রুপসীবাংলা৭১ প্রতিবেদক : বরগুনার বেতাগী উপজেলার প্রাণকেন্দ্র বেতাগী বাস স্ট্যান্ডে ভোর হলেই দেখা মেলে এক অনন্য প্রাকৃতিক দৃশ্য। শত শত শালিক পাখির দলবদ্ধ আগমন। দিনের আলো ফুটতেই আশপাশের গাছ, বৈদ্যুতিক তার এবং দোকানের ছাদে বসে তারা অপেক্ষা করে। এরপরই দলবেঁধে তারা নেমে আসে খাবারের খোঁজে।শহরের ব্যস্ত রাস্তায় তখন যেন এক ভিন্ন আমেজ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন সকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে ৭টার মধ্যে শালিক পাখির দল চায়ের দোকান, হোটেল, ফাস্টফুডের সামনের ফেলে দেওয়া খাবারের টুকরো কিংবা দোকানদারদের দেওয়া বিস্কুট, ভাত ও মুড়ি খেয়ে আত্মতৃপ্তিতে ঘুরে বেড়ায়। অনেক দোকানদার এই পাখিদের আগমনের জন্য আগেভাগেই কিছু খাবার রেখে দেন। এসব দোকানদার দোকান খোলার পরপরই পাখিদের বিস্কুট, মুড়ি, কেক ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়।
এ সময় বাস স্ট্যান্ডের আসে পাশের এলাকা থেকে দলবেঁধে পাখি ছুটে আসে। এ সময় মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে আসা শিশুরা পাখিদের এমন মনমুগ্ধ দৃশ্য দেখে আনন্দে চিৎকার করে ওঠে। অনেক পথচারী দাঁড়িয়ে মোবাইলে বন্দি করেন এসব দৃশ্য।বেতাগী বাস স্ট্যান্ডে চায়ের দোকানদার মঞ্জু বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে এমন দৃশ্য দেখলে মনটা ভালো হয়ে যায়।পাখির কিচিরমিচিরে যেন এক মুহূর্তের জন্য শহরের কোলাহল থেমে যায়।’
পরিবেশ সচেতন অনেকে বলছেন, শালিক পাখিরা সাধারণত এমন জায়গায় আসে, যেখানে তারা নিরাপদ এবং পর্যাপ্ত খাবার পায়। এর মানে হলো বেতাগী শহরে এখনো পাখিদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ রয়েছে। তবে কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতে যত্রতত্র প্লাস্টিক ও আবর্জনা ফেলে দিলে এটি তাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
বেতাগী সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক মানবেন্দ্র সাধক বলেন, ‘শালিক পাখিদের নিয়মিত উপস্থিতি শহরের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে।
এটি প্রমাণ করে, মানুষ ও প্রকৃতির মাঝে এখনো একটি সেতুবন্ধন রয়ে গেছে। এই ধরনের দৃশ্য আমাদের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং পশুপাখির প্রতি দায়িত্বশীল হতে উদ্বুদ্ধ করে।’
উপজেলা বসুন্ধরা শুভসংঘের সভাপতি মো. কামাল হোসেন খান বলেন, ‘প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে, বাস স্ট্যান্ড ও আশপাশের এলাকায় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং পাখিদের নিরাপদ আবাস নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হোক। যাতে এমন মনোরম দৃশ্য ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকে।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. ইকবাল মিয়া বলেন, ‘পাখি সংরক্ষণে মানুষে সচেতন হতে হবে। গ্রাম বাংলা থেকে বনজঙ্গল ও ঝোপঝাড় কেটে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে।’
রুপসীবাংলা৭১/এআর