রুপসীবাংলা৭১ অন্যান্য ডেস্ক : যত দিন যাচ্ছে, ততই যেন পৃথিবীটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। মানুষের নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে যাচ্ছে। উঠে যাচ্ছে মায়া-মমতা। স্বার্থের নেশায় মানুষ হায়েনাদের হার মানাচ্ছে।
বর্বরতার সব সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আবু জাহাল, আবু লাহাবের ভূত যেন মানুষের ঘাড়ে চেপে বসেছে।
এ রকম পরিস্থিতির ব্যাপারে মহানবী (সা.) তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন। হাদিস শরিফে এসেছে, শাকিক (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ও আবু মুসা (রা.)-এর সঙ্গে ছিলাম।
তাঁরা বলেন, বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, অবশ্যই কিয়ামতের আগে এমন একটি সময় আসবে যখন সব জায়গায় মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে এবং ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে। সে সময় ‘হারজ’ বর্ধিত হবে। আর ‘হারজ’ হলো (মানুষ) হত্যা। (বুখারি, হাদিস : ৭০৬২)
সেই যুগ এতটাই ভয়াবহ হবে যে তখন আপন মানুষও নিরাপদ হবে না।
বিশ্বস্ততার মুখোশে বহু কাছের মানুষ মানুষের বিপদের কারণ হবে। সে কঠিন সময়ে মুমিনের কর্মপন্থা কী হবে, সে ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন মহানবী (সা.)। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, অতঃপর তিনি আবু বাকরাহ বর্ণিত হাদিসের অংশবিশেষ বর্ণনা করে বলেন, ওই ফিতনায় নিহত সব লোকই জাহান্নামি হবে। তিনি তাতে বলেন, আমি বললাম, হে ইবনে মাসউদ, ওই পরিস্থিতি কখন হবে? তিনি বলেন, সেই মারামারির যুগে কোনো ব্যক্তি তার বন্ধুর কাছেও নিরাপদ থাকবে না। আমি বললাম, সেই যুগ যদি আমাকে পেয়ে বসে, তাহলে আমাকে কী করতে আদেশ করেন? তিনি বলেন, তোমার জিহ্বা নিয়ন্ত্রণে রাখবে, হাত গুটিয়ে রাখবে আর তুমি তোমার ঘরের বাইরে বের হবে না।
অতঃপর যখন উসমান (রা.) শহীদ হলেন, তখন আমার ফিতনার কথা স্মরণ হলো। সুতরাং আমি দামেস্কে চলে এলাম এবং খুরাইম ইবনে ফাতিক (রা.)-এর সাক্ষাতে এ হাদিস বর্ণনা করলাম। তিনি যেই সত্তা ছাড়া কোনো উপাস্য নেই সেই আল্লাহর কসম করে বলেন, আমি তাঁর কাছে ইবনে মাসউদের যে হাদিস বর্ণনা করেছি, অনুরূপ হাদিস তিনিও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে শুনেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪২৫৮)
অন্য আরেকটি হাদিসে সেই যুগের বর্বরতা, মূর্খতা ও নৈরাজ্যের চিত্র আরো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আবু মুসা আল-আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের বলেন, কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে ‘হারজ’ হবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, ‘হারজ’ কী? তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ব্যাপকতা। কতক মুসলমান বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা এখন এই এক বছরে এত মুশরিককে হত্যা করেছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তা মুশরিকদের হত্যা করা নয়; বরং তোমরা পরস্পরকে হত্যা করবে, এমনকি কোনো ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে, চাচাতো ভাইকে এবং নিকট আত্মীয়-স্বজনকে পর্যন্ত হত্যা করবে। কতক লোক বলল, হে আল্লাহর রাসুল, তখন কি আমাদের বিবেক-বুদ্ধি লোপ পাবে? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, অধিকাংশ লোকের জ্ঞান লোপ পাবে এবং অবশিষ্ট থাকবে নির্বোধ ও মূর্খ। অতঃপর আবু মুসা আল-আশআরি (রা.) বলেন, আল্লাহর শপথ, আমি ধারণা করেছিলাম যে হয়তো এ যুগ যদি তোমাদের ও আমাকে পেত, তাহলে তা থেকে আমার ও তোমাদের বের হয়ে আসা মুশকিল হয়ে যেত; যেমন—নবী (সা.) আমাদের জোর দিয়ে বলেছিলেন যে আমরা ওই অনাচারে যত সহজে জড়িয়ে পড়ব তা থেকে আমাদের নিষ্ক্রমণ ততোধিক দুষ্কর হবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৯৫৯)
এই হাদিসগুলো দ্বারা বোঝা যায়, ফিতনার সেই যুগে মানুষ খুব বেশি বেপরোয়া হয়ে পড়বে, মূর্খতা ও সীমালঙ্ঘন তাদের এতটা পশু বানিয়ে দেবে যে তারা কোনো কারণ ছাড়াই খুনখারাবিতে জড়িয়ে পড়বে। তাই প্রতিটি মুমিনের উচিত, যেকোনো ধরনের ফিতনা থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা, নিজেদের জিহ্বার হেফাজত করা, যেকোনো ধরনের ঝগড়াঝাঁটি ইত্যাদি এড়িয়ে চলা। নিজেকে ও নিজের আপনজনদের কোরআন-হাদিস মোতাবেক জীবন পরিচালিত করতে উদ্বুদ্ধ করা, মানুষকে বেশি বেশি দ্বিনের দাওয়াত দেওয়া। কারণ মানুষ যত বেশি দ্বিনবিমুখ হবে, সমাজে তত অস্থিরতা বাড়বে, মানুষকে তত বেশি মূর্খতা ভর করবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সব ধরনের ফিতনা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
রুপসীবাংলা৭১/এআর

