রুপসীবাংলা৭১ ক্রীড়া ডেস্ক : ক্রিকেট নাকি ভদ্রলোকের খেলা। কিন্তু দুবাইয়ে এশিয়া কাপ ফাইনালের রাত যেন উল্টো প্রমাণ হয়ে দাঁড়াল। মাঠে ভারত জিতল, পাকিস্তান হারল; কিন্তু শেষ বাঁশি বাজতেই খেলার আঙিনায় নেমে এলো রাজনীতির বিষাক্ত ছায়া। ইতিহাসে সম্ভবত প্রথমবারের মতো বিজয়ী দল হাতে পেল না শিরোপা। কারণ, ভারতীয় ক্রিকেটাররা প্রকাশ্যে অস্বীকৃতি জানালেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) ও এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সভাপতি মোহসীন নাকভির কাছ থেকে ট্রফি নিতে।
ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে নবমবারের মতো শিরোপা নিশ্চিত করেছিল ভারত। স্টেডিয়ামের দর্শকরা অপেক্ষায় ছিলেন চূড়ান্ত মুহূর্তটির জন্য- অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের হাতে উঠবে ঝলমলে ট্রফি। কিন্তু মঞ্চে অপেক্ষমাণ নাকভির দিকে ফিরেও তাকালেন না ভারতীয় ক্রিকেটাররা। বিকল্প হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এমিরেটস ক্রিকেট বোর্ডের সহ-সভাপতি খালিদ আল জরউনি, যিনি অনায়াসে দায়িত্ব নিতে পারতেন। কিন্তু নাকভি একগুঁয়েভাবে ট্রফি নিজেই দিতে চাইলেন।
আরো পড়ুন:
নাকভি নিয়ে গেলেন এশিয়া কাপ ট্রফি, ভারতের কল্পিত উদযাপন
নাকভি নিয়ে গেলেন এশিয়া কাপ ট্রফি, ভারতের কল্পিত উদযাপন
রোমাঞ্চকর ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে ভারত অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন
রোমাঞ্চকর ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে ভারত অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন
ঘণ্টাব্যাপী টানাপোড়েন শেষে যা ঘটল, তা ক্রিকেটের জন্য এক লজ্জাজনক দৃষ্টান্ত- ট্রফি সরিয়ে নেওয়া হলো ব্যাকস্টেজে, বিজয়ী ভারতীয়রা ফিরলেন খালি হাতে।
আসলে টুর্নামেন্টজুড়েই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে ফুটে উঠেছে কদর্য বৈরিতা। টসের সময় থেকে ম্যাচের শেষে পর্যন্ত দুই দলের খেলোয়াড়দের হাত মেলাতে অস্বীকৃতি, পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের উসকানিমূলক অঙ্গভঙ্গি, ভারতের দিক থেকে রাজনৈতিক বার্তা- সব মিলিয়ে মাঠের লড়াই ছাপিয়ে গেছে রাজনীতির হিসাব-নিকাশ।
পেহেলগাম হামলার জের টেনে ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমারের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে নাকভি নিজেই আইসিসিতে অভিযোগ তুলেছিলেন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি পোস্ট করেছিলেন ‘বিমান ভূপাতিত’ করার ভঙ্গির ভিডিও। যা পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর দাবির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। এমন এক ব্যক্তির হাত থেকে ট্রফি নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ভারত আসলে ক্রিকেটকে নয়, রাজনীতিকেই বড় করে তুলল।
ফাইনাল শেষে দর্শকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। কেউ দুয়ো দেন, কেউ স্লোগান তোলেন। পাকিস্তানি দল ততক্ষণে ড্রেসিংরুমে আশ্রয় নিয়েছে। আর মঞ্চে দাঁড়িয়ে একা হয়ে পড়েন নাকভি। যেটি হওয়ার কথা ছিল গৌরবময় শিরোপা মঞ্চ, সেটিই রূপ নিল রাজনৈতিক তামাশায়।
এশিয়া কাপ ২০২৫ তাই মনে থাকবে ক্রিকেটের রেকর্ড, পরিসংখ্যানের জন্য নয়, বরং কদর্য রাজনৈতিক ছায়ায় ঢেকে যাওয়া এক রাতের জন্য। ভারত জিতলেও উদযাপন হলো না; আর ক্রিকেট, সেই ভদ্রলোকের খেলা, রাজনীতির নোংরা ছোঁয়ায় আবারও হার মানল।
রুপসীবাংলা৭১/এআর

