মঞ্জুর: রাজধানীর বেইলি রোডের শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে শুরু হয়েছে পার্বত্য মেলা। বুধবার এ মেলার উদ্বোধন করা হয়, চলবে আগামী শনিবার পর্যন্ত। কমপ্লেক্সের মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত ‘পার্বত্য মেলা-২০২৪’এর উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। পার্বত্য চট্টগ্রামের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য দেশ ও বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ মেলার আয়োজন করেছে। মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। পার্বত্য ৩ জেলার ২৭৫ জন শিল্পীর ঐতিহ্যবাহী পরিবেশনায় প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছে। চার দিনব্যাপী এ পার্বত্য মেলায় ৯৭টি স্টল বরাদ্দ রয়েছে। মেলার স্টলে তিন পার্বত্য জেলায় উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্য, হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী কোমরতাঁতে বোনা পণ্য, ঐতিহ্যবাহী পার্বত্য খাবার প্রদর্শন ও বিক্রি চলছে। অনুষ্ঠানে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির আলোকে এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন করেছে। সরকার এ অঞ্চলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো, মোবাইল নেটওয়ার্কসহ সব খাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বলেন, পার্বত্য জেলাগুলোর নৈসর্গিক সৌন্দর্য সমুন্নত রাখা ও পর্যটনশিল্পের প্রসারেও সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকারের সময়োচিত উদ্যোগ গ্রহণের ফলে পার্বত্য জেলাগুলো আজ কোনো পিছিয়ে পড়া জনপদ নয়। দেশের সার্বিক অগ্রযাত্রায় এ অঞ্চলের জনগণ সম–অংশীদার। তিনি বলেন, তিন পার্বত্য জেলায় উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্য, হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী কোমরতাঁতে বোনা পণ্য, বিভিন্ন মৌসুমি ফল, ঐতিহ্যবাহী পার্বত্য খাবার মেলার আকর্ষণকে অধিকতর বাড়িয়ে তুলেছে। পার্বত্য মেলার মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর প্রচার ও বিপণনের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা এখানে তুলে ধরা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, যোগ্য নেতৃত্ব আর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলেই পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে চলা ভ্রাতৃঘাতী রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটে। পার্বত্য শান্তিচুক্তির ফসল হিসেবে গত ২৬ বছরে বৃহত্তর পার্বত্য অঞ্চলের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা আরও বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন সম্প্রদায় আছে, যারা সংস্কৃতিমনস্ক সৃজনশীল কাজের প্রতি অনুরাগী। এই মেলার মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চিত্র ফুটে ওঠেছে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রায় সব ধরনের ফল ও অন্যান্য ফসলাদি প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হচ্ছে। পার্বত্য এলাকা এখন পরিণত হয়েছে সম্পদের ভান্ডারে। এর আগে প্রধান অতিথি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ফিতা কেটে, পায়রা ও বেলুন ওড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। তিনি পরে অতিথিদের নিয়ে মেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখেন এবং স্টলের কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
আরও উপস্থিত ছিলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কীত স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মশিউর রহমান এনডিসি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা প্রমুখ।