মঞ্জুর: পিলখানায় সংঘটিত ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ শে ফেব্রুয়ারির পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে চাকরিচ্যুত নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ৬৪ জেলার ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর ঐক্য ২০০৯। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে ৬৪ জেলার ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর ঐক্য ২০০৯ এর পক্ষ থেকে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য সাঈদ আহমেদ খান বলেন, যারা হত্যাকাণ্ড ও পূর্বপরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত সকলকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেওয়া হোক। আর নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদেরকে সরকারি সকল প্রকার সুযোগ সুবিধাসহ চাকরিতে পুনর্বহাল করা হোক। এ সময় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পূর্বপরিকল্পনার সঙ্গে জড়িতদেরকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তিসহ বিস্ফোরক আইনের মামলায় যারা দীর্ঘ ১৫ বছর জেলখানায় আটক আছেন অতিদ্রুত পাবলিক প্রসিকিউটরই (পিপি) নিয়োগ করে তাদের জামিনের ব্যবস্থা করার দাবিও জানানো হয়। চাকরিচ্যুত এই বিডিআর সদস্য বলেন, অল্প কিছু দিন পূর্বে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে নতুন সরকারকে আরো কিছুদিন সময় দেওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। ইতোমধ্যেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পিলখানা হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের বিষয় জানার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করার ঘোষণা দিয়েছেন। সরকারের এমন উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। চাকরিচ্যুত এই বিডিআর সদস্য আরো বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বাইরে কোনো ঘটনা না ঘটলেও ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাইরের বিভিন্ন ইউনিটে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে সেনাবাহিনী কর্তৃক বিডিআরের ইউনিটগুলো আক্রমণ করা হবে। এতে করে ২৬ তারিখে বাইরের ইউনিটের বিডিআর সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে তাদেরকে গণহারে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা প্রমাণ করতে না পারায় পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডকে বিডিআর বিদ্রোহ আখ্যা দিয়ে বিশেষ আদালত ১ থেকে ১৮ এর মাধ্যমে গণহারে বিভিন্ন মেয়াদে জেল ও জরিমানা করা হয়। এভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে একটি ঐতিহ্যবাহী ও সুশৃঙ্খল বাহিনীকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। বর্তমান সরকার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে চক্রান্তকারীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা। বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ভারতের ভূমিকা কী ছিল তা উল্লেখ করে সাঈদ আহমেদ খান বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ভারত সরকার বাংলাদেশ সীমান্তে ভোর ৬ টায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে অথচ পরবর্তীতে পিলখানায় ঘটনা ঘটে আনুমানিক সকাল ৯ টায়। ভারত সরকার পিলখানার পরিকল্পিত ঘটনা ঘটার ৩ ঘণ্টা আগে রেড অ্যালার্ট দেওয়ার কারণ কী? পরবর্তীতে সময় আনুমানিক দুপুর ১২-২০ মিনিটে ভারতের বিভিন্ন মিডিয়ায় পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সংবাদ প্রচার করে যে তৎকালীন ডিজি বিডিআর ও তার স্ত্রীসহ অনেক সেনা অফিসার হত্যার শিকার হয়েছেন। অথচ বিডিআররের ১৩ সদস্যের কমিটি নিয়ে যমুনাতে মিটিং চলাকালে কোনো হত্যাকাণ্ড হয়েছে কিনা প্রশ্ন করলে তারা তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, গত মাসের ৯ তারিখে বিডিআর কল্যাণ পরিষদের ব্যানারে একটি সংগঠন মানববন্ধনের আয়োজন করে সাংবাদিকদের সামনে চাকরিচ্যুত ১৮ হাজার ৫২০ জন বিডিআর সদস্যকে নির্দোষ দাবি করে ও অসংলগ্ন বক্তব্য প্রদান করে। স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে কারাবন্দিদের ব্যাপারে সরকারকে ৩০ দিনের আলটিমেটাম দেয়। কিন্তু তাদের এই সকল দাবিকে নৈতিকভাবে সমর্থন করেন না বলেও জানান সাঈদ আহমেদ খান। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, শফিকুর রহমান, জিয়াউল হক, আল আমিন প্রমুখ।