রুপসীবাংলা৭১ অন্যান্য ডেস্ক : মহান আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সংযোগ স্থাপনের অন্যতম মাধ্যম নামাজ।যার মাধ্যমে একজন নিরুপায়, গরিব, দুর্বল ও অসহায় মানুষও রাজাধিরাজ মহান রাব্বুল আলামিনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। নামাজ এমন একটি বিধান, যাকে বলা যায় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। নিম্নে নামাজের কিছু বিশেষ উপকারিতা তুলে ধরা হলো :
সমস্যা সমাধানের রাস্তা : দুশ্চিন্তা, সমস্যা মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী।
এ রকম পরিস্থিতিতে বান্দার অন্যতম করণীয় হলো, নামাজে দাঁড়িয়ে যাওয়া। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩১৯)
কেননা মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো।
নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৫৩)
তাই যেকোনো বিপদ কিংবা সমস্যায় বান্দার উচিত মহান আল্লাহর শিখিয়ে দেয়া এই পদ্ধতি অবলম্বন করা। ইনশাআল্লাহ, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য আসবে।
দুর্যোগে নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা : দুর্যোগেও নবীজি (সা.) নামাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন।
তিনি সূর্য গ্রহণের সময় কুসুফ নামাজ আদায় করতেন, চন্দ্র গ্রহণের সময় খুসুফ নামাজ আদায় করতেন, আবার অনাবৃষ্টি দেখা দিলে সালাতুল ইস্তিসকা আদায় করতেন। যেকোনো দুর্যোগে মুমিনের করণীয় হলো মহান আল্লাহর কাছেই আশ্রয় চাওয়া। কারণ নিরাপত্তা দেয়ার মালিক তো মহান আল্লাহই।
সিদ্ধান্তহীনতায় নামাজ : আমরা অনেক সময় বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি, যা আমাদের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলে। মানসিকভাবেও দুর্বল করে তোলে।
অনিশ্চয়তা ও অজানা দুশ্চিন্তায় মাথা ভারী হয়ে থাকে। অথচ মহান আল্লাহ এ ধরনের সিদ্ধান্তহীনতার সময় সরাসরি তাঁর কাছ থেকে সমাধান নেয়ার রাস্তা রেখেছেন। আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কিরামকে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ইস্তিখারা করার প্রতি উৎসাহ দিতেন। ইস্তিখারা শেখাতেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের যেভাবে কোরআনের সুরা শিক্ষা দিতেন, ঠিক সেভাবে প্রতিটি কাজে আমাদের ইস্তিখারা (কল্যাণ প্রার্থনা) শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, যখন তোমাদের কেউ কোনো কাজের ইচ্ছা করে তখন সে যেন ফরজ ছাড়া দুই রাকাত নামাজ আদায় করে নেয়, অতঃপর বলে : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্তাখিরুকা…সুম্মা আরজিনি বিহি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৪৮০)
যুদ্ধক্ষেত্রে নামাজ : নামাজ এতটা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যে নবীজি (সা.) ও সাহাবায়ে কিরাম যুদ্ধক্ষেত্রেও নামাজ বাদ দেননি, বরং প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তাঁরা মহান আল্লাহর এই ফরজ বিধান আদায় করেছেন। সালিহ ইবনে খাওয়াত (রা.) থেকে বর্ণিত, এমন একজন সাহাবি থেকে বর্ণনা করেন, যিনি জাতুর রিকার যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সালাতুল খাওফ আদায় করেছেন। তিনি বলেছেন, একদল লোক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে কাতারে দাঁড়ালেন এবং অপর দলটি থাকলেন শত্রুর সম্মুখীন। এরপর তিনি তাঁর সঙ্গে দাঁড়ানো দলটি নিয়ে এক রাকাত নামাজ আদায় করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। মুক্তাদিরা তাঁদের সালাত পূর্ণ করে ফিরে গেলেন এবং শত্রুর সম্মুখে সারিবদ্ধ হয়ে বসে থাকলেন। এরপর মুক্তাদিরা তাঁদের নামাজ সম্পূর্ণ করলে তিনি তাঁদের নিয়ে সালাম ফিরালেন। (বুখারি, হাদিস : ৪১২৯)
অতএব, আমাদের উচিত যেকোনো পরিস্থিতিতে নামাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহর শরণাপন্ন হওয়া। নামাজকে গুরুত্ব দেয়া। কেননা যারা নামাজ থেকে দূরে সরে যায়, তারা মূলত আল্লাহ তাআলার রহমত থেকে দূরে সরে যায়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘দুর্ভোগ সেই সব নামাজ আদায়কারীর জন্য, যারা নিজেদের নামাজের ব্যাপারে উদাসীন। (সুরা : মাউন, আয়াত : ৪-৫)
মহান আল্লাহ সবাইকে নামাজে যত্নবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
রুপসীবাংলা৭১/এআর