ইকবাল হোসেনঃ সোমবার (২৯ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে , বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্ শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র এর উদ্যেগে গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আসন্ন বাজেটে বরাদ্দ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এই কথা বলেন
বক্তারা বলেন,বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকদের অধিকার আদায়, শিল্পকে বিকশিত করা এবং জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুদীর্ঘ কর্মপ্রয়াস ও লড়াই সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র এবং অপরাপর সংগঠন দীর্ঘদিন যাবৎ রেশনিং ব্যবস্থা চালু করে কারখানা ভিত্তিক সন্তা ও ভর্তুকি মূলে চাল, ডাল, তেল, আটা ও শিশু খাদ্য প্রদানের দাবি জানিয়ে আসছে। শতকরা ৮৬ ভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী দেশের প্রধান বৃহত্তর শিল্প হিসাবে অগ্রসরমান গার্মেন্ট শিল্প বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করে আসছে। আমাদের গার্মেন্ট শিল্পের মালিকরা সামান্য পুঁজি নিয়ে সাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করে সন্তা শ্রমের ফলে অনেক বেশি মুনাফা করে বৃহৎ শিল্পের মালিক হয়েছেন। কিন্তু শিল্প বিকাশের তুলনায় শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নতি হয়নি। এখন আমাদের সামনে প্রশ্ন- শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত করতে সরকার ও মালিকরা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন কিনা? নিশ্চয়ই শ্রমিক শিল্প ও জাতীয় স্বার্থে তা করতে হবে। সুষম শ্রমশক্তি ব্যতিত টেকসই শিল্প টিকে থাকা সম্ভব কি? তাই ন্যায্য মজুরি, স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। গত বছর ডিসেম্বর মাস থেকে নিম্নতম ১২,৫০০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। নিম্নস্তর, মধ্যন্তর, উচুস্তর সবটা গড় করলেও মজুরি ১৪,০০০ টাকার নিচে। একদিকে আমাদের নিম্নআয়ের মানুষদের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির যাঁতাকলে পিষ্ট হতে হচ্ছে, অপরদিকে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির মূল্য বৃদ্ধি, বাড়িভাড়া, গাড়িভাড়া বৃদ্ধি, শিক্ষা-চিকিৎসার ব্যয় বৃদ্ধির ফলে বর্তমান প্রাপ্ত মজুরিতে বেঁচে থাকার পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য শ্রমিক-কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা আবশ্যক। যার প্রথম ধাপ হিসেবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কারখানাভিত্তিক রেশনিং প্রথা চালু অতীব জরুরি কর্তব্য।
তাই আসন্ন বাজেটে রেশনের জন্য আলাদা বরাদ্দ সকল শ্রমিক-কর্মচারী ও দেশপ্রেমিক জনগণের প্রাণের দাবি। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে, ব্যক্তি মালিকানাধীন গার্মেন্ট শিল্পের শ্রমিকদের এ দায়িত্ব কে পালন করবে? সরকার, না-কি মালিকরা? আবার শুধু কি আমাদের দেশীয় কারখানার মালিক, না-কি বিদেশি ক্রেতা মালিকরাও? আমরা মনে করি সরকার এবং দেশি-বিদেশি সকল মালিককেই শ্রমিকদের চাহিদা পূরণের দায়িত্ব নিতে হবে। বর্তমান সরকার শ্রমিকদের রেশন প্রদান করা হবে মর্মে নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা করেছিল। তাছাড়াও বিভিন্ন সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীগণ রেশন দেওয়া হবে মর্মে ওয়াদা করেছেন। কিন্তু তারা তাদের ওয়াদা রক্ষা করে নাই। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি শ্রমিকদের জন্য রেশনের ব্যবস্থাসহ সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা আজ জাতীয় কর্তব্য। কেননা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের যে ঘোষণা, তার মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য ও পুষ্টিমান উন্নয়ন, শোভন কাজ এবং বৈষম্য বিলোপ অন্যতম। জাতিসংঘের ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার সাথে সাথে আমাদের সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এমনকি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা শুনছি। অথচ শ্রমজীবী মেহনতি মানুষদেরকে চরম দুঃখ দুর্দশার মধ্যে দিনাতিপাত করতে হচ্চে। যা অত্যন্ত পরতাপের বিষয়। একদিকে ধনী আরও ধনী হচ্ছে, অন্যদিকে গরিব আরও গরিব হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে দিন দিন বৈষম্য বাড়ছে। এমনকি নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতি ও মুক্তবাজার অর্থনীতির ফলে দেশের সমগ্র জনগণ গুটিকয়েক গ্রুপ অব কোম্পানির নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এই জিম্মিদশা থেকে শ্রমিক ও শ্রমশক্তি রক্ষা করতে রেশনিং প্রথা চালু অতীব জরুরি কর্তব্য। নতুবা দক্ষ শ্রমিক ও শ্রমের অভাব বৃদ্ধি পাবে। তাতে আন্তর্জাতিক বাজার প্রতিযোগিতায় এ শিল্পকে অগ্রসর করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই আমরা মনে করি শ্রমিকের প্রয়োজনতো বটেই একইসাথে জাতীয় স্বার্থে রেশনসহ সামাজিক সুরক্ষার জন্য আসন্ন বাজেটে বরাদ্দ এবং অতিসত্তর কারখানাভিত্তিক রেশনিং প্রথা চালু করে চাল, ডাল, আটা, তেল ও শিশুখাদ্য সরবরা করতে হবে।