রুপসীবাংলা ৭১ঃ পানছড়িতে ছাত্র-যুব নেতা বিপুল-সুনীল-লিটন-রুহিনের হত্যাকারীদের গ্রেফতার-বিচার ও ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দেয়ার দাবিতে খাগড়াছড়ি জেলায় স্কুল-কলেজে ছাত্র ধর্মঘট সফলভাবে পালিত হয়েছে।
আজ রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের আহ্বানে এই ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করা হয়।
ধর্মঘটের সমর্থনে খাগড়াছড়ি জেলা দেড় শতাধিক প্রাথমিক-মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীরা ক্লাশে যোগদান করেনি এবং পাঠদান কার্যক্রম কার্যত বন্ধ ছিল। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান থাকায় কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও চলেনি শ্রেণী কার্যক্রম।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা বলেন, খাগড়াছড়ি জেলার দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শত শত শিক্ষার্থী স্কুল—কলেজে না গিয়ে ছাত্র-যুব নেতা বিপুল-সুনীল-লিটন-রুহিনের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
উক্ত দাবিতে এর আগে শিক্ষার্থীরা স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান ও ৪ ফেব্রুয়ারি পানছড়ি উপজেলায় ছাত্র ধর্মঘটে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ ও সমর্থন জানিয়েছেন। এটি শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর চলা দমন—পীড়ন, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও বলা যায়।
তিনি আরো বলেন, ছাত্র সমাজ পাহাড়ে শাসকগোষ্ঠী গোষ্ঠীর অন্যায় নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার থেকেছে। ধর্মঘট কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে খাগড়াছড়ি ছাত্র সমাজ তা আবারো প্রমাণ করেছে।
আগামী দিনে ছাত্র সমাজ ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেবে, শাসকগোষ্ঠীর গুম-খুন, অপহরণ, নির্যাতন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে এবং প্রতিবাদ প্রতিরোধে সামিল হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অমল ত্রিপুরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পানছড়িতে ৪ জন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দুই মাস পূর্ণ হলেও প্রশাসন এখনো হত্যাকারীদের গ্রেফতার করেনি। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন পদক্ষেপ না নিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে।
তিনি আজ দুপরে মানিকছড়ি জামতলায় ধর্মঘট পরবর্তী মিছিলে অংশগ্রণকারী ছাত্র-জনতার ওপর সেনাবাহিনী হামলার চেষ্টা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন এবং বলেন, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের এহেন কর্মকাণ্ডে এটা স্পষ্ট হয় যে, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদে সন্ত্রাসীরা পানছড়িতে বিপুল চাকমাসহ ৪ জনকে হত্যা করেছে। একইভাবে মহালছড়িতে ২ জন ও সাজেকে ২ জন হত্যা হত্যা করা হয়েছে।
তিনি ছাত্র ধর্মঘটে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করায় খাগড়াছড়ি জেলার ছাত্র সমাজের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং অবিলম্বে বিপুল চাকমাসহ ৪ নেতা হত্যার ঘটনায় জড়িত খুনী “নব্য মুখোশ” সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও বিচার এবং ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দেয়ার দাবি জানান।
এদিকে ধর্মঘট কর্মসূচি পালন শেষে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি, পানছড়ি, খাগড়াছড়ি সদরে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের স্ব স্ব শাখার উদ্যোগে মিছিল করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর সদস্যরা পানছড়ির অনিলপাড়ায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও পিসিপির সাবেক সভাপতি বিপুল চাকমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সহ—সভাপতি সুনীল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ-সভাপতি লিটন চাকমা ও ইউপিডিএফের সদস্য রুহিন বিকাশ ত্রিপুরাকে গুলি করে হত্যা করে।
এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার-বিচার ও ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দেয়ার দাবিতে গত ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ৫ সংগঠনের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এই ছাত্র ধর্মঘট কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়।