নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ঢাকা শহরের পরিবেশ দূষণ বিষয়ে বিগত নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লিখিত রাজনৈতিক দলসমূহের পরিবেশ বিষয়ক অঙ্গীকারগুলো কিভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে, সেই বিষয়ে আলোচনা ও সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে আজ ২৮ জানুয়ারী ২০২৪ রবিবার বিকাল ০৩:০০ টায় রাজধানীর গ্র্যান্ড মহল হোটেলের কনফারেন্স হলে বুড়িগঙ্গা নদী মোর্চা ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে বুড়িগঙ্গা নদীপাড়ের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট প্রকল্প সমন্বয়কারী সৈয়দ তাপস এর সঞ্চালনায় আলোচক হিসাবে অংশগ্রহণ করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একোয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ আলী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাকিলা পারভিন, রিভার বাংলা পত্রিকার সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ ও কপিলমুনি কলেজের সহকারী অধ্যাপক বিষ্ণু পদ মণ্ডল, বুড়িগঙ্গা নদী মোর্চার সদস্যগণ, মোর্চার কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ।
সভায় উম্মে সালমা, জাহাঙ্গীর আদেল, ইশরাত জাহান লতা, জিয়াসমিন আক্তার, মোহাম্মদ সেলিমসহ বুড়িগঙ্গা নদী মোর্চার সদস্য, নদি পাড়ের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আলোচক নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে নদ-নদী ও পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে আসছি। ইতিমধ্যেই আমরা পরিবেশ সংক্রান্ত দাবিগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরেছি। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে কিছু দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনায় তার কিছু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমরা আশা করছি এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমাদের কিছু দাবি বাস্তবায়িত হবে।”
মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, “আমরা আসলে নদীকে ডাস্টবিন মনে করি সুতরাং আমরা যে প্লাস্টিকের বিভিন্ন পণ্য ব্যবহার করি সেগুলো আসলে নদীতেই ফেলা হয়। সে কারণে আজ আমাদের আশপাশের নদী মৃতপ্রায় এবং নদীর উপনির্ভরশীল মানুষগুলো আজ তাদের পেশা বদলে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। তাই আমাদের উচিত নদী রক্ষা করা এবং নদীর সাথে সম্পর্কিত মানুষদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করা”।ফয়সাল আহমেদ প্লাস্টিক বর্জ্যের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে প্লাস্টিকের কাপে চা না খাওয়া ও প্লাস্টিক ব্যবহার বর্জনের জন্য সকলকে আহ্বান জানান।সাকিলা পারভিন বলেন, “নদী, পরিবেশ এবং প্রকৃতি রক্ষার্থে আমাদের গ্রামের মানুষের অবদান অনস্বীকার্য। নদী পাড়ের মানুষ প্রকৃতির সাথে বসবাস করে। তাদের জন্য আমাদেরকে একসাথে মিলে নদী রক্ষার্থে কাজ করতে হবে”।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশে অংশগ্রহণকারী স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ পরিবেশ বিষয়ক অঙ্গীকার ও সুপারিশসমূহ কিভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে এই বিষয়ে দলগত আলোচনা ও সুপারিশ প্রণয়ন করেন। সুপারিশে পরিবেশ রক্ষার কাজে সঠিক ও কার্যকারী মনিটরিং/তদারকির ব্যবস্থা, রাজনৈতিক প্রচারণা, ধর্মীয় আলোচনা ও সামাজিক অনুষ্ঠানে উচ্চ শব্দে মাইকের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কে বিচারিক ক্ষমতা প্রদান ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, দূষণ প্রতিরোধে আইনের সঠিক বাস্তবায়ন, পরিবেশ রক্ষার জন্য স্থানীয়ভাবে কমিটি গঠন, জাতীয় বাজেটে পরিবেশ সুরক্ষা ও গবেষণার বিষয়ে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা, মেয়াদ উত্তীর্ণ যানবাহনের চলাচল ও পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ কলকারখানা বন্ধ করা, পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করতে বিভিন্ন ভাবে প্রচার প্রচারণা চালানো, সরকারি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় পরিবেশের গুরুত্ব যথাযথভাবে বিবেচনা করা, পরিবেশ দূষণের সাথে সংশ্লিষ্টদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া, নদী, বায়ু ও পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদেরকে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনে প্রবেশের সুযোগ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।