নিজস্ব প্রতিনিধিঃ যানজট নিরসনে ঢাকা যানজট নিরসন কমিটির উদ্যোগে ৫ অক্টোবর শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে ১১ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেন সংগঠনের সভাপতি মোঃ ইছহাক দুলাল। এসময় সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব ডাঃ সৈয়দ জালাল উদ্দীন আহম্মেদ, ক্যান্সর গবেষক অধ্যক্ষ ডাঃ এস এম সরওয়ার, রুর্যাল জার্নালিস্ট ফাউন্ডেশন (আরজেএফ) চেয়ারম্যান এস এম জহিরুল ইসলাম, সংগঠনের সহ-সভাপতি হাজী আব্দুস সামাদ, তারেক হোসেন সুমন পাটোয়ারী, আ ন ম মোঃ সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল আহমেদ ইকবাল আহমেদ রেজা, দপ্তর সম্পাদক মোঃ ইমতিয়াজ উদ্দিন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন সংগঠনের প্রচার সম্পাদক মো. সাহিদুল ইসলাম।
লিখিত বক্তব্যে মোঃ ইছহাক দুলাল বলেন, ১ নং- খাল সংস্কার। ঢাকা শহরের চারদিকে যে খাল আছে সেগুলো সংস্কার করে স্পিডবোট ওয়াটার বাস ছোট ছোট লঞ্চ চালু করা। ২ নং- ট্রাম রোড। ঢাকা শহরের চারপাশে নদী ঘেঁষে একটি ট্রাম রোড (মিনি রেলপথ) স্থাপন করা। ৩ নং- রিং রোড। মিনি রেলপথ ঘেঁষে একটি রিং রোড তৈরি করা । ১নং, ২নং ও ৩নং রিং রোডের সুবিধাগুলো একই। যেমন কোন লোক সদরঘাট থেকে টঙ্গী যেতে চাইলে ঢাকা শহরের ভিতরে না ঢুকে নৌ-পথ, মিনি রেল পথ ও রিং রোড ব্যবহার করে সদরঘাট থেকে আমিনবাজার হয়ে টঙ্গী অথবা সদরঘাট থেকে কাচপুর হয়ে টঙ্গী যেতে পারবে। অনুরূপভাবে ঢাকা শহরের ভিতরে না ঢুকে একই পথ ব্যবহার করে ফেরত আসতে পারবে। যার ফলে শহরের উপর মানুষ ও যানবাহন উভয়ের চাপ কমবে । উল্লেখ্য বাড়তি সুবিধা চট্টগ্রাম থেকে আগত গাড়িগুলো দক্ষিণবঙ্গে যেতে চাইলে কাচপুর থেকে বাম পাশ ঘেঁষে রিংরোড এ প্রবেশ করে সদরঘাট হয়ে গাবতলী দিয়ে যাবে এবং উত্তরবঙ্গে যেতে চাইলে ডান পাশ ঘেঁষে রূপগঞ্জ দিয়ে টঙ্গী দিয়ে যাবে। অনুরূপভাবে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়িগুলো একই পথ ব্যবহার করবে । এতে করে দূরপাল্লার কোন গাড়ি ঢাকা শহরে প্রবেশের প্রয়োজন হবে না, যার ফলে ঢাকা শহরের ভেতরে গাড়ির সংখ্যা কমবে। যা যানজট নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে এবং সময় বাঁচবে। এছাড়া খালসংস্কার, ট্রাম রোড ও রিং রোড তৈরি হলে অবৈধ স্থাপনা হতে খাল/নদীর পাড়গুলো স্থায়ীভাবে দখলমুক্ত হবে এবং ঢাকার ভিতরের জলাবদ্ধতা থেকে ঢাকা মুক্তি পাবে। ৪নং- বাস স্ট্যান্ড স্থানান্তর। সায়দাবাদ বাস স্ট্যান্ডকে কাচপুরে স্থানান্তর করা। মহাকালী বাস স্ট্যান্ডকে টঙ্গীতে স্থানান্তর করা বাবুবাজার বাস স্ট্যান্ড বর্তমানে পরিচিত কেরানীগঞ্জ স্থানান্তর করা। গাবতলী বাস স্ট্যান্ড গাবতলী তে থাকবে এছাড়া মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরাপুল, বাবুবাজার, সায়দাবাদ, মহাখালি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে বাসস্ট্যান্ড গুলো উঠিয়ে দিলে তা যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এবং ঢাকা শহরের ভিতরে দুরপাল্লার কোন গাড়ি ঢুকবে না। এতে করে মানুষ ও গাড়ি চাপ উভয়ই কমবে। ৫নং- কমলাপুর থেকে বাইপাস রেললাইন টঙ্গীর সাথে সংযুক্ত অথবা উড়াল সেতু নির্মাণ করা। কমলাপুর থেকে বাইপাস রেললাইন টঙ্গীর সাথে সংযুক্ত অথবা উড়াল সেতু নির্মাণ করলে ঢাকা শহরের অভ্যন্তরীণ যানজট নিরসনে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হতে পারে। একটি বিবরণের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করা যায়। প্রতিদিন কমলাপুর থেকে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন জেলার উদ্দেশ্যে কমপক্ষে ৫২টি কমবেশি ট্রেন ছেড়ে যায় এবং ৫২টি কমবেশি ট্রেন প্রবেশ করে। কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ২৪টি লেভেল ক্রসিং আছে এর মধ্যে ১১টি স্পেশাল ১৩টি বি ক্লাস। ১১টি কন্ট্রোল করে স্টেশন মাস্টার আর ১৩টি কন্ট্রোল করে গেইট ম্যান। ১১টিতে সময় লাগে ১০ থেকে ১১ মিনিট আর ১৩টিতে সময় লাগে ৬ থেকে ৭ মিনিট সুতরাং আমরা যদি ১০৪টি ট্রেনের জন্য গড়ে ৭ মিনিট করে হিসাব করি তাহলে দেখা যায় প্রতিদিন ১০৪*৭=৭২৮মিনিট অর্থাৎ ১২ঘন্টা ১৪মিনিট প্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় শুধুমাত্র ট্রেন চলাচলের কারণে। তবে এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য যে যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যানজট সৃষ্টি হয় সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত সেই সময়টাকে আমরা অর্ধেক তথা ৬ঘণ্টা ১০ মিনিট ধরতে পারি। এই সময়টাকে অন্যান্য যানবাহন হতে যে পরিমাণ জ্বালানি তেল-গ্যাস ও সময় অপচয় হয়ে থাকে তা একটি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে কতটা অন্তরায় তা সরকারের জানা থাকার কথা। তাই আমার পরামর্শ মোতাবেক যদি কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত বাইপাস রেলপথ অথবা উড়াল সেতু নির্মাণ করলে এই সমস্যার অনেকাংশই লাঘব হবে বলে আমি আশাবাদী। ৬নং- জেল ও আদালত ভবন একই স্থানে স্থাপনের প্রস্তাব ঢাকা শহরকে দুইটি জোনে ভাগ করে; জোন এক- কেরানীগঞ্জ জেলখানার পাশে আদালত ভবন স্থাপন করা। জোন দুই-কাশিমপুর জেলখানার পাশে আদালত ভবন স্থাপন করা। ধরা যাক, (ক) বারডেম হাসপাতাল আদালত, আর পিজি হাসপাতাল জেলখানা। জেলখানা থেকে ওভার ব্রিজ দিয়ে আসামীরা পায়ে হেঁটে আদালতে এসে হাজিরা দিবে। এক্ষেত্রে পুলিশ হেফাজতে ক্যারিং করে আসামীদেরকে আদালতে নিয় যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। (খ) নতুন আসামীদেরকে আদালতে উঠানোর পর জামীন আবেদন মঞ্জুর না হলে তারা আদালত থেকেই পায়ে হেঁটে জেলে চলে যাবে। এতে করে, অতিরিক্ত পুলিশ ও যানবাহনের প্রয়োজন হবে না। (গ) জেল খানাকে ২ ভাগ করে বিচারিক কার্যক্রমের আওতায় থাকা আসামীরা সাব জেলে এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা জেলে থাকব। ৭নং- ঢাকার চারদিকে ১০০ কিঃমিঃ ট্রেন চালু করা। ঢাকা শহর থেকে যানজট ও মানুষের চাপ কমানোর জন্য ঢাকার নিকটবর্তী জেলা শহর গুলোর সঙ্গে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করা। যেমন ঢাকা-কুমিল্লা রেল লাইন তৈরি করা, ঢাকা-জাজিরা রেল লাইন আছে, ঢাকার-টাঙ্গাইল রেল লাইন আছে, ঢাকা-ভৈরব রেল লাইন আছে। সকাল ৭টায় এবং ৭.৩০টায় ২টি ট্রেন এই সকল জায়গাগুলো থেকে ছেড়ে আসবে ঢাকা মুখে। এভাবে প্রয়োজন অনুযায়ী ট্রেন ঢাকায় আসবে । এমনি করে প্রত্যেক স্থান থেকে দুটি করে ট্রেন ঢাকা শহরে ঢুকবে সকাল ৯ঃ০০ টার মধ্যে একইভাবে ঢাকা থেকে অফিস আওয়ার শেষ করে দুইটি ট্রেন পরপর পুনরায় ছেড়ে যাবে। এতে করে ঢাকা শহর থেকে কমপক্ষে ২০% কর্মজীবী মানুষ নিজ এলাকা থেকে নিয়মিত যাতায়াত করে অফিস করবে। অতঃপর সাপ্তাহিক ছুটিতে তারা তাদের অনাবাদী জমি চাষাবাদে মনোযোগী হবে । ফলে কৃষি সম্প্রসারণের বিশাল বিপ্লব ঘটবে। ৮নং- ফুটপাত দখল মুক্ত করার প্রস্তাব। ফুটপাত দখল মুক্ত করে হকার পূর্ণবাসন করা। যেমন ফুটপাত জনগণের সম্পদ। ফুটপাতে জনগণ চলাফেরা করবে। আর হকারদেরকে ফুটপাতে না বসাইয়া হলিডে মার্কেট চালু করা। ঢাকাকে সাতটি জোনে ভাগ করে যেদিন যে এলাকায় মার্কেট বন্ধ থাকবে সেদিন সে স্থানে হলিডে মার্কেট ওই এলাকার উন্মুক্ত স্থানে করার ব্যবস্থা করা। ৯নং- ট্রাফিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো। ক) ট্রাফিকের এস.আই থেকে সহকারী কমিশনার পর্যন্ত পর্যাপ্ত ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা এবং কস্টেবলদেরকে এস.এই ট্রেনিং করাবে। প্রয়োজনে বুয়েটের মাধ্যমে সহজগিতা নেওয়া। খ) গাড়ির ড্রাইভার, সিএনজি ড্রাইভার, রিক্সার ড্রাইভার ও বাইক চালকদের অন্তত মাসে একবার ট্রাফিক দিক নির্দেশনামূলক ট্রেনিং করাবে, রাস্তায় কে কোন লাইনে গাড়ি চালাবে। এবং প্রচার মাধ্যমের মাধ্যমে সচেতন করবে।এতে করে সড়কে শৃঙ্খলা আসবে।যানজট নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। ১০ নং নগর পরিবহন চালু করা। ঢাকা ২ সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে নগর পরিবহন চালু করা ।এক নন এসি গাড়ি, দুই এসি গাড়ি। নন এসি গাড়ি ভাড়া ৫ টাকা থেকে ২০ টাকা অর্থাৎ ভর্তুকি দেওয়া হবে, আর এ সি গাড়ি থেকে যে পরিমাণ লাভ আসবে তা নন এসিতে ভর্তুকি দিবে এই সুবিধা সাধারণ মানুষ ভোগ করবে। নগর পরিবহন চালু করলে প্রতিযোগিতা হবে না, প্রতিযোগিতার কারণে রাস্তায় যানজট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না। এতে করে মানুষ নাগরিক সুবিধা অধিকার ভোগ করবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে ও রাস্তার যানজট ও ট্রাফিকের উন্নতি হবে। ১১ নং জাতীয় স্বার্থে গাড়িতে গ্যাস দেওয়া বন্ধ করা। সিএনজি ছাড়া অন্য কোন গাড়িতে যেন গ্যাস না দেওয়া হয়। গাড়িতে গ্যাস না দিয়ে যে সকল রপ্তানি মুখি শিল্প ফ্যাক্টরিতে গ্যাসের অভাবে উৎপাদনের বিঘ্ন ঘটেছে সে সকল ফ্যাক্টরি গুলোতে এই অতিরিক্ত গ্যাসকে সংযোজন করে উৎপাদন সচল করে সম্প্রসারণ করা। এতে করে আমাদের শিল্প ফ্যাক্টরিগুলো বেঁচে যাবে, উৎপাদন বাড়বে এবং আমাদের রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়ে যাবে। দেশ ও জাতির উন্নতি হবে।