মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসাঃ পেরিয়েছে অনেক সময়, বদলেছে কত কিছুই। কিন্তু ফুরায়নি স্বজনহারাদের আর্তনাদ, আর অপেক্ষা। এখনো আশায় আছেন, জীবিতই আছে হারিয়ে যাওয়া স্বজনরা। তাইতো আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর হারিয়ে যাওয়াদের খোঁজে মাঠে নেমেছেন স্বজনরা। গুমের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামও দেন তারা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে গেলেও এখনও গুম হওয়া ব্যাক্তিদের খোঁজে দিশেহারা স্বজনরা। সরকারের পতনে অনেকে ফিরলেও আশার কোনও আলোই ফেরেনি এ পরিবারগুলোতে। প্রশ্ন, তারা কোথায়, জীবিত আছেন, নাকি একেবারেই হারিয়ে গেছেন?
না-জানা এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বুধবার (১৪ আগস্ট) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনের আয়োজন করে ‘মায়ের ডাক’। তাতে এর অন্যতম সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি গুমের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের গ্রেফতারে সরকারকে বেঁধে দেন ২৪ ঘণ্টার সময়।
জিয়াউল হাসান ও তারেক সিদ্দিকের মতো কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আয়নাঘরে বন্দিদের অনেকেই মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু এখনও অনেকের কোন খোঁজ নেই। তারা কোথায় আছেন, জীবিত আছেন নাকি একেবারেই হারিয়ে গেছেন, আমরা জানি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিচ্ছি। গুমঘর বিলুপ্ত হওয়াসহ জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন গুম হওয়াদের স্বজনরা। আর কাউকে যাতে ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে গুম হতে না হয় এমনটিই প্রত্যাশা তাদের। মেঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসার পরিচালনায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যাঁরা এখন ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা পুরো ব্যবস্থার খোলনলচে পাল্টে দেবেন বলে তিনি আশা করেন। আরও আশা করেন, সরকার মায়ের ডাকের আকুতি গুরুত্বের সঙ্গে নেবে। দোষী ব্যক্তিদের যত দ্রুত সম্ভব, দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এদিকে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে তাদের স্বজনদের সন্ধান এ সরকার দেবে বলে আশা করেন নারীপক্ষের শিরিন হক।
মানববন্ধনে আনিশা ইসলাম বলেন, তাঁর বাবা ইসমাইল হোসেন বাতেনকে ২০১৯ সালের ১৯ জুন মিরপুরে নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে গুম করা হয়। ছয় বছর ধরে তিনি বাবাকে খুঁজছেন। আগের সরকার কোনো আকুতি শোনেনি। দেশ দ্বিতীয়বার ‘স্বাধীন’ হয়েছে। এখন বাবার খোঁজ চান তিনি।
গুমের শিকার সাজেদুল ইসলাম সুমনের সন্ধান চেয়ে স্ত্রী নাসিমা আক্তার শেখ হাসিনার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাজা দাবি করেন। বলেন, ‘অনেক জায়গায় ঘুরেছি। কিন্তু কেউ খোঁজ দেয়নি।’
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তারেক রেজা বলেন, এই সরকার আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন যারা গ্রেফতার হয়ে আছেন তাদের মুক্তি দেয়া হবে। কিন্তু আজকে ছয়দিন হয়ে গেলেও তাদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে না কেন? তাদেরকে কি খুন করা হয়েছে ? যদি তাই হয় তাহলে খুনিরা কই? আমরা বলতে চাই যত দ্রুত সম্ভব আমাদের গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি দের মুক্তি দেয়া হোক।
শোরগোলের সম্পাদক ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক জাহিদ বলেন, ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে যত সিক্রেট হাউজ আছে সব সিক্রেট হাউজের তালা ভেঙে সবাইকে মুক্ত করতে হবে। যতদিন আমাদের সবাই ফিরে না আসবে আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আমরা জুলুমের অবসান চাই।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা বলেন, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার সরকার যাদের গুম করেছে তাদের বিচার করতে হবে। এর সাথে যেসব সেনা কর্মকর্তা জড়িত তাদেরও বিচার করতে হবে। আমাদের যেসব ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়েছে তাদের বিভার করতে হবে। আমরা আশা করব এই সরকার এর বিচার দ্রুতই করবেন।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, আফরোজা ইসলাম আখি, ছাত্রনেতা সালাহ উদ্দিন সিফাত, গুম হওয়া মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর ভাই ডা. মঈনুল হোসেন অপু, গুম হওয়া ড্রাইভার কাউসার হোসেনের মেয়ে লামিয়া আক্তার মীম, গুম হওয়া সাবেক কমিশনার চৌধুরী আলমের মেয়ে মুক্তা আলম, গুম হওয়া রাসেলের বোন লাবনীনসহ প্রমুখ।