রুপসীবাংলা প্রতিবেদক : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, “ভজঘটভাবে দেশ চলছে। কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না, কে দেশ চালাচ্ছে। সরকারের মধ্যে আরেকটি সরকার আছে। সেই সরকারই নাকি দেশ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সরকারি দলও নাকি অনেকগুলো দাঁড়িয়ে গেছে, সেই দলগুলো নাকি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কোন নিবন্ধন নেই, এমন সরকারি দলের কিছু অংশ সরকারে আছে আর কিছু অংশ বাইরে আছে। সরকারি দলের সকল সুযোগ সুবিধা তারা ভোগ করছে, তাদের বক্তব্য ও বিবৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে সরকার গ্রহণ করছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলাম এই বড় দুইটি দল আছে, যারাও সরকারি দলের মতোই সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। আরো ছোট ছোট কিছু দল আছে, যারা কোনদিন নির্বাচনই করেননি অথবা নির্বাচিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন দায়িত্ব পালন করেননি, তারাও কিন্তু সরকারি দলের সুযোগ সুবিধা লাভ করছে।”
শনিবার (২৩ আগস্ট) দলের চেয়ারম্যান মোহম্মদ কাদেরের নেতৃত্বে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে জাতীয় পার্টি। মিছিলপূর্ব সমাবেশে জিএম কাদের এসব কথা বলেন।নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও আটককৃতদের মুক্তির দাবিতে শনিবার বিকেলে কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বর থেকে মিছিল বের করে জাতীয় পার্টি। মিছিলটি বিজয়নগর, পল্টন হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
জিএম কাদের বলেন, “সরকারি দলের সবাই একজোট হয়ে নির্বাচন করবেন, কিন্তু এর বাইরে যে দলগুলো আছে তারা নির্বাচন করতে পারবে কি পারবে না তা নিয়ে রহস্য আছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এসব দলগুলো কি বাংলাদেশের সব মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে? দেশে কি কোন বিরোধীদল বা বিরোধী কণ্ঠস্বর দরকার নেই? বেশিরভাগ মানুষই কি এই কয়েকটি দলের সমর্থক? সবাই কি এই দলগুলোকেই ভোট দেবে? দেশের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ তথা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ এই সরকারের কর্মকাণ্ডের বিরোধী।”
দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর একমাত্র মুখপাত্র জাতীয় পার্টি মন্তব্য করে দলটির চেয়ারম্যান বলেন, “জাতীয় পার্টি এ দায়িত্ব পালন করে যাবে। আর এ কারণেই জাতীয় পার্টির ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন চলছে। বিগত সরকার জাতীয় পার্টির সাথে যে ষড়যন্ত্র করেছে, এই সরকারও ঠিক সেই ষড়যন্ত্রই করছে। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। শুধু আমাকে নয়, জাতীয় পার্টির অনেক নেতাকর্মীর নামে মামলা দেওয়া হচ্ছে। বাদী, আইনজীবী ও বিচারকও জানে মামলাগুলি মিথ্যা, কিন্তু, মিথ্যা মামলা বন্ধ বা প্রত্যাহার হচ্ছে না।”
“আমাদের সাবেক এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু এবং মোহাম্মদপুরের জাতীয় পার্টি নেতা সেলিম প্রায় ১ বছর ধরে হাজতবাস করছে। তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিদিন আমাদের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। কারণ, সরকার জাতীয় পার্টির কণ্ঠরোধ করতে চাচ্ছে।”
বর্তমান সরকার বিরোধী কণ্ঠস্বর সহ্য করতে পারে না মন্তব্য করে জিএম কাদের বলেন, “আপনারা নাকি ফ্যাসিবাদ দমন করেছেন, গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন? আপনারা তো শেখ হাসিনার মতো একই কাজ করছেন। আমাদের মধ্যে কিছু দালাল শ্রেণির নেতাদের সুযোগ সুবিধা দিয়ে শেখ হাসিনা বিভাজন সৃষ্টি করে, আমাদের ব্ল্যাকমেইল করতে চেয়েছিল। বর্তমান সরকারতো একই কাজ করছেন। মনে রাখবেন দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখন সরকারবিরোধী। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ জাতীয় পার্টিকেই তাদের কণ্ঠস্বর মনে করছে। বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপনাদের পরাজিত করবে।”তিনি বলেন, “আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, যে পতাকা আপনি দিয়েছেন তা যেন শক্ত করে ধরে রাখতে পারি, সেই সক্ষমতা আপনি আমাদের দিন।”
সরকার এক ধরনের রাজনীতি চাচ্ছে অভিযোগ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, “যেখানে বিরোধী কণ্ঠস্বর থাকবে না, তাহলে শেখ হাসিনা কি দোষ করেছিলেন? শেখ হাসিনা যদি ফ্যাসিবাদ কায়েম করে তাহলে আপনারা কি কায়েম করেছেন? আপনারাও ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছেন, বর্তমান সরকার হচ্ছে নব্য ফ্যাসিবাদ।”
এই সরকার নিজস্ব স্টাইলে নির্বাচন করতে চাচ্ছে মন্তব্য করে গোলাম কাদের বলেন, “আমরা মনে করি, এই সরকারের নির্বাচন করার সক্ষমতা নেই। এই সরকার নির্বাচন পরিচালনার জন্য উপযুক্ত নয়। কারণ, এই সরকার প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ সকল বিভাগের মনোবল ভেঙে দিয়েছে। অনেককেই মামলা দিয়ে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। যে পদগুলো খালি হচ্ছে সেখানে নিজস্ব লোকজন নিয়োগ দিয়ে দলীয়করণ করছে। মনোবলহীন ফোর্স দিয়ে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সঠিক নির্বাচন দেওয়ার ইচ্ছা কি এই সরকারের আছে? অবাধ নির্বাচন করতে চাইলে সবাইকেই নির্বাচনে অংশ নিতে দিতে হবে।”
“যদি, তথাকথিত সরকারি দলগুলোকেই নির্বাচন করতে দেওয়া হয়, তাহলে তো এই সরকার নিরপেক্ষ হলো না। সরকারি দলে যারা আছে, তাদের শুধু পুলিশ নয়, আর্মি দিয়ে প্রটেকশন দেওয়া হচ্ছে। এভাবে কি নিরপেক্ষ নির্বাচন দেওয়া সম্ভব?”
কাদের বলেন, “আমরা কোনো সময় ফ্যাসিবাদের দোসর ছিলাম না। আমরা সবসময় জনগণের দল ছিলাম, জনগণের দল থাকব। সরকার পরিবর্তন হলেই আগের সরকারের সবাইকে নির্যাতন করে জেলে পাঠানো হয়, এই কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।তা নাহলে কেউই স্বাভাবিকভাবে পদত্যাগ করতে পারবে না। কেউ দোষ করলে তাকে স্বাভাবিক পন্থায় আইনের আওতায় আনতে হবে।”
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টি মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, এমরান হোসেন মিয়া, এইচ এম শাহরিয়ার আসিফ, প্রফেসর মহসিনুল ইসলাম হাবুল, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, মেহেরুন্নেসা খান হেনা পন্নি, মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ, মো. খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তি, আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম মহাসচিব সামছুল হক, জুবের আলম খান রবিন, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী অর্ণব, তাতী পার্টির সদস্য সচিব মোক্তার হোসেন, ওলামা পার্টির সদস্য সচিব মুফতি ফিরোজ শাহ, কৃষক পার্টির সদস্য সচিব আব্দুস কুদ্দুস মানিক, সাংস্কৃতিক পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুক সুজন, ছাত্র সমাজ এর যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল রেজা প্রমুখ।
জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিরুর সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের, মনিরুল ইসলাম মিলন, ইকবাল হোসেন তাপস, বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ উদদীন, আলহাজ আবু তাহের, আজমল হোসেন লেবু, নুরুন নাহার বেগম, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. নুরুল আজহার শামীম, প্রফেসর ড. গোলাম মোস্তফা, জাহিদ হাসান, ভাইস চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম সরু চৌধুরী, আমির উদ্দিন আহমেদ ডালু, এমএ সোবহান, আখতার হোসেন দেওয়ান, আব্দুল হামিদ ভাষানী, হুমায়ুন খান, যুগ্ম মহাসচিব আমির হোসেন ভূঁইয়া, সালাহ উদ্দিন খোকা মোল্লা, শামীম আহমেদ রিজভী, দ্বীন ইসলাম শেখ, হেলাল উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক নির্মল দাস, সাইফুল ইসলাম, আনিস উর রহমান খোকন, কাজী আবুল খায়ের, এমএ হান্নান, মীর সামছুর আলম লিপটন, আজহারুল ইসলাম সরকার, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মাহমুদ আলম, হাফেজ ক্বারী ইসারুহুল্লাহ আসিফ, এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জাকির হোসেন মৃধা, বাহাদুর ইসলাম ইমতিয়াজ, মামুনুর রহিম সুমন, এসএম রহমান পারভেজ, শেখ সারোয়ার, শেখ আবু ওয়াহাব, সমরেশ মণ্ডল মানিক, শেখ হুমায়ুন কবির শাওন, আব্দুর রশিদ, জুবায়ের আহমেদ প্রমুখ।
রুপসীবাংলা ৭১/এআর