নিজস্ব প্রতিনিধিঃ পাহাড়ে-সমতলে আদিবাসী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে পরিচালিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা ৫ আগস্ট পরবর্তী ঘটনাবলীর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্যে জাতিসংঘের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। নেতৃবৃন্দ গভীর ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার জন্যে এসব ঘটনাকে ‘রাজনীতিকীকরণের’ অপচেষ্টা করছে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ও আদিবাসীরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এহেন রাজনৈতিক অপকৌশলকে তারা কোনভাবেই মেনে নেবে না। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকার চেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্যে নেতৃবৃন্দের প্রতি তারা আহ্বান জানান।
আজ (২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪) শনিবার ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ মিছিলপূর্ব সমাবেশে ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে বক্তৃতা করেন সংগঠনের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রঞ্জন কর্মকার, ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ বসু, সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. দিপংকর ঘোষ, পদ্মাবতী দেবী, যুব বিষয়ক সহ-সম্পাদক বলরাম বাহাদুর, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি অতুল চন্দ্র মণ্ডল, যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি শিমুল সাহা, ছাত্র ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক সজীব সরকার প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার আজ আর কোন অবকাশ নেই। অনতিবিলম্বে দেশব্যাপী চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অবসানের পাশাপাশি সংখ্যালঘুরা তাদের অস্তিত্ব, স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছে। এর মধ্যে কোনরূপ বিদেশী চক্রান্ত খোঁজা বিগত সময়ের মত অপকৌশল ও সত্যের অপলাপ মাত্র। তারা দেশত্যাগ নয় বরং রাজপথে ঐক্যবদ্ধভাবে মরনপণ লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত রেখে তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এরা সুদূর অতীতকাল থেকেই রাজনীতি সচেতন।
ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সংখ্যালঘুদের অধিকার আদায়ের অগ্রসৈনিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্তের ‘কণ্ঠ’কে রুদ্ধ করার জন্যে তাঁকে ঢাকার দুটো থানায় রুজুকৃত হত্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে। দেশের অন্যান্য বেশ কয়েকটি স্থানেও নেতৃবৃন্দের নামে অনুরূপ গায়েবী মামলা করা হয়েছে। রাণা দাশগুপ্তসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা মামলা থেকে তাদের নাম প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়ে তারা বলেন, নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি এবং চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অবসান না হওয়া পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের আন্দোলন চলবে।
ঐক্য পরিষদ নেতারা সংখ্যালঘুদের দিকে অহেতুক চোখ রাঙিয়ে বা প্রতারণার মাধ্যমে তাদের সাথে ছলচাতুরী না করার জন্যে সরকার ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মানবাধিকার নেতা এ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্তসহ বিভিন্ন জেলার সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ৪ আগস্ট পরবর্তী সারাদেশে সংঘটিত সকল মানবতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনাবলীর সাথে যুক্ত দুষ্কৃতিকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, পাহাড় ও সমতলে সংঘটিত সকল সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জাতিসংঘের তত্ত¡াবধানে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত ও অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘুদের ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে রাজধানী ঢাকাসহ ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ,
মুন্সিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেণী, কুমিল্লা, ঝিনাইদহ, রংপুর, যশোর, ফরিদপুর, দিনাজপুর, সাতক্ষিরা, বরিশাল, পটুয়াখালীসহ দেশের প্রায় ৫২টি জেলা ও মহানগরে প্রতিবাদ ও সমাবেশ কর্মসূচী পালিত হয়। যেখানে হাজার হাজার সংখ্যালঘু ও আদিবাসী নারী-পুরুষ, যুব, শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে ঘোষণা হয়, আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।
প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে ঢাকায় একটি বিক্ষোভ মিছিল পল্টন মোড় ঘুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।