মঞ্জুর: দেশের সব কারখানায় ঘোষিত নিম্নতম মজুরি কার্যকর করাসহ ৪টি দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। বুধবার (৯ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানায় সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন, নাজমা আক্তার, সভাপতি-সম্মিলিত গার্মেন্টস ফেডারেশন।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক ইসমেত জেরিন। তিনি বলেন, ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ এই পাঁচ বছরে মুদ্রাস্ফীতি যে হারে বেড়েছে, সেই প্রেক্ষিতে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আমরা দাবি করেছিলাম শ্রমিকদের ২৩ হাজার টাকা মজুরি দেওয়া হোক। কিন্তু আমাদের দাবি মানা হয়নি। সেই দাবিতে আমরা এখনো অনড়। তিনি আরও বলেন, এই দাবি প্রকাশ করতে গিয়ে ৪ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন, অসংখ্য শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছেন। তারা এখনো তাদের স্বাভাবিক কর্মজীবনে ফিরে আসতে পারেননি। প্রায় ৪০টির অধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় নামে-বেনামে ২০ হাজারের বেশি শ্রমিককে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২০ জন শ্রমিক জেল খেটেছেন। অসংখ্য শ্রমিককে চাকরিচ্যুতি করাসহ কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যারা এখনো কোথাও চাকরি নিতে পারছেন না। তিনি বলেন, সরকার ঘোষিত পোশাকশ্রমিকদের জন্য ২০১৩ সালের নভেম্বরে নিম্নতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে নিম্নতম মজুরি ৮ হাজার টাকা ও ২০২৩ সালের নভেম্বরে ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যদিও শ্রমিক এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলির পক্ষ থেকে ২০১৩ সালে ১৬ হাজার টাকা, ২০১৮ সালে ২০ হাজার টাকা ও ২০২৩ সালে ২৩ হাজার টাকা দারি করা হয়েছিল। তিনি বলেন, এই মজুরি চলমান জীবনযাত্রার খরচ মেটানোর জন্য অপ্রতুল। কারণ প্রতিনিয়ত যেভাবে দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে, সেই ক্ষেত্রে মজুরি বৃদ্ধি না হওয়ার কারণে শ্রমিকদের পরিবার পরিজন নিয়ে মৌলিক চাহিদা পূরণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সেই সাথে শ্রমিকদের পুষ্টিহীনতা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে, যা উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলছে এবং এই কম মজুরি দেওয়ার কারণে কর্মক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সাথে শ্রমিকদের পুষ্টিহীনতার পাশাপাশি তাদের শিশুরাও মারাত্মক পুষ্টিহীনতায় ভুগছে, যার ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। ঘোষিত বাজেটেও গার্মেন্টস শ্রমিকদের মূল্যায়ন হয়নি জানিয়ে ইসমেত জেরিন বলেন, ঘোষিত বাজেটেও দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি। তাই আমরা জোর দাবি করছি যে, যারা দেশের ৮৪ শতাংশ রপ্তানি পণ্য উৎপাদন করে, যাদের শ্রমে-ঘামে দেশ চলে তাদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু ও ঘোষিত নিম্নতম মজুরি পুনর্বিবেচনা করে সকল শ্রমিকদের জন্য একই হারে মজুরি দিতে হবে। সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের উত্থাপিত দাবিগুলো হলো: ১. পোশাক শিল্পের সকল শ্রমিকদের জন্য অবিলম্বে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ২. ঘোষিত নিম্নতম মজুরি সকল পর্যায়ের শ্রমিকদের সমহারে (৫৬.৭%) বৃদ্ধি করতে হবে। ৩. সকল কারখানায় ঘোষিত নিম্নতম মজুরি কার্যকর করতে হবে।৪. চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের বিজিএমইএ নিয়ন্ত্রিত বায়োমেট্রিক ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করে পুনরায় চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং বিজিএমইএ প্রণীত ও এককভাবে নিয়ন্ত্রিত বায়োমেট্রিক ডাটাবেজে সরকারি তদারকি নিশ্চিত করতে হবে।
আরও উপস্থিত ছিলেন, জনাব আবু ইউসুফ মোল্লা, সভাপতি-বাংলাদেশ লেবার কংগ্রেস, জনাবা মমতাজ বেগম, কার্যকরী সভাপতি- সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, জনাব খাদিজা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক-সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারশন এর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ মোহাম্মদ সৈকত চৌধুরী, আলী সম্প্রীতি, মামুনুর রশিদ, সানজিদা পারভীন সহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকবৃন্দ।