মঞ্জুর: সেক্সওয়ার্কারস নেটওয়ার্কের উদ্যোগে গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি আলেয়া আক্তার লিলি। তিনি বলেন, নৃবিজ্ঞানের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে আদি পেশা হলো যৌনপেশা। যৌনকর্ম, বিভিন্ন রূপে, প্রাচীনকাল থেকেই চর্চা হয়ে আসছে। পতিতাবৃত্তির প্রতি মনোভাব ইতিহাসের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে নানাভাবে যৌনকর্মীদের মানবাধিকার লংঘিত হয়েছে, হচ্ছে অমানবিক নির্যাতন এর শিকার। বর্তমানেও যৌনকর্মীদের শ্রমের উপর নির্ভর করে এই ব্যবসা ছড়িয়ে আছে সারা পৃথিবী জুড়ে এবং চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। এই পেশার ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই সমাজই তার প্রয়োজনে এই পেশার সৃষ্টি করেছে। স্থান ও কালের ব্যবধানে ব্যবসার নিয়ম-নীতি পাল্টেছে, ব্যবসার পরিচালনা পদ্ধতিতে পরিবর্তন এসেছে- তবে এই কাজের সাথে সংশ্লিষ্টরা আজ-ও রয়ে গেছে অবহেলিত, নিপীড়িত ও নির্যাতিত। তিনি বলেন যে, বিগত ২৯ অগাস্ট, ২০২৪ এ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি নির্মম ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায় একজন যুবক শ্যামলীতে ভাসমান যৌনকর্মীদের উপর নির্বিচারে নির্মম ভাবে লাঠি পেটা করে। শুধু লাঠিপেটা নয় এই ভাসমান যৌনকর্মীদের সাথে থাকা নগদ অর্থ এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। ভাইরালকৃত ভিডিওটির কারণে একজন যৌন কর্মীর সন্তান ট্রমাটাইজড হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে, এতে করে সন্তান ও মায়ের সম্পর্কের মাঝে তিতক্তা, টানা-পোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। পত্র-পত্রিকার বদৌলতে জানা যায় যে, বিভিন্ন এলাকায় যৌনকর্মীদের একদল যুবক সংঘবদ্ধ হয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করছে এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যেমন যাত্রাবাড়ী, কোর্ট এলাকায়, শ্যামলী, শহীদ মিনার, মিরপুর মাজার রোড, ফার্মগেট, আসাদগেট, উত্তরা, কুড়িল ও বাড্ডা বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন যৌনকর্মীদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। এতে করে একাধিক যৌনকর্মী শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরেছে। এ প্রেক্ষিতে আমাদের সুনির্দিস্ট দাবী সমূহ- যৌন কর্মীদের উপর নির্যাতনকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যৌন কর্মীদের – নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং দপ্তরের কার্যকরি ভূমিকা পালন করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনকে স্থানীয় ভাবে যৌন কমীদের সুরক্ষা দিতে হবে। ব্রথহেল উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে। পুলিশ দ্বরা যৌনকর্মীদের উপর আইনের অপপ্রোয়গ বন্ধ করতে হবে। যৌন কর্মীদের সম্মানদের সুস্থ, নির্বিঘ্ন, মূল স্রোতধারার পরিবেশে বেড়ে উঠার সুযোগ করে দিতে হবে। যৌন কর্মীদের কবরস্থান এর জন্য কোন পার্থক্য করা যাবে না। মূল স্রোত ধারার / সামাজিক ব্যবস্থায় কবরের ব্যবস্থা থাকতে হবে। যৌন কর্মীদের নির্বিঘ্ন জীবন যাপন এবং সার্বিক নিরাপত্তার প্রতি উপদেষ্টা মন্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি। যৌন কর্মী নয় বরং মানুষ হিসেবে তাদের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষায় নিপীড়ণ এবং শোষণ বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সকল ধরনের নারী নির্যাতন এবং যৌন হয়রানী বন্ধে আইনের সঠিক বাস্ত্মবায়ন করতে হবে