রুপসীবাংলা৭১ অন্যান্য ডেস্ক : প্রাচীন মুসলিম বাংলার একটি সোনালি অধ্যায়ের নাম মুহাম্মদাবাদ, যার বর্তমান নাম বারোবাজার। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে অবস্থিত এই প্রাচীন নগরীতে বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে, যা নগরীর সমৃদ্ধ ইতিহাসেরই সাক্ষ্য প্রদান করে। বারোবাজারের প্রাচীন নিদর্শনগুলোর একটি পাঠাগার মসজিদ। এটি তাহেরপুর সড়ক থেকে ১৫০ মিটার উত্তরে মিঠাপুকুর মৌজায় অবস্থিত।
মসজিদটি দীর্ঘকাল মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৯৩ সালে খনন করলে মসজিদটি আবিষ্কৃত হয়। দীর্ঘকাল মাটির নিচে থাকায় মসজিদের ওপরের অংশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, গম্বুজের প্রায় পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পাঠাগার মসজিদের ১.৭০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত দেওয়াল সংস্কার করে।
মুসলিম বাংলার সোনালি দিনের সাক্ষী পাঠাগার মসজিদপ্রত্নতত্ত্ব গবেষকদের ধারণা, পাঠাগার মসজিদ সুলতানি আমলে নির্মিত। খুলনা-বাগেরহাট অঞ্চলের সুফি ও শাসক খানজাহান আলী (রহ.)-এর নির্দেশে তাঁর অনুসারীরা মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। সে হিসেবে মসজিদের বয়স প্রায় সাত শ বছর। জনশ্রুতি রয়েছে, নির্মাণকালে এখানে একটি সমৃদ্ধ গণপাঠাগার ছিল এবং মসজিদে কোরআন ও হাদিসের পাঠদান করা হতো।তাই এই অঞ্চলের মানুষ এটাকে পাঠাগার মসজিদ নামে চেনে। তবে খনন করার আগে জায়গাটি পাঠাগার ঢিবি নামে পরিচিত ছিল।
খননের আগে পাঠাগার ঢিবি ছিল আয়তাকার। যার দৈর্ঘ্য ছিল ১৫ মিটার ও প্রস্থ ১২ মিটার। খননের পর আবিষ্কৃত তুলনামূলক ছোট ও বর্গাকৃতির। মসজিদটির প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ৬.৯ মিটার এবং দেওয়ালের পুরুত্ব ১.৩৮ মিটার। মসজিদের চার কোনায় আছে অষ্টভুজাকৃতির টাওয়ার, যার নিচে দিগন্ত রেখাকৃতির বাঁধন আছে। উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে একটি করে তিনটি প্রবেশপথ রয়েছে। সব কয়টি প্রবেশপথের প্রান্ত সীমা জ্যামিতিক নকশাসংবলিত সমকোণী ফ্রেম দিয়ে বাঁধানো।
মসজিদের পশ্চিম দিকের দেওয়ালে একটি অর্ধবৃত্তাকৃতির মিহরাব রয়েছে। মিহরাবের ভেতর দিকে পোড়ামাটির নকশা আছে। পাঠাগার মসজিদ এক গম্বুজবিশিষ্ট এবং তা লাল ইটের তৈরি। মসজিদটির চার কোনায় চারটি অষ্টভুজাকৃতির বুরুজ সংযুক্ত রয়েছে। বুরুজগুলোর নিচের দিকে আনুভূমিক সারিতে কয়েকটি বন্ধনী আছে। কেন্দ্রীয় মিহরাবের দুদিকে দুটি বদ্ধ মিহরাব আছে। বদ্ধ মিহরাব দুটির অভ্যন্তরে পোড়ামাটির শিকল ঘণ্টার অলংকরণ দেখা যায়। মসজিদের পূর্ব দিকে একটি বড় দিঘি আছে, যা পিঠেগড়া পুকুর নামে পরিচিত। ১৯৯৫ সালে সংক্ষিপ্ত খননের ফলে এখানে একটি কবরস্থানের ধ্বংসাবশেষ উন্মোচিত হয়। মসজিদটি বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি।
সূত্র : বাংলা পিডিয়া ও বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যম
রুপসীবাংলা৭১/এআর

