নিজস্ব প্রতিনিধিঃ থানচিতে খেয়াং নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা পাহাড়-সমতলে নারী নিপীড়নের অংশ : অমল ত্রিপুরা-বান্দরবানের থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মংখয় পাড়া এলাকায় নিজ জুমে ধান রোপন করতে যাওয়া এক খেয়াং নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়, এটি পাহাড়-সমতলে নারী নিপীড়নের একটি অংশ। এই ঘটনা রাষ্ট্রের জাতিগত নিপীড়নেরই বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সভাপতি অমল ত্রিপুরা।
আজ মঙ্গলবার (৬ মে ২০২৫) বিকাল সাড়ে ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যে থানচিতে গৃহবধূকে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।
সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অমল ত্রিপুরার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শুভাশীষ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সদস্য রূপসী চাকমা এবং সংহতি জনিয়ে বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাবি সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম রিয়াদ, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন ঢাকা নগর শাখার আহ্বায়ক নাঈম উদ্দিন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাবি আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক।
সমাবেশে অমল ত্রিপুরা বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন হবার ৮ মাস অতিক্রম হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসন ব্যবস্থার এখনো পর্যন্ত কোন পরিবর্তন ঘটেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো সেনাশাসন চলছে। সেনা অপারেশনের নামে পাহাড়িদের ওপর ধরপাকড়, হামলা, ঘরবাড়ি তল্লাশি এবং দমন পীড়ন চালানো হচ্ছে।
থানচিতে গৃহবধূ হত্যার ঘটনা নারী নিপীড়নের অংশ মন্তব্য করে অমল ত্রিপুরা বলেন, বান্দরবান থানচিতে খেয়াং জাতিসত্তার নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়, এটি পাহাড়-সমতলে নারী নিপীড়নের একটি অংশ। এই ঘটনা রাষ্ট্রের জাতিগত নিপীড়নেরই বহিঃপ্রকাশ। যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারী ধর্ষণ, হত্যার ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। শুধু পাহাড়ে নয়, দেশের সমতলেও জুলাই আন্দোলনে শহীদের কন্যা ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়াসহ প্রতিনিয়ত ধর্ষণ-নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে এবং দেশের মৌলবাদী গোষ্ঠীদের নারী বিদ্বেষী প্রচারণা আমরা লক্ষ্য করছি।
সমাবেশ থেকে তিনি অবিলম্বে থানচিতে খেয়াং নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও বিচার, সারাদেশে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন প্রত্যাহার মাধ্যমে অব্যাহত সেনা অপারেশন, তল্লাশি, ধরপাকড়, দমন-পীড়ন বন্ধের দাবি জানান।
রূপসী চাকমা ধর্ষণের ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে বলেন, থানচিতে খেয়াং নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার যে অভিযোগ পরিবার ও স্থানীয়রা করেছেন তা আড়াল করার জন্য পুলিশ পাঁয়তারা চালাচ্ছে। ওই নারীর লাশ উদ্ধারের সময় তার দেহ ‘বিবস্ত্র’ অবস্থায় পাওয়া ও শরীরে বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা পরিবার ও স্থানীয়রা জানালেও বান্দরবান জেলা পুলিশের দেওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিক সুরহতাল রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে প্রচার করা হচ্ছে। যা অপরাধীদের রক্ষার প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। পুলিশের এমন ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানাই।
তিনি আরো বলেন, পাহাড়ি নারীদের ধর্ষণ, হত্যার ঘটনা সুষ্ঠু বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নিশ্চিত না হওয়ার ফলে এসব ঘটনা পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। তিনি পাহাড়ি নারীদের ধর্ষণের ঘটনায় মেডিকেল রিপোর্টের ওপর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গোপন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
জাহিদুল ইসলাম রিয়াদ বলেন, আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর এসময়ে এসে একের পর এক ধর্ষণ, হত্যা ও জাতিগত নিপীড়ন চাইনি। পার্বত্য অঞ্চল বাংলাদেশের এক খন্ড কাশ্মির, একখন্ড বেলুচিস্তান, বাংলাদেশের ভিতরে ভিতরে এক খন্ড পূর্ব পাকিস্তান। জাতিগত নিপীড়ন, যে দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা এবং সেখানে বাঙালি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ক্রমাগত পাহাড় দখলের যে প্রক্রিয়া সেটা যে কোন উপায়ে দ্রুত বন্ধ করা প্রয়োজন।
তিনি পাহাড়কে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে পাহাড়ি জনগণের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন বন্ধ করার আহ্বান জানান।
নাঈম উদ্দীন বলেন, একটি জনগোষ্ঠীকে দূরে রেখে ঐক্যবদ্ধ হওয়া যায় না। সুতরাং পাহাড় সমতলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি পাহাড়ি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং দাবি আদায়ের লড়াইয়ে পাশে থাকার প্রত্যয় জানান।
মোজাম্মেল হক বলেন, বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। বান্দরবানে পাহাড়ি নারীকে ধর্ষণে পর হত্যার ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।