রুপসীবাংলা প্রতিবেদক : ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগে তুলেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ।
তাদের দাবি, ছাত্রদল মনোনয়ন সংগ্রহের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য প্রশাসনের ওপর প্রভাব প্রয়োগ করেছে, যা নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার জন্য উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন পায়রা চত্বরে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতারা এ দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, “আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ যা বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা প্রদান করছে। আমরা এ ধরনের প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাই।”
ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রদল নেত্রী বাধা প্রদানের ঘটনায় তিনি বলেন, “মনোনয়নপত্র সংগ্রহের নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ার পর কয়েকজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহের চেষ্টা করে। এতে হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানায়। এখানে সুস্পষ্ট আচরণবিধি ভঙ্গ হয়েছে, তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধকে ‘মব’ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে, যা আমরা সুস্পষ্টভাবে গণতান্ত্রিক অধিকারের হরণ হিসেবে দেখি।”
আবদুল কাদের বলেন, “আমরা মনে করি, এই ধরনের আচরণ জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের বিরুদ্ধে যে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে ধ্বংস করে। ফজিলাতুন্নেছা হলের ঘটনা ‘লাঞ্চনা’ হিসেবে ফ্রেম করা হচ্ছে এবং প্রতিরোধকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে তদন্ত চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ এটিকে সুস্পষ্ট প্রহসন হিসেবে দেখছে।”
সিনেট ভবনে ছাত্রদলের নেতার আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে তিনি বলেন, “মনোনয়ন সংগ্রহের ক্ষেত্রে সুস্পষ্টভাবে আচরণবিধি উল্লেখ থাকলেও, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের জসিমউদ্দীন হলে আহ্বায়ক তানভীর বারী হামিম মিছিল ও স্লোগানসহ প্রবেশ করেন। যা আচরণবিধি ২(ক) অনুযায়ী লঙ্ঘন এবং ১৭(খ) অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা এক আশ্চর্যজনক নিরবতা লক্ষ্য করেছি। যা ডাকসু নির্বাচনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করছে।”
মনোনয়ন সংগ্রহের সময় বাড়ানোকে ডাকসু বিলম্বিত করার অপচেষ্টা হিসেবে অভিহিত করে আব্দুল কাদের বলেন, “মনোনয়নপত্র সংগ্রহের জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া হলেও শেষ মুহূর্তে একদিন অতিরিক্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটি ফজিলাতুন্নেছা হলে হওয়া নিয়মভঙ্গকে উৎসাহিত করছে এবং বৈধতা প্রদান করছে। যা ডাকসু নির্দিষ্ট সময়ে না অনুষ্ঠিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে আমরা ডাকসুকে বিলম্বিত করার অভিপ্রায় হিসেবে দেখি।”
ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলনের এক বক্তব্যকে ডাকসু বানচালের চেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত এক এক্সপ্রেস ব্রিফিংয়ে ডাকসুর ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নেই বলে অভিযোগ করা হয়েছে। আমরা এটিকে ডাকসু বানচালের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখি এবং এই ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের উপর চাপ তৈরি করা হচ্ছে, যা সত্যিকার অর্থে ডাকসুর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট করার পরিস্থিতি তৈরি করছে।”
আবদুল কাদের দাবি করেন, “ছাত্রদল যথাসময়ে প্যানেল গঠন করতে পারেনি দেখে প্রশাসনের ওপর চাপ প্রয়োগ করে মনোনয়ন সংগ্রহের জন্য একদিন সময় বাড়ানো হয়েছে। তারা এখনো তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা আশঙ্কা করছি, প্রশাসনের ওপর এরূপ চাপ প্রয়োগ করে ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলেও প্রভাব ফেলা হতে পারে। কিন্তু আমরা ২০১৯ সালের মতো প্রশাসন চাই না, যারা একটি ছাত্রসংগঠনের প্রতি নতজানু হয়ে থাকবে।”
সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ জানান, ডাকসু পেছানোর চেষ্টা করা হলে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সেই অপচেষ্টা রুখে দেবে।
রুপসীবাংলা ৭১/এআর