রুপসীবাংলা প্রতিবেদক : নড়াইলের তুলারামপুর বাজারে রাস্তার পাশে বসে ডোঙার (ছোট নৌকা) হাট। স্থানীয় কারিগররা তালগাছের গুঁড়ি থেকে তৈরি করা ডোঙা এই হাটে নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতারাও ভিড় করেন। ক্রেতা-বিক্রেতারা ডোঙার দাম নির্ধারনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ভোরে শুরু হওয়া হাট চলে দুপুর পর্যন্ত।
ডোঙা মূলত ডিঙি নৌকার চেয়ে ছোট ও লম্বাটে জলযান। তালগাছ কেটে বানানো হয় বলে এর আরেক নাম ‘তালের ডোঙা’। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী তালগাছকে মাঝামাঝি দুইভাগ করে তৈরি হয় দুইটি ডোঙা।
সাধারণ নৌকার তুলনায় দামে কম ও বহনযোগ্য হওয়ায় ডোঙা নড়াইলের বিভিন্ন এলাকার মানুষের প্রধান জলযান। স্থানীয় লোকজন বিল থেকে মাছ ধরা, শাপলা তোলা, ধান-পাট কাটার কাজে ডোঙা ব্যবহার করেন।
কালনা-নড়াইল-যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে তুলারামপুর এলাকায় রেইনট্রি গাছের নিচে প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় বসছে অর্ধশত বছরের পুরনো ডোঙার হাট। নড়াইল জেলার বিভিন্ন এলাকার কারিগররা তাদের তৈরি ডোঙা বিক্রি করতে এই হাটে আসেন। দুপুর পর্যন্ত চলা হাটে ক্রেতা-বিক্রেতারা ডোঙার দাম নিয়ে আলোচনা করেন। মূল সড়কের পাশে হওয়ায় ভ্যান চালকরাও সকাল থেকে হাটে উপস্থিত থাকেন ক্রেতাদের কেনা ডোঙা বাড়ি পৌঁছে দিতে।
নড়াইল ছাড়াও সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, মাগুরা, গোপালগঞ্জ থেকে ক্রেতারা আসেন। গাছের বয়স, মান ও আকৃতির ওপর নির্ভর করে ডোঙার দাম। এই জলযানটির দাম তিন থেকে চার হাজার টাকা থেকে শুরু হয়। বড় হলে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম হয়।
সোমবার (১৮ আগস্ট) সকালে হাটে কথা হয় চর-শালিখা গ্রামের কারিগর আতিয়ার রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, “বাবা চাচাদের কাছ থেকে কাজ শিখেছি। এখন বড় ভাইরা ডোঙা বানায়, আমিও তাদের সঙ্গে কাজ করি। বৃহস্পতিবার ও সোমবার তুলারামপুর হাটে ডোঙা বিক্রি করি। ডোঙার দাম তিন-চার হাজার টাকা থেকে শুরু হয়। বড় হলে দাম ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। দূর-দূরান্ত থেকে তুলারামপুর হাটে ক্রেতারা আসেন ডোঙা কিনতে।”
মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলা থেকে ডোঙা কিনতে আসা রিপন কুমার বিশ্বাস বলেন,‘ডোঙা মূলত মাছ ধরা, শাপলা তোলা ও শামুক আহরণের জন্য আমরা ব্যবহৃত করি। আমি কয়েকটি ডোঙা দেখেছি, তার দাম ও বলেছি। যাওয়ার সময় একটি ডোঙা কিনে নিয়ে যাব।”নড়াইল জেলা বিসিক কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সোলায়মান হোসেন বলেন, “ডোঙা যারা তৈরি করেন এটি তাদের আদি পেশা ও ঐতিহ্য। আমরা তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। তুলারামপুর হাট ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকায় ডোঙা বিক্রির হাট বসে।”
রুপসীবাংলা ৭১/এআর