নিজস্ব প্রতিনিধিঃ একই পদে দুই ধরণের” বৈষম্যমূলক বেতন গ্রেড বিদ্যমান এবং অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে বৈষম্যমূলক প্রহসনের জি.ও. জারী সংক্রান্ত”অডিটর ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের অডিট এন্ড একাউন্টস ডিপার্টমেন্টের অডিটরবৃন্দর সংবাদ সম্মেরন সমন্বয়ক মোঃ আজিজ আইন উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
রবিবার ১৫ই সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে, আব্দুস সালাম মিলনায়তনে অডিট এন্ড একাউন্টস ডিপার্টমেন্টের অডিটর বৃন্দরএক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা বলেন,
মোঃ আজিজ বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত এবং আন্দোলনে আহত সকলের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। ডিপার্টমেন্টের সকল পর্যায়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে (অডিট এন্ড একাউন্টস অফিসার, এসএএস সুপার, অডিটর, জুনিয়র অডিটর) অডিটরদের ন্যায্য অধিকারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সহিত বলতে হয়, আমাদের এই অধিকার আদায়ের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির মঞ্চ ও প্যান্ডেল গত ১১ তারিখ মধ্যরাতে একদল দুষ্কৃতিকারী ভেঙ্গে দেয় এবং আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিকে বিতর্কিত করার প্রয়াসে বহুমূখী ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমাদের সংযত আচরণের বিপরীতে বিভিন্ন প্রকার শৃঙ্খলা ভঙ্গের বানোয়াট অভিযোগ এনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিকে নস্যাৎ করার লক্ষ্যে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। মহামান্য উচ্চ আদালতের রায় অবমাননা এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় আইন উপদেষ্টা জনাব আসিফ নজরুল স্যারের ইতিবাচক মতামতকে উপেক্ষা করে ‘অডিটর’ পদটিকে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত না করে অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গত ১১ সেপ্টেম্বর বৈষম্যমূলক প্রহসনের জিও জারির প্রেক্ষিতে এবং সিএজি কার্যালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে বিরাজমান বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারী ও সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী একটি কুচক্রীমহল জনসেবা প্রদানে বিঘ্ন সৃষ্টি এবং অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগে বৈষম্য জিইয়ে রাখা ও অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে (স্পেশাল অরিজিনাল জুরিসডিকশান) দায়েরকৃত রিট পিটিশন নং- ৯৩৯৯/২০১৫ এর রায় গত ০২/০২/২০১৬ খ্রি. তারিখে প্রদান করা হয়। উক্ত রায়ে “to upgrade the post of the petitioner” অর্থাৎ অডিটর পদটিকে ১১তম গ্রেড হতে ১০ গ্রেডে উন্নীতকরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে সরকার কর্তৃক উচ্চ আদালতে সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নং 2711/2016 দায়ের করা হলে বিগত ১৯ মার্চ ২০১৭ খ্রি. তারিখে বিগ্য আদালত কর্তৃক আপিল খারিজ করা হয়। পরবর্তীতে সরকার পক্ষ থেকে উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য আপিল বিভাগে সিভিল রিভিউ পিটিশন নং- ৩৯৮/২০১৮ দায়ের করা হলে বিগত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক রিভিউ পিটিশনটি খারিজ করা হয়। রায়ের প্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় শুধুমাত্র রিটকারী ৬১ জন অডিটরের পদকে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করে স্পষ্টতই বৈষম্যের সৃষ্টি করে। অডিটর পদটিকে ১০গ্রেডে উন্নীত না করায় বাকি প্রায় ৩৫০০ অডিটর ১১তম গ্রেডে অবস্থান করে। আদালতের রায় সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন না করায় ৩টি কনটেম্পট পিটিশন (কন্টেম্পট পিটিশন নং-৭৫৯/২০১৯, ২৬৪/২০২১ এবং ৫৬৯/২০২১) দায়ের করা হয়। কনটেম্পট পিটিশনের রায়েও পিটিশনকারী অডিটরদের পূর্বের প্রদত্ত রায়ের অনুরূপ মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। উক্ত রায়ের আলোকে এবং অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ বিভাগ এর স্মারক নং- ৩২৮, তারিখ: ৩ নভেম্বর ২০১৩ খ্রি. ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং-৫৫ তারিখ: ১১ এপ্রিল ২০১৮ খ্রি. এর আলোকে অডিটর পদকে ১১তম হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে (পূর্বে বাস্তবায়নকৃত ৬১ জন অডিটরের ন্যায়) গত ৮ আগষ্ট ২০২৪ খ্রি. তারিখে কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) মহোদয় বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। সিএজি কার্যালয় কর্তৃক ‘অডিটর’ পদকে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেড (২য় শ্রেণী) তে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে স্মারক নং- ৫৬৫, তারিখ: ১২ আগষ্ট ২০২৪ এর মাধ্যমে সচিব, অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণলায় বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়। তৎপ্রেক্ষিতে, অর্থ মন্ত্রণালয় এর প্রশাসন-২ অধিশাখা হতে স্মারক নং-৩৪০ তারিখ: ১৩ এপ্রিল ২০২৪ খ্রি. এর মাধ্যমে অডিটর পদের বেতন গ্রেড ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে (২য় শ্রেণী) উন্নীতকরণ করা যাবে কি না, সে বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য সচিব, আইন ও বিচার বিভাগ, আইন মন্ত্রণালয় বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়। সেই আলোকে, আইন ও বিচার শাখা এর স্মারক নং-৭৮ তারিখ: ২০ আগষ্ট ২০২৪ খ্রি. এর মাধ্যমে মাননীয় আইন উপদেষ্টা জনাব ড. আসিফ নজরুল সিএজি কার্যালয় ও এর অধীনস্থ দপ্তরসমূহের সকল ‘অডিটর’ পদের বেতন ১১তম গ্রেড হতে ১০ গ্রেডে উন্নীতকরণের সম্মতিসহ মতামত অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। প্রায় ০৩ সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পর বিগত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রি. তারিখে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন ও সমন্বয় অনুবিভাগ হতে পত্র স্মারক নং-৩৮৬ এর মাধ্যমে বলা হয়, “কনটেম্পট পিটিশন নং-৭৫৯/২০১৯, ২৬৪/২০২১ এবং ৫৬৯/২০২১ এর সকল আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা প্রয়োজন। কেননা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ২০ অক্টোবর ২০২২ খ্রি. তারিখের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি মামলার সকল আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা নিঃশেষ হওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে এবং বর্ণিত কনটেম্পট পিটিশনগুলোর বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় কর্তৃক আপীল দায়ের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। উক্ত আপীলের বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতের আদেশ প্রাপ্তির সাথে সাথে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।” পরবর্তীতে পত্র জারীর ২৪ ঘন্টার মধ্যেই বিগত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রি. তারিখে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন ও সমন্বয় অনুবিভাগ হতে পত্র স্মারক নং-৩৯১ এর মাধ্যমে পূর্বের ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রি. তারিখের পত্রে উল্লেখকৃত ০৩ টি কনটেম্পট পিটিশনের সাথে সংশ্লিষ্ট পিটিশনার অর্থাৎ অডিটরগণকে রিট পিটিশন নং-৯৩৯৯ ২০১৫ এর ৬১ জন পিটিশনারের ক্ষেত্রে প্রদত্ত সুবিধার অনুরূপ সুবিধা প্রদানপূর্বক বিজ্ঞ আদালতের আদেশ প্রতিপালনের নির্দেশনা দিয়ে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয় যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রি. তারিখে জারীকৃত পত্রের সহিত সাংঘর্ষিক ও স্ববিরোধী।
তিনি বলেন অডিটর পদটিকে ১১ তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের ক্ষেত্রে মহামান্য উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে এবং আইন মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক মতামত উপেক্ষা করে অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরপর দু’দিনে দুই ধরনের অপ্রাসঙ্গিক ও স্ববিরোধী পত্র জারী আদালত অবমাননার সামিল। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯ (১) অনুচ্ছেদ মোতাবেক, কর্মক্ষেত্রে কারও প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না। কিন্তু আমাদের মহান সংবিধানের ১০৮ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহামান্য আদালত কর্তৃক মীমাংসিত ইস্যু বাস্তবায়ন করা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সেই প্রেক্ষিতে অডিটর পদটিকে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ না করা সংবিধানের উক্ত অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অডিট এন্ড একাউন্টস ডিপার্টমেন্টের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অর্থাৎ অডিটর, সুপার ও একাউন্টস অফিসারগণ মহামারি কোভিড-১৯ এর লক ডাউনে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে রাষ্ট্রের সকল দপ্তরের বেতন-ভাতাদি পরিশোধে নিজ নিজ কাজে নিয়োজিত ছিল। উল্লেখ্য যে বর্তমানে আমাদের এই চলমান শান্তিপূর্ন অবস্থান কর্মসূচির মধ্যেও জরুরি সেবা (পেনশন, জিপিএফ, বেতন-ভাতাদি ও উৎসব বোনাস) কার্যক্রম চালু রেখেছি। আমরা আমাদের কর্মে ফিরতে চাই কিন্তু একটি কুচক্রি মহল বর্তমান অন্তবর্তী সরকারকে বিব্রত করতে অডিটর পদটিকে ১০ গ্রেডে উন্নীতকরণের ক্ষেত্রে মহামান্য হাইকোর্টের রায়, সিএজি’র সুপারিশ, আইন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় আইন উপদেষ্টা ড: আসিফ নজরুল স্যারের ইতিবাচক মতামত থাকার পর ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নে বাধা প্রদান করছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ফ্যাসিবাদের দোসর বর্তমান অর্থ সচিবসহ সিএজি কার্যালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে এখনো বিরাজমান বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের কিছুসংখ্যক অনুসারী ও সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী একটি সিন্ডিকেট এর অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করছি। অধিকার আদায়ে সারা দেশের সিএজি’র কাঠামোভুক্ত সকল নন-ক্যাডার কর্মকর্তা- কর্মচারি অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। আমরা কোন আন্দোলন চাই না, আন্দোলন আমাদের কাজ না। আমরা আমাদের কর্মে ফিরে যেতে চাই। আমরা আমাদের অধিকার আদালতের রায়ের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন অর্থাৎ অতি দ্রুত ‘অডিটর’ পদটি ১০ম গ্রেডে বাস্তবায়ন চাই।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সমন্বয়ক মোঃ আজিজ আরো উপস্থিত ছিলেন, মোঃ আল আমিন, আলিমুর রহমান ডালিম, মোঃ শাহিনুর রহমান,মোঃ আলী আকবর সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।