সাহাবুল হক মেহেরপুরঃ মেহেরপুরে বৃদ্ধি পেয়েছে ক্ষতিকর বিষ পাতা তামাক চাষ। অন্যান্য ফসল রোগবালাইয়ে আক্রান্তের কারণে ও ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা তামাক চাষে ঝুঁকেছেন। অন্যান্য ফসল অপেক্ষা তামাক চাষ নাকি বেশি লাভজনক। তাছাড়া তামাক কোম্পানিগুলো আর্থিক সহযোগিতা ছাড়াও নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে বলেও চাষিরা জানান। মেহেরপুরের সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এখন শুধু তামাক আর তামাক চোখে মেলে।
তামাক উৎপাদনকালীন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, ব্যবহারকালীন এবং বর্জ্য পর্যন্ত সকল পর্যায়ে যেমন জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে, একই রকম ভাবে পরিবেশেরও ক্ষতি করছে। তামাকই একমাত্র ফসল যার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতি ছাড়া কোনই লাভ হয় না। তামাক যারা সরাসরি গ্রহণ করছে তাদের যেমন ক্ষতি, যারা গ্রহণ করছে না তাদেরও ক্ষতি। তাই তামাক চাষ বন্ধ করা এবং উৎপাদিত তামাক জাত দ্রব্যের ব্যবহার কমিয়ে আনার কোন বিকল্প নেই। তামাক মানুষের হৃৎপিণ্ড, লিভার, ফুসফুসকে আক্রান্ত, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও মরণব্যাধি ক্যান্সারের মত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিলেও দিন দিন বিষ পাতা তামাকের চাষ বেড়েই চলেছে।
মেহেরপুরে উৎপাদিত সবজি স্থানীয় পর্যায়ে চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়ে থাকলেও বর্তমানে সর্বনাশী তামাক চাষের ফলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সবজিও বেশি মূল্যে কিনতে হচ্ছে এখানকার সর্বস্তরের জনসাধারণকে।
অপরদিকে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে সার, বীজ ও সেচের জন্য নামমাত্র নগদ অর্থ ঋণ দেওয়ার প্রলোভনে কৃষকদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি তামাক কোম্পানিগুলো ভালো দামে তামাক কেনার নিশ্চয়তা দেওয়ায় মারাত্মক ক্ষতিকর জেনেও অধিক লাভের আশায় বিষবৃক্ষ তামাক চাষে ঝুকেছেন মেহেরপুরে চাষীরা। যদিও তামাক চাষে কোম্পানির দেওয়া সার ও কীটনাশক যথেষ্ট নয়, অনেক চাষি চাষের মাঝ থেকে শেষ অবধি দোকান থেকেই এসব উপকরণ ক্রয় করে থাকেন।
প্রকৃতপক্ষে কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ ও সারসহ যে উপকরণ দেওয়া হয় তা তামাক ক্রয়ের সময় লভ্যাংশসহ কৃষকদের কাছ থেকে আদায় করে নেয় তামাক কোম্পানিগুলো। তারপরেও ধান, গম, সরিষা, মশুরি, আলু, ভুট্টা, কলা, ফুলকপি, পাতাকপিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষের পরিবর্তে তামাক চাষে ঝুঁকেছেন কৃষকরা। জেলার মাঠ জুড়ে শুধু চোখে মিলবে তামাক আর তামাক ক্ষেত। ইতিমধ্যেই তামাক পোড়ানোর উৎসব শুরু হয়েছে জেলার প্রায় প্রতিটা গ্রামেই। মাঠ থেকে তামাক পাতা সংগ্রহ করে বাড়িতে এনে চিকন সুতালি দড়ি দিয়ে বেঁধে ঢোকানো হচ্ছে তামাকের ঘরে। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পাটখড়ি, ধঞ্চে ও কাঠসহ বিভিন্ন ধরনের উপকরণ। উজাড় করা হচ্ছে কাঠ সংগ্রহে বনজঙ্গলের গাছ-গাছালি।
এভাবে তামাক চাষ আর বনজঙ্গল উজাড় বাড়তে থাকলে স্থানীয় সবজি ও কৃষি পণ্য উৎপাদন একসময় শুন্যের কৌটায় নেমে আসতে পারে। তখন এলাকার বাইরে থেকে আমদানিকৃত কাঁচামালের উপর নির্ভরশীল হতে হবে। তাছাড়া তামাকের জমিতে উচ্চমাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে কৃষি জমি চাষ অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ছাড়াও এবং বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে তামাকমুক্ত দিবস পালন করা হলে তখন তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করার কথা বলা হয়ে থাকলেও চাষ অব্যাহত রেখে পরিবেশের ক্ষতি করা হচ্ছে। এটা এতোটাই ক্ষতিকর যে, তামাক যখন চুল্লিতে পোড়ায় তখন ১০০ মিটার দূরের এলাকার বাতাসেও গন্ধ ছড়ায়।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, তামাক চাষের চেয়ে অন্যান্য ফসল লাভজনক হলেও ছোট্ট জেলা মেহেরপুরে বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো ও জাপান টোব্যাকো সাধারণ কৃষকদের মাঝে আগাম সার, বীজ, কীটনাশক বিতরণসহ নানা ধরনের উপকরণ ও প্রলোভন দেখিয়ে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। চাষিরাও তাদের ফাঁদে পড়ে চামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছে। তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করতে কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের প্রচার-প্রচারণা চালিয়েও তাদের থামানো তো সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকার কৃষকদের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখেছেন।