নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতায় সিগারেট কোম্পানিগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিধিবিধান বাস্তবায়নে সচেতনভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তারা। কোম্পানিগুলোর মূল উদ্দেশ্য তরুণদেরকে ধূমপানে আকৃষ্ট করে দীর্ঘমেয়াদী ভোক্তা তৈরী করা। ৪ জন বিশিষ্ট গণমাধ্যমকর্মীর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সিগারেট কোম্পানিগুলোর বেপোরোয়া আইন লংঘন এবং নীতিতে হস্তক্ষেপের ফলে তরুণদের তামাক পণ্যে আসক্ত হয়ে পড়ার তথ্য উঠে এসেছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে তরুণদের রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে দ্রুত সংশোধন করে শক্তিশালী করা জরুরী । পাশাপাশি এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ অনুসারে তামাক কোম্পানির প্রভাব থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতিসমূহ সুরক্ষায় “কোড অব কন্ডাক্ট” বা তামাক কোম্পানির সাথে অসহযোগিতার নীতি গ্রহণের দাবী জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে প্রলুব্ধকরণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে অবাধে সিগারেট বিক্রয়, গণমাধ্যম এবং ওটিটি প্লাটফর্মে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপের চিত্র প্রসঙ্গে প্রণয়নকৃত অনুসন্ধানী প্রতিবেদসমুহ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। আজ ২ জুলাই ২০২৪ (মঙ্গলবার), সকাল ১১:০০ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি, নাটাব, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর সহায়তায় “তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ: অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ ” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের প্রতিবেদনগুলো উপস্থাপন করেন।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের দপ্তর সম্পাদক সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় উক্ত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী। সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ, এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা, তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ নাসির উদ্দীন শেখ এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা সামিউল হাসান সজীব।
দৈনিক ভোরের কাগজ এর সিনিয়র রিপোর্টার সেবিকা দেবনাথ তার উপস্থাপনায় বলেন নিজেদের ব্যবসার প্রসারে তামাক কোম্পানিগুলো সু-কৌশলে গণমাধ্যমকেও ব্যবহার করছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমকে অর্ন্তভূক্ত করে ক্যাম্পেইন, গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন, গবেষণা ও রিপোর্ট প্রচারে আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি তামাক বিরোধী প্রতিবেদন/সংবাদ প্রচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তিনি জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে গণমাধ্যমকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি বলে সুপারিশ জানান।
ঢাকা পোস্ট এর গবেষণা এবং সম্পাদনা বিভাগের প্রধান বিনয় দত্ত তার উপস্থাপনায় বলেন, স্থানীয় সরকার গাইড লাইন অনুসারে নিষিদ্ধ সত্ত্বেও বিদ্যালয়ের ১০০ মিটারের মধ্যে অবাধে বিক্রি হচ্ছে সিগারেট এবং সেখানে মূল ভোক্তা শিক্ষার্থীরা। তামাক নিয়ন্ত্রণে সহায়ক বিধিবিধান থাকলেও কার্যকর করার জন্য যথাযথ উদ্যোগ না থাকায় বিদ্যালয়ের কর্মকর্তারাও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ওয়াকিবহাল নন। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে তামাক কোম্পানীর সহজ বিচরণ ১৮ বছরের নিচে শিক্ষার্থীদের মনস্তত্ত্বে জায়গা করে নিচ্ছে। তিনি সকল ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের আশেপাশে ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত বিক্রি নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বিষয়টি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে অন্তর্ভূক্ত করার আহ্বান জানান।
দৈনিক সমকাল এর সাব এডিটর মেহেদী হাসান উপস্থাপনায় ওটিটি মাধ্যমে প্রচারিত ওয়েবসিরিজগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান দৃশ্য দেখানোর পাশাপাশি তরুণদেরকে ধূমপানে উৎসাহিত করার মতো ডায়ালগ থাকার বিষয়টি উঠে আসে। তিনি ওটিটি’কে সেন্সরিংয়ের আওতায় আনাসহ ধূমপান দৃশ্যের ক্ষেত্রে মনিটরিং এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে ওটিটি প্লাটফর্মকেও সংযুক্ত করার আহবান জানান।
দৈনিক কালবেলার স্টাফ রিপোর্টার দেলাওয়ার হোসাইন দোলন তার উপস্থাপনায় বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো মোটা বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে টার্গেট করছে। মূলত এসব প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য থাকে তরুণদের মাঝে তামাক পণ্যের প্রচার। সেখানে সহযোগী হয়ে কোম্পানির স্বার্থে কাজ করছে নামিদামি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ বা অনুষদ। এছাড়া তরুণদেরকে আকৃষ্ট করতে তামাক কোম্পানিগুলো বিখ্যাত শিল্পীদেরকে এনে কনসার্ট আয়োজন করছে। অনুষ্ঠানস্থল তামাক পন্যের ব্রান্ড কালার এবং লগোসমৃদ্ধ বিজ্ঞাপন দিয়ে সাজানো হচ্ছে। তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন শক্তিশালী করা এবং নিয়মিত তামাক কোম্পানির কার্যক্রম মনিটরিং করা জরুরি বলে দাবী জানান।