নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাঙামাটি শহরের বনরূপা বাজার এলাকায় সেটলার বাঙালিরা সমাবেশের নামে বিনা উস্কানিতে এক পাহাড়ি যুবকের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম।
আজ সোমবার (১২ মে ২০২৫) পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি কণিকা দেওয়ান, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অমল ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি জিকো ত্রিপুরা সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক যুক্ত বিবৃতিতে এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে চার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, আজ সকালে সেটলার বাঙালিরা রাঙাামটি শহরে “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে ইউপিডিএফের পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘স্বায়ত্তশাসন’ প্রস্তাবের” প্রতিবাদের নামে এক সমাবেশের আয়োজন করে। এতে সেটলার সর্দার কাজী মুজিবুর রহমান পাহাড়িদের বিরুদ্ধে নানা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেন এবং অস্ত্র হাতে তুলে নেয়ারও হুমকি প্রদান করেন। সমাবেশ চলাকালে বনরূপা বাজার এলাকায় সেটলার বাঙালিরা বিনা উস্কানিতে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড’র রাঙাামটি এরিয়া বিক্রয় প্রতিনিধি প্রান্তর চাকমা নামে এক পাহাড়ি যুবকের ওপর হামলা চালায় ও তাঁর পরনের কাপড়-চোপড় ছিঁড়ে ফেলে এবং কিল-ঘুষি দিয়ে তাঁকে মাটিতে ফেলে দেয়। এ সময় সেটলাররা তাঁর সাথে থাকা একটি মোবাইল ও কোম্পানির মালামাল বিক্রয়ের নগদ ৪৩ হাজার টাকাসহ পকেট খরচের জন্য রাখা সকল টাকাও কেড়ে নেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নেতৃবৃন্দ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পাহাড়িদের প্রতিনিয়ত উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় একটি বিশেষ মহল ‘পাহাড়িরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়” এমন জিগির তুলে সেটলার বাঙালিদের লেলিয়ে দিয়ে উগ্র সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়িয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত তারা সেটলার বাঙালিদেরকে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে উস্কে দিচ্ছে। আজকের রাঙামাটিতে সমাবেশের নামে পাাহড়ি যুবকের ওপর হামলার ঘটনাও তারই অংশ।
এর আগে গত বছর ১৯-২০ সেপ্টম্বর ও ১ অক্টোবর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক হামলা, ঘরবাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটপাট চালানো হয়েছে এবং চার জনকে হত্যা করা হয়েছে। রাঙামাটি শহরের কালিন্দীপুর এলাকায় অনিক চাকমা নামে এক ছাত্রকে সেটলাররা পিটিয়ে ও কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। এসব ঘটনায় রাষ্ট্রকে নিরব ভুমিকা পালন করতে দেখা গেছে, কোন বিচার হয়নি, সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি। আজকেও প্রকাশ্যে রাঙামাটি শহরে হামলা করা হল। সেটলারদের হামলার সময় ঘটনাস্থলের আশে-পাশে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা হামলকারীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি কিংবা কাউকে গ্রেফতার করেনি। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের এমন ভুমিকা পক্ষপাতদুষ্ট এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
চার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, অবিলম্বে রাঙামাটি হামলার ঘটনায় জড়িত সেটলার বাঙালিদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার দাবি জানান।