদে সমৃদ্ধ এক হাজার যোদ্ধার এক বাহিনী, অন্যদিকে ছিল ৩১৩ যোদ্ধার ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনী। তাদের অস্ত্র, বাহন ও রসদও ছিল খুবই সীমিত। কিন্তু আল্লাহ এই যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীকে অবিস্মরণীয় বিজয় দান করেন। এই যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর ১৪ জন শহীদ হন।
বিপরীতে কুরাইশের নেতৃস্থানীয় ৭০ জন নিহত হয় এবং ৭০ জন মুসলমানের হাতে বন্দি হয়।
এই বিজয়ের মাধ্যমে মুসলমানরা আরবের উদীয়মান রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
২. মক্কা বিজয় : অষ্টম হিজরির ২০ রমজান মহানবী (সা.) তাঁর বাহিনী নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করেন। তাঁর বাহিনীতে ১০ হাজার সেনা ছিল।
মক্কা বিজয়ের দিনটি মুসলিম ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ দিনগুলোর একটি। কেননা এই দিনে পবিত্র কাবা পৌত্তলিকদের দখলমুক্ত হয় এবং সেখানে তাওহিদের বাণী সমুন্নত হয়। পাশাপাশি কুরাইশের অত্যাচারে দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া মুসলিমরা মাতৃভূমির মাটি স্পর্শ করার সুযোগ পায়।
মক্কা বিজয়ের পর আরব ভূখণ্ড ইসলাম ও মুসলমান অপ্রতিরোধ্য শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পায়। মুসলমানরা ক্ষমতার প্রাণকেন্দ্রে চলে আসে।
দলে দলে মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেয় এবং বহু গোত্র মুসলমানদের সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে আবদ্ধ হয়।
৩. বুওয়াইবের যুদ্ধ : ১৩ হিজরির ১৩ রমজান কুফার নিকটবর্তী ফুরাত নদীর তীরে মুসলিম বাহিনী মুখোমুখি হয় পারস্য সম্রাটের বাহিনীর সঙ্গে। যুদ্ধে পারস্য বাহিনী আধুনিক সব অস্ত্র ও যুদ্ধোপকরণের অধিকারী ছিল। বিপরীতে মুসলমানরা সাধারণ ঢাল-তালোয়ার ও বর্শা নিয়ে নেমেছিল। সৈন্য সংখ্যাও পারসিক বাহিনী কয়েক গুণ এগিয়ে ছিল। কিন্তু আল্লাহ মুসলমানদের বিজয় দান করেন। এই বিজয় পারস্য সাম্রাজ্যের পতন ডেকে আনে।
৪. সিন্ধু বিজয় : কিশোর সেনাপতি মুহাম্মদ বিন কাসিম হাজ্জাজ বিন ইউসুফের নির্দেশে ৭১২ খ্রিস্টাব্দে প্রায় ১২ হাজার সেনার একটি সুসজ্জিত বাহিনী নিয়ে সিন্ধু অভিযান পরিচালনা করে মুসলমানরা জয়লাভ করে। ঐতিহাসিকরা বলেন, সাধারণ নাগরিকদের ওপর রাজা দাহিরের অত্যাচার, মুসলিম নৌবহরে হামলা-লুণ্ঠন, বিধবা মুসলিম নারীদের বন্দি ও ক্ষতিপূরণ এবং বন্দিমুক্তিতে অস্বীকার, পারস্য অভিযানের মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে ভারতীয়দের সহযোগিতা ইত্যাদি কারণে এই অভিযান চালানো হয়। এই বিজয় উপমহাদেশে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার দুয়ার খুলে দেয়।
৫. স্পেন বিজয় : ৯২ হিজরি মোতাবেক ৭১১ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম সেনাপতি তারিক বিন জিয়াদ (রহ.) ১২ হাজার সেনা নিয়ে রাজা রডারিককে পরাজিত করে স্পেন জয় করেন। এর মাত্র তিন বছরের ভেতর মুসলিম বাহিনী সমগ্র আইবেরীয় উপদ্বীপ জয় করে। এরপর মুসলিমরা প্রায় আট শ বছর স্পেন শাসন করে। এই বিজয় ইউরোপকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল।
৬. হিত্তিনের যুদ্ধ : ৫৮৩ খ্রিস্টাব্দে সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবি (রহ.)-এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করে। এই বিজয়ের মাধ্যমে ৯০ বছর পর ক্রুসেডারদের দখল থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস ও শামের বিস্তৃত অঞ্চল মুক্ত হয়। এই বিজয়ের ফলে মুসলমান শত বছরের মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায় এবং ইউরোপীয় আগ্রাসী বাহিনীর নেতৃত্ব ও মনোবল দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৭. আইনে জালুতের যুদ্ধ : ১২৬০ খ্রিস্টাব্দে ফিলিস্তিনের আইনে জালুত নামক স্থানে মোঙ্গলীয় বাহিনীর সঙ্গে মুসলিম মামলুক বাহিনীর যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী বিজয় লাভ করে। মুসলিম ইতিহাসে এই বিজয় অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। কেননা মোঙ্গলীয় বাহিনীর হাতে ইতিপূর্বে বাগদাদ ও মধ্য এশিয়ার মুসলিম অঞ্চল ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছিল। মোঙ্গলীয় বাহিনীর সামনে মুসলিম বাহিনী কোনোভাবেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছিল না। অবশেষে আইনে জালুতের যুদ্ধে তারা পরাজিত হয়। বলা হয়, এই মুসলিমরা বিজয়ী না হলে সমগ্র আফ্রিকা ও আরব উপদ্বীপ মোঙ্গলীয়দের হাতে ধ্বংস হয়ে যেত।
৮. কনস্টান্টিনোপল বিজয় : উসমানীয় সুলতান মুহাম্মদ ফাতেহ ২৯ মে ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল জয় করেন। মহানবী (সা.) এই শহর বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিলেন। ফলে এই বিজয় ছিল বহুল প্রত্যাশিত। এই বিজয়ের মাধ্যমে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের পতন চূড়ান্ত হয়েছিল এবং এশিয়া-ইউরোপে উসমানীয়রা অপ্রতিরোধ্য রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠেছিল। এশিয়া-ইউরোপের সামুদ্রিক বাণিজ্য পথের ওপর মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়।
তথ্যঋণ : আলজাজিরা, মুসলিম হিস্টোরি ডটকম ও উইকিপিডিয়া
রুপসীবাংলা৭১/এআর

