নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সমাজ বদলের লক্ষ্যে শোষণ-বৈষম্যবিরোধী বাম গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা কর এই স্লোগানকে ধারণ করে সিপিবির কংগ্রেস গতকাল ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। আজ রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে কংগ্রেসসের দ্বিতীয় দিনে কাউন্সিল অধিবেশন চলছে। আজ কংগ্রেসের বিভিন্ন অধিবেশন চলছে। কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্ট কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে উত্থাপন করেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স।
কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্টে বলা হয়, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ৫৪ বছর পেরিয়ে গেছে। এ সময়কালে ১৯৯০ ও ২০২৪-এ অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থান সংগঠিত হলেও দেশের মানুষের মুক্তি আসেনি। গণতন্ত্র ও বৈষম্যমুক্তি এবং মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার বিপরীতমুখী অবস্থানে দেশ চলছে। দীর্ঘদিন ধরে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি আর মুক্তবাজারের নামে পুঁজিবাদী অর্থনীতির লুটপাটের ধারায় দেশ চলছে। এর মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংকট। এ সংকট উত্তরণে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের সংগ্রামের মধ্যে মানুষের দিন পার হলেও মুক্তি আসেনি। রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনে সংকট নানাভাবে তীব্র হয়ে উঠছে। মানুষের হতাশা বাড়ছে। শ্রমিক, ক্ষেতমজুর, কৃষক, মেহনতি খেটেখাওয়া মানুষ, নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তের জীবন চালাতে নাভিশ্বাস উঠছে। দিন দিন এই সংকট নানা মাত্রায় গভীর হয়ে উঠছে।’

কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্টে বলা হয়, ‘পুরো ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া মুক্তি সম্ভব না এবং এজন্য প্রয়োজন বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তির উত্থান। দেশ ও বিশ্ব পরিস্থিতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়ন মানুষকে-মুক্তি দিতে পারে না। সমাজতন্ত্রই মুক্তির পথ। এজন্য গণভিত্তিসম্পন্ন পার্টি গড়ে তোলা, শ্রেণি সংগ্রাম, বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল ঐক্য, শ্রেণি-পেশার মেহনতি মানুষের ঐক্য গড়ে তোলার কর্তব্যকে সামনে রেখে চলমান সংগ্রাম, গণতন্ত্রের সংগ্রামে আমরা শামিল হতে হবে।’
কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্টে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি বিশ্ব রাজনীতি তথা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ফলে এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক অবস্থান বাংলাদেশকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বর্তমান দক্ষিণ এশিয়া অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং মনোযোগের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে, দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, অত্র অঞ্চলের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং দক্ষিণ এশিয়াকে ঘিরে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তথা ন্যাটোর এশিয়া নীতি, ইন্দো-প্যাসিফিক স্টট্র্যাটেজি, কোয়াড ইত্যাদি সামরিক কৌশলগত ভূমিকার কারণে এ অঞ্চলে সাম্রাজ্যবাদ এবং তাদের আঞ্চলিক সহযোগীদের অপতৎপরতা আগের চেয়ে বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি প্রধানত ভারত-পাকিস্তান সামরিক উত্তেজনা এবং চীন-ভারত দ্বন্দ্বকে ঘিরেই আবর্তিত হতে থাকে। এর সঙ্গে গত কয়েক দশক ধরে যুক্ত হয়েছে মায়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট এবং একে ঘিরে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে নাসাকা বাহিনী, আরসা, এবং আরাকান আর্মির নাশকতামূলক তৎপরতা। যা বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে নিপতিত করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ-এর গুলিতে বারবার মানুষ হত্যা, ভারতের পানি নীতি, আগ্রাসী বাণিজ্য নীতি, সাম্প্রদায়িক উসকানি এ অঞ্চলের রাজনীতিকে অস্থির করে রেখেছে।’
কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্টে বলা হয়, ‘বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এক বহুমাত্রিক এবং জটিল সমীকরণের দ্বারপ্রান্তে এসে উপনীত হয়েছে। বিশ্ব রাজনীতির ক্ষমতাকেন্দ্রের গতিমুখ এবং ভারকেন্দ্রের পরিবর্তন, বিশ্ব পুঁজিবাদের অন্তর্নিহিত সংকট, পারমানবিক যুদ্ধের হুমকি, চলমান সামরিক সংঘাত, তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতি এবং ক্রমবর্ধমান জলবায়ু সংকট গোটা বিশ্বকে এক বিরাট চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়েছে। পুঁজিবাদী বিশ্বায়নের এ কালপর্বে সারা দুনিয়ায় অনেক আমলযোগ্য ঘটনাবলি দুনিয়ার শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রামের সামনে এসে হাজির হয়েছে। যা আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলন তথা সর্বহারার আন্তর্জাতিকতাবাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হাজির করেছে’।
কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্টে আরও বলা হয় ‘সব কাজের মধ্যে মনে রাখতে হবে আমাদের প্রধান কাজ হলো-সামজ বদলের লক্ষ্যে শোষণ-বৈষম্যমুক্ত সাজ গড়তে বাম গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। এই সংগ্রামে বাম প্রগতিশীল অবস্থান সুনির্দিষ্ট করে ব্যবস্থা বদলের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নিয়ে বিকল্প শক্তি-সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে। এজন্য বাম গণতান্ত্রিক জোটের বাইরে অপরাপর বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে বৃহত্তর শক্তি-সমাবেশ গড়ে তুলতে পার্টি তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। মানুষ বামপন্থী বিকল্প শক্তি-সমাবেশের প্রতি যাতে আরও আস্থাভাজন হয়ে উঠতে পারে, সেজন্য আমাদের দৃশ্যমান কার্যক্রম, আন্দোলন-সংগ্রাম জোরদার করতে হবে।’
আজ সারাদিন কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্টে এর উপর আলোচনা চলছে। বিভিন্ন জেলার অন্তত: ৪৪ জন প্রতিনিধি ইতোমধ্যে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। এসব আলোচনায় জেলার সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে করনীয় বিষয় তাদের অভিমত তুলে ধরেন। আজ সংযোজন বিয়োজনসহ এই রিপোর্ট অনুমোদন করা হবে।
এছাড়াও কংগ্রেসের ১ম অধিবেশনে বিভিন্ন কমিটি নির্বাচন করা হয়।

কংগ্রেসের সভাপতিমন্ডলী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন
১. কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম,২. কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ৩. কমরেড শাহাদাৎ হোসেন, ৪. কমরেড লক্ষ্মী চক্রবর্তী
৫. কমরেড এম এম আকাশ, ৬. কমরেড ডা. দিবালোক সিংহ, ৭. কমরেড এমদাদুল হক মিল্লাত, ৮. কমরেড মনোজ দাস, ৯. কমরেড অশোক সাহা
অডিট কমিটি
১. শেখ হান্নান, ২. শেখ বাহার উদ্দিন মজুমদার, ৩. শিবনাথ চক্রবর্তী, ৪. শহীদউদ্দিন বাবুল, ৫. অধ্যাপক দুলাল মজুমদার, ৬. সমীর কুমার কর্মকার
৭. আলতাফ হোসেন, ৮. ফরহাদ হোসেন, ৯. কোহিনূর বেগম।
প্রস্তাব বাছাই কমিটি
১. আলতাফ হোসাইন, ২. গোকুল সূত্রধর মানিকদ, ৩. জুলফিকার আহমেদ গোলাপ, ৪. চিত্ত রঞ্জন তালুকদার, ৫. নূরুচ্ছাফা ভূঁইয়া
৬. প্রকৌশলী রাশেদুল হাসান রিপন, ৭. ইদ্রিস আলী, ৮. মুরাদজামান রব্বানী, ৯. সুব্রতা রায়, ১০. মোশতাক আহমেদ, ১১. সৈয়দ জামান
১২. কানাই দাস, ১৩. খোরশেদুন নাহার ভূইয়া
ক্রেডেনশিয়াল কমিটি
১. মোঃ জাহাঙ্গীর, ২. ফররুখ হাসান জুয়েল, ৩. বিকাশ দেব, ৪. এম এ শাহীন, ৫. এজাজ আহমেদ, ৬. হাছান আলী, ৭. মোস্তফা নুরুল আমীন
৮. সুশান্ত ভাওয়াল, ৯. শাহানা আক্তার শাপলা।
কংগ্রেসের স্পোকস পারসন
১. রুহিন হাসান প্রিন্স
২. মিহির ঘোষ
৩. লাকী আক্তার
আজ বিএমএ মিলনায়তনে সংবাদ ব্রিফিং অনুষ্ঠানে ব্রিফিং করেন কংগ্রেসের মুখপাত্র কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স, কমরেড মিহির ঘোষ এবং মিডিয়া উপপরিষদের আহবায়ক লাকী আক্তার।

