রুপসীবাংলা৭১ বিনোদন ডেস্ক : হীর ওয়ালিয়া। পাঞ্জাবের এক সরল, প্রাণবন্ত মেয়ে। তাঁর শৈশব কেটেছে মায়ের রান্নাঘরে। স্কুল থেকে ফিরলেই ঘরজুড়ে ভেসে আসত সরষে দিয়ে মাছ রান্নার ঘ্রাণ কিংবা রুটি বানানোর টুংটাং শব্দ। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে হীর দেখত মায়ের হাতের খেলা। রান্নাঘর যেন ছিল তাঁর কাছে এক ছোট্ট জাদুঘর, যেখানে প্রতিটি মসলা আর হাঁড়িপাতিলের আওয়াজ মানেই ছিল নতুন কোনো গল্প। কিন্তু খুব অল্প বয়সেই হীরের পৃথিবী ওলট-পালট হয়ে যায়। মায়ের মৃত্যু তাঁকে নিঃসঙ্গ করে তোলে।
চারপাশে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব থাকলেও ভেতরে জন্ম নেয় বিশাল শূন্যতা। রান্নাঘর হয়ে ওঠে নির্জন, মায়ের হাতের গন্ধহীন খাবার তাঁকে প্রশ্ন জাগায়, ‘আমি কীভাবে মাকে ধরে রাখব?’ এই হারিয়ে যাওয়া থেকেই জন্ম নেয় নতুন এক দৃঢ়তা। বুকের ভেতর জ্বলে ওঠে জেদি আগুন।
হীর প্রতিজ্ঞা করে ‘রান্নার মাধ্যমেই আমি তৈরি করব নতুন পৃথিবী।’ এখান থেকেই শুরু হয় হীরের স্বপ্নযাত্রা। এই গল্প নিয়েই নির্মিত হয়েছে বলিউডের নতুন সিনেমা ‘হীর এক্সপ্রেস’। পরিচালনা করেছেন উমেশ শুক্লা। ‘ওএমজি: ওহ মাই গড’ এর মতো ভিন্ন স্বাদের সিনেমা উপহার দেওয়ার পর এবার তিনি মন দিয়েছেন পরিবার ও সংস্কৃতির গল্পে। তাঁর ভাষায়, ‘এই সিনেমার গল্প রান্নার স্বাদে ভরপুর, তবে এর আসল মসলা হলো আবেগ।’
তাই ‘হীর এক্সপ্রেস’ তাঁর এক স্বপ্নের প্রজেক্ট। এই সিনেমার মাধ্যমে প্রথমবার বড় পর্দায় যাত্রা শুরু করছেন দিবিতা জুনেজা। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই তাঁর কাছে সাফল্য আর স্বপ্নের বর্ণিল ক্যানভাস। নামের মতোই আলো ছড়ানো এই তরুণী কেবল নিজের কৃতিত্বেই নন, অন্যদের জীবন আলোকিত করার প্রয়াসেও হয়ে উঠেছেন এক অনন্য উদাহরণ।
শিক্ষাজীবন থেকেই তিনি অসাধারণ। টুয়েলভ ক্লাসে পেয়েছিলেন ৯৮.২% নম্বর– যা তাঁকে শুধু ক্লাসের শীর্ষস্থানেই পৌঁছে দেয়নি; বরং আলাদা করে চিনিয়েছে এক মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে। দিবিতার গল্প এখানেই সীমাবদ্ধ নয়; শৈশব থেকে নাচ ও মঞ্চনাটকের সঙ্গে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক। তিনি একজন প্রশিক্ষিত কথক নৃত্যশিল্পী। শিল্পকলার প্রতি এই টান তাঁকে দিয়েছে ভিন্ন পরিচিতি, যেখানে জ্ঞান আর সৃজনশীলতা সমান তালে চলেছে। চণ্ডীগড়ের এক সাধারণ পরিবারে বেড়ে ওঠা দিবিতার জীবনের মূলশক্তি তাঁর পরিবার– মা সারা জুনেজা, বাবা সঞ্জীব জুনেজা, আর ভাই দিবম জুনেজার ভালোবাসা ও সমর্থনেই তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন স্বপ্নের পথে। প্রতিটি সকাল তিনি গ্রহণ করেন হাসি ও উদ্যমে। চ্যালেঞ্জ যতই আসুক, দিবিতার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি চারপাশের মানুষকে দেয় সাহস আর আত্মবিশ্বাসের পাঠ।
দিবিতা ছাড়াও সিনেমায় অভিনয় করেছেন আশুতোষ রানা। ট্রেলারের এক দৃশ্যে দেখা যায়, তিনি মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে শুধু চোখে চোখ রাখেন– কোনো সংলাপ নেই, অথচ দর্শক নিঃশ্বাস আটকে তাকিয়ে থাকে। অন্যদিকে আছেন সঞ্জয় মিশ্রা, যাঁর উপস্থিতি গল্পে এনে দেয় হাস্যরস। সবচেয়ে বড় চমক হলো গুলশান গ্রোভার। যাঁকে দর্শক দীর্ঘদিন ধরে চিনেছে বলিউডের “ব্যাড ম্যান” হিসেবে, তিনি এবার এক রেস্টুরেন্ট মালিকের ভূমিকায়। সহজসরল, হৃদয়বান এক মানুষ, যিনি খাবার আর ভালোবাসা দিয়ে মানুষকে আপন করে নিতে চান।
নিজের চরিত্র প্রসঙ্গে গুলশান বলেছেন, ‘এখানে কোনো ভিলেনি নেই। আমি কেবল একজন সাধারণ মানুষ হয়েছি।’
সিনেমার অধিকাংশ শুটিং হয়েছে ভারতের পাঞ্জাব ও লন্ডনে। পাঞ্জাবের সরষে ক্ষেত, ধাবার ধোঁয়া, গ্রামের হাটের কোলাহল– সব মিলিয়ে গল্পে আসে শিকড়ের টান।
অন্যদিকে লন্ডনের ব্যস্ত রাস্তা, অচেনা ভাষা আর প্রবাসী জীবনের নিঃসঙ্গতা হীরের সংগ্রামকে করে আরও তীব্র। দর্শক বুঝতে পারেন, হীর দাঁড়িয়ে আছে দুই পৃথিবীর মাঝখানে একটি তাঁর অতীত, আরেকটি তাঁর ভবিষ্যৎ।
‘হীর এক্সপ্রেস’ কোনো সাধারণ প্রেমকাহিনি নয়; এটি রান্নার সুবাসে ভরা এক আবেগময় যাত্রা, যেখানে আছে মায়ের স্মৃতি, পরিবারের বন্ধন, প্রবাসজীবনের শূন্যতা আর স্বপ্ন পূরণের সংগ্রাম। এখন প্রশ্ন একটাই– এই যাত্রা দর্শককে কতটা ছুঁতে পারে? তার উত্তর মিলবে আগামীকালই। কারণ, সেদিন ভারতজুড়ে মুক্তি পেতে চলেছে সিনেমাটি।
রুপসীবাংলা৭১/এআর

